ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাস পরিচিতি ॥ মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ মার্চ ২০১৮

ক্যাম্পাস পরিচিতি ॥ মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ

যাত্রা হলো শুরু : ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩.৮৩ একর জায়গা নিয়ে যাত্রা শুরু করে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ (গঈচঝঈ)। এখানে নবম-দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকলেও খুব শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে মানবিক বিভাগও। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৮০০। শিক্ষক আছেন ১১৭ জন। বাংলা ও ইংরেজী দুই মাধ্যমেই পড়ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো সামনে কিছুটা বৃত্তাকার হলেও উপর থেকে দেখতে অনেকটা ঐ এর মতো। পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনে আছে আলো ঝলমলে ক্লাসরুম ও সুপ্রশস্ত করিডর। প্রতিষ্ঠানের পুরোটাই ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার নিরাপত্তা বলয়ে। মেইন গেটের পাশে অভিভাবক অপেক্ষাগার যেন এক স্বপ্নের জগত। মিনি পাঠাগার ছাড়াও এখানে দেখানো হয় শিক্ষার্থীদের করা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাই একঘেয়েমিতে ভুগতে হয় না অভিভাবকদের। বিল্ডিংয়ে ঢুকতেই বঙ্গবন্ধুর বিশাল প্রতিকৃতি মনে করিয়ে দেয় নয় মাসের সংগ্রামী মুক্তিযুদ্ধকে। সুদৃশ্য বাগানে মৌসুমী ফুল ফোটে আর প্রজাপতির দল উড়ে বেড়ায় এখানে-সেখানে। সামনে সবুজ চষধু ুবধৎফ আর একপাশে শহীদ মিনার। যার দু’পাশে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তৈরি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত টেরাকোটার শিল্পকর্ম। শিক্ষাক্ষেত্রে ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে ফলাফল : এইচএসসি, এসএসসি, জেএসসি, পিইসি প্রতিটি পরীক্ষায় একটি নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রত্যাশার চাইতেও ভাল ফলাফল করছে শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ এর এইচএসসি পরীক্ষায় মিরপুরের ৩০টি কলেজের মধ্যে গঈচঝঈ যখন প্রথম হয়। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ডিসেম্বর ২০১৭ তে আন্তঃক্যান্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজগুলোর মধ্যে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ ১ম রানার্সআপ হওয়ায় সেনাবাহিনী প্রধান ট্রফি অর্জন করে। এই ট্রফি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রায় উজ্জীবিত করেছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমে ২৪টি ক্লাবের শিক্ষার্থীদের অনুরণনে সারাটি বছর মুখরিত থাকে গঈচঝঈ। আর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অন্যদের জন্য ঈর্ষণীয় ফলাফল করে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ২০১৭-এর যেদিন ৩২টি ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মধ্যে গঈচঝঈ-এর ডিবেটাররা এনে দিয়েছিল চ্যাম্পিয়নশিপ, জন্মের দিক থেকে শিশু একটি প্রতিষ্ঠানের এমন অর্জন পরিবারের সদস্যদের করেছিল গর্বিত এবং আবেগাপ্লুত। অনন্য সব পদক্ষেপ : এ প্রতিষ্ঠানে কতগুলো বিষয় আছে যা হয়ত দেশের আর কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরল। পাশ্চাত্যের মতো এগুলোর সংযোজন শিক্ষার্থীর মানবিকতার বিকাশে এবং আদর্শ চরিত্র গঠনে সহায়ক হচ্ছে। নীতিবাক্য : নীতিবাক্য লিখে ও ব্যাখ্যা করে শিক্ষকরা ক্লাস শুরু করেন প্রতিদিন। এ্যাসেম্বলি ছাড়াও ক্লাস শুরুর আগে অত্যাধুনিক সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেমে জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠে পুরো ক্যাম্পাসে। জাগ্রত করে জাতীয়তাবোধ। আইডিয়া প্যাড : এতে শিক্ষার্থীরা সারাদিনের ভাল লাগা, মন্দ লাগা লিখে বা ছবি এঁকে প্রকাশ করে তাদের অনুভূতি। এক কথায় বলা যায় মনের খোলা জানালা হলো আইডিয়া প্যাড। ঙজঅঈণ : এর মাধ্যমে মুক্ত ও গঠনমূলক আলোচনায় শিক্ষার্থীরা হয়ে ওঠে জড়তাবিহীন সুবক্তা। এ ছাড়া এই আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা অন্যের মতামতকেও সম্মান জানাতে শেখে। এন্টিবুলিং প্রজেক্ট : শিক্ষার্থীদের আচরণ, কথাবার্তা ও মানসিকতায় সুশোভন ও পরিচ্ছন্নতা আনার জন্য সৃষ্টি হয়েছে এন্টিবুলিং প্রজেক্টের। যা দূর করেছে মনোমালিন্য ও আঘাত করে কথা বলা। ই-লাইব্রেরি : শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে ও বাসায় বসে অনলাইনে পড়তে পারার জন্য সৃষ্টি হয়েছে ই-লাইব্রেরি। প্রতিটি শ্রেণীর সিলেবাস অনুযায়ী বিষয়গুলো তাতে দেয়া আছে। মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি : এখানে আছে বায়ান্ন থেকে একাত্তরের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও তথ্যাবলী। ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের জানা ও শেখার জন্য অনন্য সংযোজন এটি। গ্যালারিটি মুগ্ধ ও বিস্মিত করে অতিথিদেরও। সাইন্স গ্যালাক্সি : পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও আইসিটি ল্যাবের সামনে গ্যালাক্সিতে আছে বিষয়ভিত্তিক বিবর্তন, বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের তথ্যবহুল ছবি এবং সাম্প্রতিক আবিষ্কারের তথ্য ও ছবি। বিউটিফুল বাংলাদেশ : এখানে আছে বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক উৎপত্তি, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যসমূহ, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান, নদ-নদী সম্পর্কিত ছবি ও তথ্য। আছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক তথ্যবহুল ছবি ও উপকরণ যা শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ বিষয়ক জ্ঞানকে করে সমৃদ্ধ ও গড়ে তোলে সংস্কৃতিমনা প্রজন্ম। কিড্স জোন : শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য যেন এক কল্পনার রাজ্য কিড্স জোন। এখানে তাদের মনোবিকাশের জন্য আছে খেলার সরঞ্জাম, এ্যাকুরিয়ামসহ নানা উপাদান। এ ছাড়া শুরু হতে যাচ্ছে ংঃঁফবহঃ ৎবপড়মহরঃরড়হ ধধিৎফ। এতে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ক্লাসে শৃঙ্খলা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভাল পারফরমেন্সের ভিত্তিতে সপ্তাহে একটি গ্রীন কার্ড এবং প্রতি মাসে সর্বাধিক গ্রীন কার্ডপ্রাপ্ত পাবে গোল্ডেন কার্ড ও সার্টিফিকেট। এ সব কিছুই শিক্ষার্থীদের প্রণোদনার জন্য। বর্ণিল মুহূর্তগুলো : শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত টিচার্স লাউঞ্জে বসে শিক্ষকরা যখন পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখে বা ক্লাসের প্রস্তুতি নেয়। সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেমে তখন বাজতে থাকে ভরাট গলায় রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীত বা মেলোডিয়াস কোন গান। প্রতিটি রুমে সাউন্ড সিস্টেম শুধু ক্লাসের সহযোগী উপাদান হিসেবেই না, বিনোদনের ব্যবস্থাও। ‘সপ্তবর্ণা’ হচ্ছে গঈচঝঈ-এর সিনেপ্লেক্স। ঊফঁঃধরহসবহঃ : এর আওতায় প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত ভিডিও অথবা মুভি দেখতে পারে সিনেমা হলের আবহে। ১০০% উপস্থিতির জন্য থাকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা। আর যদি সারা সপ্তাহ এই ধারা চলে তাহলে তো কথাই নেই। আত্মার সুদৃঢ় বন্ধনে : শিক্ষার্থীদের বা শিক্ষকদের যে কোন ধরনের সমস্যায় গঈচঝঈ পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে যায় সবচেয়ে আগে। কারোর অসুস্থতায়, কঠিন মুহূর্তে নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সমান সমবেদনা নিয়ে উপস্থিত থাকে। পরিবারের সদস্যদের বা তাদের স্বজনদের কখনও রক্তের প্রয়োজন হলে, রক্ত দেয়ার জন্য সবার মধ্যে যে অতুলনীয় স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়, তা যেন আত্মিক শক্তির অন্য রকম এক জাগরণ। ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
×