ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে বাঙ্কার খনন ॥ নতুন আতঙ্ক

সীমান্তে ফের মিয়ানমারের সেনাটহল

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৫ মার্চ ২০১৮

সীমান্তে ফের মিয়ানমারের সেনাটহল

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার রবিবার সকাল থেকে ফের সেনা সমাবেশ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের পর গত শনিবার সকালে ইতোপূর্বে মোতায়েনকৃত সেনা সমাবেশ গুটিয়ে ফেলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিস্ময়করভাবে নতুন এ সেনা সমাবেশ এবং সঙ্গে বাংকার খনন কাজ শুরু করার ঘটনা সীমান্ত এলাকার উভয় পারের অধিবাসীদের মাঝে আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি সেনা সমাবেশ নয়। তবে সেনা বৃদ্ধি, যা নিজেদের এলাকার অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনে নিয়মিত সেনা টহলের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে সে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনে সীমান্তে সেনা ও বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ) টহল বাড়ানোর বিষয়টি আগেই বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) কে অবহিত করা আছে। অপরদিকে, বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়ন অধিনাযক লে. কর্নেল মঞ্জুর হাসান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের পর কাঁটাতারের বেড়ার কাছ থেকে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা সরে যাওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়। সীমান্তের ওপারে একই স্থানে রবিবার সকাল থেকে আবারও সেনা অবস্থান ও টহলের যে চিত্র দেখা গেছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। বিজিবিও নজরদারি বৃদ্ধি করে রেখেছে। আমাদের প্রস্তুতি ও জোরদার রয়েছে। বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানিয়েছেন, মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনে সেনা-বিজিপির টহল বাড়িয়েছে বলে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিজিবির সতর্ক টহল চলছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ চলছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, তুমব্রু সীমান্তে এপার ও ওপারের দূরত্ব সর্বনি¤œ দেড় শ গজ। ফলে এসব এলাকায় এপার ও ওপারে কী ঘটছে তা উভয় পারের অধিবাসীরা প্রত্যক্ষ করতে পারেন। এমনকি দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরাও দুপক্ষের কার্যক্রম দেখতে পায়। এদিকে বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানানো হচ্ছে, অতীতেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপি সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে বেআইনী তৎপরতা চালিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে যখনই এর কড়া প্রতিবাদ করা হয়েছে তখনই তারা সরে গেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ রয়েছে সরব অবস্থানে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে জাতিসংঘসহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশ বাদে গোটা বিশ্ব। এ অবস্থায় মিয়ানমার ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে। সমালোচনা ও নিন্দার মুখে রয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ফলে ইতোমধ্যে মিয়ানমার বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ কমিটির বৈঠকও হয়েছে। প্রথম দফার ৮০৩২ জনের রোহিঙ্গার একটি তালিকাও হস্তান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ তালিকা যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশকে অবহিত করার আশ্বাস দিয়েছে। এরপরই প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা রয়েছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার ইতিবাচক ভূমিকায় নেই। গোটা রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা বসতিগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার পর চালানো হয়েছে গণহত্যা ও পাশবিক অত্যাচার। এ কারণেই মূলত লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এখন যখন প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ শুরু নিয়ে আলোচনা করছে তখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকায় আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে সৈন্য সমাবেশ ও বাংকার খনন কাজ চালাচ্ছে। আরও আগে তারা সীমান্ত এলাকাজুড়ে পুঁতে রেখেছে স্থলমাইন। ইতোমধ্যে কয়েকটি মাইন বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। নিজেদের সেনা সদস্যরাও স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
×