ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ

ফল উৎপাদনে জোর দিচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৫ মার্চ ২০১৮

ফল উৎপাদনে জোর দিচ্ছে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবার ফল উৎপাদনে জোর দিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে প্রায় তিন শ’ কোটি টাকার প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের আটটি বিভাগের ৪৮ জেলায় (৩৮৮টি উপজেলা) ৬৬টি হর্টিকালচার সেন্টার গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, এবার বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রচলিত, অপ্রচলিত এবং অন্যান্য দেশী-বিদেশী সম্ভাবনায় সব ধরনের ফলের চাষাবাদ বাড়িয়ে সারাবছর সমানভাবে ফলের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে ফল উৎপাদনের যে সুযোগ রয়েছে, তা অব্যবহৃত থাকায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বছরব্যাপী দেশে বিভিন্ন জাতের ফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকার ফলের মানসম্মত চারা বা কলম উৎপাদন, নতুন নতুন ফলের জাত সম্প্রসারণ এবং আধুনিক উদ্যান প্রযুক্তি বিষয়ে চাষিদের দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় দেশী ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে চাষযোগ্য বিভিন্ন বিদেশী ফলের সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফলের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন) প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। যা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। দেশের আটটি বিভাগের ৪৮ জেলার ৩৮৮ উপজেলায় (৬৬টি হর্টিকালচার সেন্টার) স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, নার্সারিম্যান, কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রমোটর, মালি ও বাগানে স্প্রে ম্যানদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বাণিজ্যিক মিশ্র ফল বাগান, বাণিজ্যিক বাগান, বসতবাড়িতে ফল বাগান, ড্রাগন বাগান, নতুন বিদেশী ফলের বাগান, বসতবাড়িতে নারিকেল বাগান ও কিচেন গার্ডেন প্রদর্শন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় এক্সোটিক হাইব্রিড বা খাটো জাতের নারিকেল চারা কেনা হবে। ছয়টি নতুন হর্টিকালচার সেন্টারের অফিস ভবন কাম ট্রেনিং সেন্টার কাম ডরমিটরি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়াতে দুটি জাতীয় ও ৩৪টি আঞ্চলিক কর্মশালার আয়োজন করা হবে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। তবে বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় মাত্র ৪০ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা জালাল বিন জাফর বলেন, দেশের তিনটি পাহাড়ী জেলাসহ (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) অন্যান্য জেলার অসমতল জমি, উপকূলীয় ও অন্যান্য অঞ্চলের পরিত্যক্ত জমি ও বসতবাড়ির উঠানে উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সমতল ভূমিতে মাঠ ফসল চাষের সুযোগ সৃষ্টি করতেই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এছাড়াও দেশীয় এবং রফতানিযোগ্য ফলের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত ফল সংগ্রহ করে আধুনিকায়নের সঙ্গে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। বিদ্যমান হর্টিকালচার সেন্টারগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে মানসম্পন্ন ও নতুন জাতের চারা বা কলম উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। বর্তমানে ছয়টি নতুন হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনসহ প্রকল্প এলাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ একবছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
×