ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবচেয়ে কম নেপালে, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে ভুটান

ভারত ও বাংলাদেশে খেলাপী ঋণের হার বেশি

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৫ মার্চ ২০১৮

ভারত ও বাংলাদেশে খেলাপী ঋণের হার বেশি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নেপাল, ভুটান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে খেলাপী ঋণের হার সবচেয়ে কম নেপালে। সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। নেপালের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের পরিমাণ গড়ে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। দেশটির সানিমা নামে একটি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ মাত্র ০.০৩ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের গড় হার ২৫ শতাংশ। তবে বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপী ঋণ ৫০ শতাংশের উপরে রয়েছে। ভুটানের খেলাপী ঋণও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের খেলাপী ঋণ একটু বেশি হলেও তা এখনও দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছায়নি। রবিবার থেকে রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে শুরু হওয়া দু’দিনব্যাপী প্রথম আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনে-২০১৮ (আরবিসি-২০১৮) এ তথ্য জানানো হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির। সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। উদ্বোধনী সেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীব। গবর্নর বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকদের সেবা দেয়া, দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু এর পরেও ব্যাংকিং খাতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এসব নতুন নতুন উদ্যোগগুলো আগামী দিনের ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভাল কৌশল হিসেবে পরিগণিত হবে। সম্মেলনে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনগণের আমানতের অর্থ এভাবে কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হওয়ায় পুরো ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত আগামী দিনে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তাই এখনই সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নেপাল, ভুটান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে খেলাপী ঋণের হার সবচেয়ে কম নেপালে এবং সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। নেপালের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের পরিমাণ গড়ে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। দেশটির সানিমা নামে একটি ব্যাংকের খেলাপী ঋণ মাত্র ০.০৩ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের গড় হার ২৫ শতাংশ। তবে বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপী ঋণ ৫০ শতাংশের উপরে রয়েছে। ভুটানের খেলাপী ঋণও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের খেলাপী ঋণ একটু বেশি হলেও তা এখনও দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছায়নি। সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনের সঞ্চালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, নেপালের খেলাপী ঋণ কম হওয়ার পেছনে দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভাল ভূমিকা রাখছে। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক শক্তিশালী। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা খেলাপী ঋণ। উচ্চ খেলাপী ঋণ সবাইকে ভোগাচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতে ইচ্ছাকৃত খেলাপীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায় না। বাংলাদেশের বেসরকারী ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ১০ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে। তবে খেলাপী ঋণের উচ্চ হার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কারণে। ঋণ পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আবার খেলাপী হয়ে পড়েছে। এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাত রক্ষা করতে হলে সুশাসন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (বাংলাদেশ ব্যাংক) সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েতুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে ভুটানের অবস্থা ভাল। তাদের ঋণ বিতরণে ভারসাম্য রয়েছে। এছাড়া নেপালের ব্যাংকিং খাতও অনুসরণ করার মতো। কারণ তাদের খেলাপী ঋণ খুবই কম। অনেকটা শূন্যের কাছাকাছি। আর বাংলাদেশের ৬টি সরকারী ব্যাংকের দিকে তাকালে ব্যাংকিং খাত কেমন চলছে তা বোঝা যায়। সম্মেলনে দেশের ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন। তাদের মতে, প্রতিবেশী দেশে কম সুদে ঋণ বিতরণ করা হলেও আমাদের দেশে সুদের হার অনেক বেশি। খেলাপী ঋণের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য এই আঞ্চলিক ব্যাংকিং সম্মেলনের মূল আয়োজক বিআইবিএম। এ সম্মেলনে সহযোগী সদস্য হচ্ছে- ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (এনআইবিএম), ভুটানের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ট্রেনিং ইনস্টিটিটিউট (এফআইটিআই) এবং নেপালের ন্যাশনাল ব্যাংকিং ইনস্টিটিউট (এনবিআই)। সম্মেলনে তিনটি বিজনেস সেশনে ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকার, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা এসব সেশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। দুদিনব্যাপী এই সম্মেলনে ছয় শতাধিক অশংগ্রহণকারী উপস্থিত থাকবেন।
×