ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিদাহাস ট্রফি

ফাইনালে খেলার প্রত্যাশা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৪ মার্চ ২০১৮

ফাইনালে খেলার প্রত্যাশা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ শ্রীলঙ্কায় ৬ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া নিদাহাস ট্রফিতে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন আছে বাংলাদেশের। টি২০ ফরমেটের এ টুর্নামেন্টে ভারত অথবা স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, যে কোন এক দলকে পেছনে ফেলে ফাইনালের একটি দল হতে চায় বাংলাদেশ। তবে নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ও ভাবছে। সফরপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচ কোর্টনি ওয়ালশ শনিবার জানিয়েছেন, ‘আমি মনে করি আমাদের ভাল সুযোগ আছে। অবশ্যই আমরা দুই দলের (ভারত ও শ্রীলঙ্কা) বিপক্ষে আন্ডারডগ হয়ে মাঠে নামব। তবে পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে পারলে ফাইনাল খেলার যথেষ্ট সুযোগ আছে।’ এ জন্য ভাল পরিকল্পনা এবং তা কাজে লাগানোর যে বিকল্প নেই। তাও জানেন ওয়ালশ, ‘শ্রীলঙ্কাতে গিয়ে আমাদের ভাল পরিকল্পনা করতে হবে। আশাকরি আমরা নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়ে ধারাবাহিকভাবে ভাল ক্রিকেট খেলতে পারব।’ তা কী সম্ভব? দলের বর্তমান পারফর্মেন্স হতাশাজনক। এই পারফর্মেন্স যে ভাল করা যায়নি, তা সাকিব আল হাসানের অভাব কেউ পূরণ করতে পারেননি বলেই। সেই সাকিব এবার নিদাহাস ট্রফিতেও নেই। আঙ্গুলের চোট সেরে না ওঠায় এ টুর্নামেন্ট থেকেও সাকিবকে শেষ মুহূর্তে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আজ বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কায় যাবে। সাকিবকে ছাড়াই যাবে। দলের বিধ্বস্ত অবস্থা রাতারাতি দূর করা যাবে? সাকিবের অভাবই কী দূর করা যাবে? তাছাড়া ভারত ও স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা খেলবে এ টুর্নামেন্টে। ভারত তো টি২০তে সেরা দল। আর শ্রীলঙ্কাও নিজ দেশে সেরা। ওয়ালশ মনে করছেন, ‘শ্রীলঙ্কা সবসময়ই বিপজ্জনক দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছে ভারত। তারা র‌্যাঙ্কিংয়েও ভাল অবস্থানে আছে। আমাদের দুটি শীর্ষ দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। আমি নিশ্চিত তারা আমাদের কঠিন পরীক্ষা নেবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলাই আমাদের লক্ষ্য। সেক্ষেত্রেই কেবল আমরা আমাদের লক্ষ্য ছুঁতে পারব। সে রকম কিছুই করার চেষ্টা করব।’ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন ওয়ালশ, ‘অবশ্যই আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে ক্রিকেট খেলতে হবে। আমি সবাইকে এটাই বলেছি। সেই সঙ্গে আরও বলেছি খেলাটা পুরোপুরি উপভোগ করতে। চাপে ভেঙ্গে পড়া যাবে না। উপভোগ করলে এমনিতেই চাপকে জয় করা সম্ভব। আমি চাই সবাই চাপহীনভাবে মাঠের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করুক।’ শ্রীলঙ্কার মাটিতে অবশ্য শেষ টি২০ ম্যাচটিতে বাংলাদেশই জিতেছিল। গত বছর এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় মিলেছিল। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামেই সেই জয়টি মিলেছিল। এবার টুর্নামেন্টের সবকটি ম্যাচ একই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। সেই জয়টি থেকেই প্রেরণা নিতে চান ওয়ালশ। বলেছেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কাতে শেষ টি২০ জিতেছি। ওটা মাশরাফির শেষ ম্যাচ ছিল। আমরা পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাই। ওখানেই ফোকাস করার চেষ্টা করছি। বিশ্বের সেরা দুটি দলের বিপক্ষে আমাদের লড়তে হবে। যে কারণে আমাদের কোয়ালিটি ক্রিকেট খেলতে হবে। মাঠে যারা ভাল পরিকল্পনা করবে এবং তার সফল বাস্তবায়ন করবে, তারাই জিতবে।’ শ্রীলঙ্কায় ৬ থেকে ১৮ মার্চ নিদাহাস ট্রফি অনুষ্ঠিত হবে। তিনজাতির এ টুর্নামেন্টে ৮ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ দলের টুর্নামেন্টের মিশন শুরু হবে। এরপর ১০ মার্চ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা, ১৪ মার্চ আবার ভারত, ১৬ মার্চ শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দলে থাকছেন না সাকিব। তার অভাব কে পূরণ করবে? দল ঘোষণার সময়ই মেহেদী হাসান মিরাজকে সাকিবের বিকল্প ভেবে নেয়া হয়েছে। নিদাহাস ট্রফিতে সাকিবের না থাকার বিষয়টি শনিবার নিশ্চিত করেছে বিসিবি। তার পরিবর্তে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসকে নেয়া হয়েছে। লিটন উইকেটকিপিং ও ব্যাটিংটায় পারদর্শী। কিন্তু বোলিংয়ে নয়। সাকিব না থাকা মানে একজন ব্যাটসম্যানকে আলাদা নিয়ে খেলতে হয়। সাকিবকে ছাড়া কী ফাইনালে খেলা সম্ভব? সাকিবের অভাবইবা দূর করবেন কে? ওয়ালশ যখন দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তখনও সাকিবের না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি বিসিবি। পরে জানিয়েছে। তবে ওয়ালশ জানতেন সাকিবকে পাচ্ছেন না। আর তাই সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন, ‘সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে (সাকিবের অনুপস্থিতিতে)। সাকিবের এখনও চিকিৎসা চলছে। ওকে পাব না ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে আমাদের। পরিকল্পনার খুব বেশি কিছু আমি প্রকাশ করতে চাই না। তবে ওকে ছাড়া আমাদের একটু ভিন্নভাবে ভাবতে ও এগোতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ওর মতো একজনের অভাব রাতারাতি পূরণ করা কঠিন। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ও অধিনায়কত্ব-সাকিব সবকিছুই করে। ও না থাকায় সবাইকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।’ ওয়ালশের দৃষ্টি এবার অবশ্য পেসারদের দিকে। উপমহাদেশের উইকেট স্পিননির্ভর হলেও শ্রীলঙ্কার উইকেট এখন পেসারনির্ভরও হয়। স্পোর্টিং উইকেট মিলে। পেসাররা সুবিধা পেলে পেসারদের দিয়েই ভাল কিছু করার ভাবনা করছেন ওয়ালশ। তিনি একজন বোলিং কোচও। ছিলেন পেসার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসার। তাই পেসারদের কাছ থেকে তার চাওয়া বেশি থাকতেই পারে। আবার পেসারদের নিয়ে ‘বিশেষ ক্লাস’ও করান ওয়ালশ। পেসাররাও নাকি সবকিছু আত্মস্থ করতে পারছে বলেই জানিয়েছেন ওয়ালশ। বলেছেন, ‘পেসাররা সবকিছুই আত্মস্থ করতে পারছে। আমি পেসারদের নিয়ে আশাবাদী, ক্যাম্পে তারা মনোযোগী ছিল। রুবেল-মুস্তাফিজ-তাসকিনের ওপরে আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে। রনি আর রাহীর মতো তরুণরাও নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করতে পারলে তারা সাফল্য পাবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘গত তিনটি সিরিজে আমাদের বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা ছিল না। আমরা তাই পেসারদের ধারাবাহিকতায় গুরুত্ব দিচ্ছি। দলে নিজেদের ভূমিকা কি তা বুঝতে হবে পেসারদের। ফাস্ট বোলিং আসলে কি, এটা করতে কতটা জোর দেয়া প্রয়োজন এসব বিষয়ে বোঝানো হয়েছে তাদের। গতকাল (শুক্রবার) নেটে অনুশীলন হয়েছে। আর আজকের (শনিবার) অনুশীলন ছিল ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী। ছেলেরা পেস বোলিংয়ের সবকিছুই এখন আত্মস্থ করতে পারছে।’
×