ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবসমাজের সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৫ মার্চ ২০১৮

মানবসমাজের সঙ্কট

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবসমাজ যে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে সে কথা বারবার আলোচিত হচ্ছে। মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণেই প্রকৃতি এখন তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবী কোন্দিকে যায় সেটা হলফ করে কেউই বলতে পারেন না। তবে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এরই মধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ধরিত্রী মনুষ্য বসবাসের উপযুক্ত থাকবে বড়জোর আর কয়েক শ’ বছর। তাই মানবসমাজ যদি নিজেদের মহাবিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে চায় তাহলে তাদের সামনে একটা পথই খোলা। গ্যালাক্সিতে নতুন আবাসের সন্ধান করে সেখানে উড়ে যেতে হবে। বর্তমান সময়ে তুষারে তুষারে ঢেকে গেছে ইউরোপ। হিমঝড় ও তীব্র তুষারপাতে শুক্রবার পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রাণ হারিয়েছে ৬০ জন। কোন দেশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৪০ ডিগ্রী ছুঁয়েছে। তবে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মধ্য নরওয়ের ফোডলাল গ্রামে। শুক্রবার রাতে গ্রামটির তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪২ ডিগ্রী। আরও কয়েকদিন এ তুষারপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে ইউরোপের আবহাওয়া সংস্থাগুলো মনে করছে। সাইবেরিয়া থেকে ধেয়ে আসা বাতাসে রাতের গড় তাপমাত্রা ধারণার চেয়েও কমে যাওয়ায় মহাদেশটির বেশিরভাগ অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। বরফে ঢেকে গেছে রাস্তাঘাট। বহু দেশের যান ও রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতবিহীন হয়ে গেছে হাজার হাজার বাড়িঘর। বন্ধ রাখা হয়েছে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কয়েক শ’ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শীতের এ ঝাপটা অনুভূত হচ্ছে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণেও। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে পোল্যান্ডে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশটিতে ২৩ জন নিহত হয়েছে। এ এক মহাবিপর্যয় বলা চলে। বিজ্ঞানীদের মতে ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। পৃথিবী হলো মানুষসহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীই একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, বনভূমি হ্রাস, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিবিধ কারণে চিরচেনা বসবাসযোগ্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি তার প্রাণ ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারাতে বসেছে। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ক্রমেই উষ্ণতা বাড়ছে। বিগত ২০১৬ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। কিন্তু ২০১৮তে এসেই হাড়কাঁপানো শীতের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই আশঙ্কা জলবায়ু বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচের ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এ্যাসেসমেন্ট অব সি লেভেল রাইজ অন বাংলাদেশ কোস্ট থ্রু ট্রেন্ড এ্যানালাইসিস অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ২১ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার প্রায় চার কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবু মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষকে নতুন করে অভিযোজনের পরীক্ষা দিতে হবে। তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ খুঁজে বের করতেই হবে।
×