ইউরোপের যেসব নেতৃবৃন্দ মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পদক্ষেপ গ্রহণের হুঁশিয়ারি এক কথায় নজিরবিহীন। ট্রাম্প শনিবার স্পষ্ট ভাষায় ইউরোপে তৈরি গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের পাল্টা হুমকি দিয়েছে। বিবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্ট।
ফ্লোরিডার মার এ লাগো অবকাশ কেন্দ্র থেকে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে লেখা টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা অনায়াসে আমাদের দেশে তাদের তৈরি গাড়ি পাঠাচ্ছে, কিন্তু আমরা নিজেদের তৈরি গাড়ি সেসব দেশে পাঠাতে পারি না। অনেকদিন ধরেই আমরা এমন অন্যায্য আচরণের শিকার হয়ে আসছি। তাই তারা প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসালে আমরা তাদের গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ করব।’ এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসারে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর প্রাথমিকভাবে এই শুল্ক আরোপ করা হবে। কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতৃবৃন্দের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তিনি ওই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ইস্পাতের তৈরি বিদেশী জিনিস আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ এবং এ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সামগ্রীর ওপর তিনি ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই কানাড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মিত্রদেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ এবং পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়। ট্রাম্প টুইট বার্তায় বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যেই আমাদের বিরুদ্ধে আরোপ করে রাখা বিশাল পরিমাণ শুল্ক ও অনান্য বাণিজ্য বাধা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, আমরা তাদের ওপর কর আরোপ করব।’ ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, ইইউ দেশগুলো যেভাবে শুল্ক ও অন্যান্য বাধা আরোপ করে রেখেছে তার ফলে সেসব দেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি গাড়ি প্রবেশ করানো কার্যত অসম্ভব।
ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্যে প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হয়েছে।’ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাইরের গাড়ি আমদানির ওপর ২.৫ শতাংশ হারে ও ইইউ মার্কিন গাড়ি আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে থাকে। ট্রাম্প ইউরোপের মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিলেও তার দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই এই বিষয়ে চীনের সমালোচনা করে এসেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, চীন বিশ্ব বাজারে সস্তায় ইস্পাতের ব্যাপক পরিমাণে সরবরাহ করলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ২ শতাংশ ইস্পাত আমদানি করে থেকে। তিনি একে বিভ্রান্তিকর বললেও চীনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেননি। তিনি ইস্পাতের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও সেটি চীনকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে না। এর সিংহভাগ বোঝা বইতে হবে কানাডাকে। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম রফতানিকারী। গত বছর ৭২০ কোটি ডলারের এ্যালুমিনিয়াম ও ৪৩০ কোটি ডলারের ইস্পাত সরবরাহ করেছে কানাডা। কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে। কানাডা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশাল অঙ্কের পণ্য আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, অটোমোবাইল, কৃষি ও যন্ত্রপাতি। বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ত্বরিত প্রতিক্রিয়া জানায় কানাডা। কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য’। দেশটি আরও বলেছে, বাস্তবে ওই শুল্ক আরোপ করা হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে।