ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে লড়বে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ -জাফর ওয়াজেদ

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৫ মার্চ ২০১৮

নির্বাচনে লড়বে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ -জাফর ওয়াজেদ

আত্মম্ভরিতা মানুষকে ঔদ্ধত্য আচরণের দিকে ধাবিত করে। আত্মতুষ্টি বা আত্মসন্তুষ্টি এক পর্যায়ে অবসান এনে দেয়। অবসিত মানবের পক্ষে তার অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে সাময়িক প্রশান্তি লাভ করা গেলেও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করে না। শুধু খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের সংস্থান হয়ে গেলেই মানুষের সব পাওয়া হয় না। মানুষ যন্ত্র নয়। তার মন আছে। মনের খোরাক, চিন্তার ঔদার্যকে গলা টিপে রেখে খুব বেশিদিন মানুষকে যে শাসন করা যায় না, তা বোঝা উচিত শাসককুলের। কিন্তু তারা যে তা বুঝতে চায় না, বুঝার চেষ্টাও নেই, সে কথাটা পরিষ্কার হয়ে আসে তাদের আচরণেই। তারা তখন যুক্তি-তর্কের ধার ধারে না। তারা ভুলে যায়, এদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতিতে তর্কের একটা যোগ্য স্থান ছিল। যা আর চর্চিত হয় না। কষ্টি পাথরে যাচাই করার প্রবণতাই হারিয়ে ফেলেছে, তর্ককে দূরে সরিয়ে রাখার কারণে। এক সান্দহিক বিশ্বাসে ভর করে গড্ডলিকা প্রবাহে নিয়ত প্রবহমান যেন তারা। তর্কের আবহ ফিরুক, যুক্তির চর্চা হোক- এমনটা আর একালের রাজনীতিতে গুরুত্ব পায় না। পরিবর্তনে রয়ে পেতে চায় অপরিবর্তনীয়। গুণগত কোন পরিবর্তন অবশ্য দৃশ্যমান নয়। ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করেছে গমন’ সে পথ ধরে যেতে আগ্রহী নয় বিন্দুমাত্রও। ফলে নানা হোঁচট খেয়ে খেয়ে পতনে-উত্থানে চিরজাগরুক থেকে যেতে চাইলেও বিধিকারত্বের ঘেরাটোপে আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে সবকিছু। ফলে জনমতকে নিজের দিকে টেনে আনা আর সহজসাধ্য হচ্ছে না। চারদিকে নাগিনীরা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলছে। সে বিশ্বাসে রয়েছে বিষ। সে বিষে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র থাকে। বিষাক্ত আবহাওয়া, বিষাক্ত পরিবেশের বিস্তারের এই কালে শান্তি, স্বস্তির দিগন্ত ধরে রাখাও কঠিন। আর কঠিন বলেই হয়তো সে পথ মাড়াতে চায় না। তাই বিষের বাঁশি বেজে ওঠে। সে সুরে থাকে ধ্বংসের বারতা। সৃষ্টির যতো জারিকুরি, যত বিবর্তনই হোক না কেন, সবই লোপ পেয়ে যাবে ক্রমশ নিজেদের কলহ আর বিবাদের ক্রমবর্ধমান তোপে। যতই গলা হাঁকিয়ে আত্মম্ভরী কণ্ঠে নিনাদিত হোক না কেন নিজস্ব শক্তিমত্তা, ততই তা ফসকে যাবার লক্ষণ ক্রমশ দৃশ্যমান। অপসৃয়মান হবার সম্ভাবনা দেখা যায় না কোনোভাবেই। লড়াইয়ের ময়দানে আত্মতৃপ্তি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পরাজয় এসে মাথা বাড়াতে পারে, বানাতে পারে দুর্বল। আর এই দুর্বলতা চিত্তজুড়ে শুধু নয়, কর্মজুড়েও প্রসারিত হয়ে যায়। সত্যও বাস্তবকে অস্বীকার করে কেবলই বায়বীয় চিন্তা-ভাবনাকে সামনে এনে তা সর্বত্র ছড়ানো হলো, ফল দাঁড়াবে বায়বীয়ই। বাস্তবতার ডিঙ্গি নৌকা মাঝ নদীতে নয়, কিনারেই ডুবে যেতে পারে। ডুবন্ত নৌকা থেকে লাফিয়ে তীরে উঠাও হয়ে ওঠে না সবার জন্য সহজতর। তাই স্বগত সলিলে সমাধি ঘটে যেতে পারে। রাজনীতির মারপ্যাঁচ বা রণকৌশল যদি বাস্তবতা বিবর্জিত হয়, তবে পরাজয় অনিবার্য। কিন্তু কেউ তো চায় না পরাজিত হতে। জোর করে আর যা-ই হোক ঠেকিয়ে রাখা যায় না পরাজয় ও তার গ্লানি। সাংগঠনিক শক্তি যদি থাকে দৃঢ়, তবে সংগঠনই পথ দেখাতে পারে, কোন দিকে বিজয়ের রথ বিজয় পতাকা তখনই তুলে দেয়া যায় হাতে হাতে। কিন্তু সে পতাকা বহিবার শক্তি যদি হয় ক্ষীয়মান, তবে দৃঢ়তায় সংঘবদ্ধ শক্তিও বিপর্যয়ের সামনে হয়ে পড়ে অসহায়। অসহায়ত্বের অনেক নিদর্শনই রয়ে গেছে অতীতে। জনমতের শীর্ষস্থানে বসবাস করেও জনমতের প্রতিফলন নাও মিলতে পারে। যদি তা-ই হয়, তবে আগামী দিনে স্বদেশের পরিণতি যে কোনদিকে যেতে পারে, তা আগাম বলে দেয়া যায়। সামনে নির্বাচন আসছে। আর নয় মাস পরই নির্বাচন হবে এদেশে। ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে সেই জনমত, যার ছায়া-প্রচ্ছায়ায় বসবাস করে উত্তীর্ণ হবার সম্ভাবনাটুকু সবার জন্যই অবধারিত বলে আপাত মনে হবে। কিন্তু জয়লাভ তার পক্ষেই সম্ভব, যার দিকে তাকিয়ে আছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। এই জনগণের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরা না গেলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোতে পরিণত হতে বাধ্য। জনগণ সেই মানুষকেই চাইবে, যার কাছে রয়েছে আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের চাবিকাঠি। দৃশ্যমান উন্নয়নের চেয়েও ভারী তাদের কাছে সেই মানুষের কীর্তিকলাপ ও কার্যক্রম। যার ভিত্তিতে জনগণ সিদ্ধান্ত নেয়, নিতে পারে। জনমত অর্জন সহজ নয় সবার জন্য। রাজনৈতিক দল এবং দলের প্রতি মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে তখনই, যখন স্পষ্ট হয়, সেই দল মানব মুক্তির পথকে করবে ত্বরান্বিত। অতীতের ক্রিয়াকলাপ মাথায় রেখেই জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাই ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙালী ভোটাররা শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ ও নৌকা মার্কার প্রতি নির্দ্বিধায় ঝুঁকে পড়েছিল। মুক্তির সোপান অর্জনের লক্ষ্যে জনগণ নিঃসংশয়চিত্তে ভোট দিয়েছিল। স্বাধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনের তীব্রতায় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল শেখ মুজিবের বিজয় রথকে ঠেলে নিতে। জনগণ তাদের চাওয়া-পাওয়াকে খুঁজে পেয়েছিল আওয়ামী লীগের মধ্যে কিন্তু যে আওয়ামী লীগ আর আজকের আওয়ামী লীগ এক নয়। চরিত্রগত, গুণগত, আদর্শগত, চেতনাগত পার্থক্য বিশাল। নানা বাক, নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দলটি আজ যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক আদর্শ আর দর্শন দৃশ্যমান নয়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পুরাতন নতুন কোন আদর্শকেই আর জনগণ দূরে থাক, দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সম্প্রসারিত করতে পারছে না। দলীয় লোকজনের মনোভাব আর মানবতার মধ্যে গণমানুষের মুক্তির জন্য গৃহীত মতাদর্শগুলো একটিও নয়। ক্ষমতার সুবাতাস তাই বহে না; বরং বিষাবাষ্প এমনভাবেই সংক্রমিত হয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী চিন্তা-চেতনাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মাঝে মধ্যে। অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে উচ্চাসনে ঠাঁই দিয়েছিলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তার গুরুত্ব তেমন প্রকাশিত নয়। দলে ঠাঁই পাওয়া নীতিহীন, আদর্শহীনরা এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দলের আদর্শ আর নীতি কারও মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় না। বাঙালী জাতীয়তাবাদের যে চেতনা বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবন ও কর্মকা-ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সম্প্রসারিত করতে পেরেছিলেন, তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সামরিকজান্তা শাসক জিয়া প্রবর্তিত পাকিস্তানী ভাবধারায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ আওয়ামী লীগ লালন করছে। ফলে বাঙালী আর বাংলাদেশী ভাবধারার মধ্যে এক ধরনের সংঘাত কাজ করছে। বাঙালী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু উঁচুমানের যে সাংস্কৃতিক চেতনার বিস্তার ঘটিয়েছিলেন, তার কোন নিদর্শন আর মেলে না। গড্ডলিকা প্রবাহে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে বেঁধে নিয়ে আওয়ামী লীগ অপসংস্কৃতিকেই সংস্কৃতি মনে করে তার পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে আসছে। ধর্মীয় চেতনার প্রসার ঘটিয়ে নিজেকে ধর্মপ্রাণ প্রমাণ করার জন্য অনেক ধর্মব্যবসায়ীকেও প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে এবং সময়ে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন রাজনীতিতে তাদের মনোজগত যেভাবে গড়ে উঠেছিল, তার লেশটুকুও এখন আর মেলে না। সমাজবিরোধী শক্তিশালী দুর্বৃত্তকেও কাছে টেনে নিতে দ্বিধাগ্রস্ত নয় দলটি। লুটেরা, দুর্নীতিবাজ, তদ্বিরবাজদের ভিড় ভাট্টা এমনই বেড়েছে যে, দলের আদর্শ ও নীতি তাতে চাপা পড়ে গেছে। দলের বহুসংখ্যক নেতাকর্মী এই দুর্বৃত্তায়নকে মেনে না নিলে এই দুর্বৃত্ত চরিত্রের সৃষ্টি হতো না। দলের মধ্যে শেখ হাসিনা বাদে এমন কোন নেতা-কর্মী বিকশিত হয়ে উঠতে পারেননি, যাদের মধ্যে সমসাময়িক সমাজের প্রতিফলন পাওয়া যায়। দলের মধ্যে যুগপুরুষ দূরে যাক, সর্বজনগ্রহণযোগ্য নেতৃত্বেরও বিকাশ ঘটছে না। সমাজের বহু মানুষের অস্ফুট বক্তব্য পরিষ্কার করে তুলে ধরার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপরই বর্তায়। আবার এদের কাজে সমাজের বিশেষ পরিবর্তনের ধারা জোর পায়। অথচ দলে সেই নেতৃত্বের খোঁজ আর পাওয়া যায় না। সামাজিক মানুষের জীবনে যিনি বড় আকারের ছাপ ফেলেন, ইতিহাসে সেই মানুষ অমর এমনটাই সর্বজনবিদিত। কিন্তু দলে সেই মানব আর নেই। ছোট আকারের দৃষ্টি ফেলার মতোও কেউ জন্মায় না আর। গণমানুষের নেতা আজ আর মেলে না। এক অদ্ভুত আঁধার এসে আজ গ্রাস করেছে আওয়ামী লীগ নামক প্রায় সত্তর-উর্ধ্ব রাজনৈতিক দলটিকে। সাম্প্রতিক সময়ে টানা নয় বছরের বেশি ক্ষমতায় আসীন হয়েও দলটি সংগঠিত হতে পারেনি। মাঝে মাঝে প্রশ্ন আসে মনে, আসলেই কি আওয়ামী লীগ নেতারা চাইছেন? দলটি একটি সুসংগঠিত দলে পরিণত হোক। আগাছা, পরগাছা মুক্ত হোক। জনগণের নেতা গড়ে উঠুক। জবাব পাওয়া অবশ্য দুষ্কর। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আর আজকের আওয়ামী লীগ বহুধারায় শিক্ষা ব্যবস্থা বহাল করেছে, যার ফলে অর্ধশিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। ধর্মীয় শিক্ষাকে এমনই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে যে, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটছে শুধু নয়, এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাঙালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিরোধী। পাকিস্তানী জান্তা শাসক ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের মতো এরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিষোদগার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উৎফুল্লের সঙ্গে বলে উঠতে পারেন, মাদ্রাসা ছাত্ররা আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবে। আরেক ধাপ এগিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। কিন্তু তিনি কখনই বলেন না মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা হবে। ধর্মব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগে অনায়াসে আশ্রয় শুধু নয়, পদ-পদবিও পাচ্ছে। অনেক স্থানে তারাই দল ও জনগণের নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাধারীদের সঙ্গে এদের সংঘাত বাড়ছে। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন নির্বাচনে। দলের অনেক সংসদ সদস্য জনগণকে পশ্চাৎপদ চেতনায় ফিরিয়ে নিতে সক্রিয় আজ। প্রশাসনেরও এর প্রভাব রয়েছে। আওয়ামী লীগও এর আগে প্রত্যক্ষ যেসব সংগঠন রয়েছে এবং যারা নেতৃত্বে আসীন, সাধারণ জনগণের কাছে তাদের ভাবমূর্তি কোন উচ্চাসন পায় না। এদের আচার-আচরণ, হাবভাব, জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-দীক্ষার মান এমন স্তরে যে, জনগণ মনেই করে না এরা জননেতা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে এমনভাবে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে যে, দলটাকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না। মন্ত্রী আর দলনেতা একই জন হওয়ার সুবাদে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার গত চার বছরের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে জনগণের কাছে হাজির হবে। কিন্তু এতে চিড়ে ভিজবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগঠনের নেতাদের কর্মকা- বিশ্লেষণ করেই জনগণ ভোট দেবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দলটির অবস্থা এমন যে, একই আসনে অন্যান্য প্রার্থীর সমাহার ঘটছে। নব্য ধনী, নব্য লুটেরা, দুর্নীতিতে অর্থবিত্ত সম্পদের মালিক হয়েছে যারা, তারা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য হেন কাজ নেই, যা থেকে বিরত থাকবেন। দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা এবার বাড়বে। যার নিদর্শন তৃণমূল পর্যায়ে দেখা গেছে। আর এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীরা যেভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা যায়নি। ফলে সর্বত্র এখন দলের বিরুদ্ধে দল, নেতার বিরুদ্ধে নেতা, কর্মীর বিরুদ্ধে কর্মীর বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছে। একদা অতিকায় ডাইনোসোরে পরিণত হওয়া বিএনপি এখন অবলুপ্তির পথে। নির্বাচনে প্রার্থী হবার মতো লোকেরও অভাব। অবস্থা দলটির এমন যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হবার মতো অবস্থাও আর নেই। তাই এবারের নির্বাচনে আওামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবে আওয়ামী লীগ। সর্বত্র এখন একাধিক প্রার্থী প্রচারে নেমেছে। এই প্রার্থীদের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে দলের নেতা-কর্মীরা। অনেকস্থানে হাঙ্গামাও হচ্ছে। দল যেহেতু নিয়ন্ত্রণহীন সেহেতু স্থানীয় পর্যায়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা অসম্ভব প্রায় এখন। নির্বাচনের আগে দলটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রাখার জন্য কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। জনগণ চায় না আওয়ামী নামক দলটি বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হোক। লৌকিকভাবে কিছু না হলে অলৌকিকভাবে দলটি নিজস্ব অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে এমন অবস্থাও চোখে পড়ছে না।
×