ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার কোচ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ফুটবলার সুইনু

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৪ মার্চ ২০১৮

এবার কোচ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ফুটবলার সুইনু

রুমেল খান ॥ পাহাড়ী এক কিশোরী কন্যা। হতে চেয়েছিল স্কুলশিক্ষিকা। হঠাৎই স্বপ্নটা পাল্টে যায় ২০০৪ সালে। বড় বোনের হাত ধরে ঢাকায় চলে আসা আনসারের একটি ক্যাম্পে। সেখানে বাছাইয়ের পর ফুটবলে মনোনীত হওয়া। অথচ ক্যাম্পে আসার আগে কোনদিনও পায়ে বুট পরারই অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রথমদিকে বুট পায়ে দৌড়াতেও পারতো না সে, পড়ে যেত হুমড়ি খেয়ে। এতে সবার হাসির খোরাক হতে হতো। পরে দ্রুতই সব সামলে নেয় মেয়েটি। অচিরেই পরিণত হয় দক্ষ ফুটবলারে। সময়ের পরিক্রমায় সেই মেয়েটিই এখন হতে চলেছে ফুটবল কোচ। যদিও সাময়িক বিরতির মাঝে থাকলেও ফুটবল খেলাটা ছাড়েনি এখনও। পাহাড়ী কিশোরটি এখন ২৭ বছরের পরিণত যুবতী। নামটি তার সুইনু। পুরোনাম সুইনু প্রু মারমা। সুইনু এখন ব্যস্ত বাফুফের তালিকাভুক্ত মহিলা ফুটবল কোচ হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে বলেন, ‘এখন ‘বি’ কোচিং ডিপ্লোমা কোর্স করছি, শেষ হবে ৫ মার্চ। এর আগে করেছি ‘সি’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স। যদিও এখনও খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নেইনি। তবে ২০১৫ সাল থেকে ফুটবল খেলছি না। কারণ আমার কন্যা সন্তান হয়েছে (নাম আসফিয়া বিনতে সাজ্জাদ)। মূলত মেয়েকে দেখাশোনা করার জন্যই ফুটবল খেলছি না। তবে ফুটবলের সঙ্গেই আছি। মানে কোচিং কোর্স করছি (সঙ্গে আছেন আরও ৫ নারী )।’ কেন এই কোচিং কোর্স করা? ‘খেলোয়াড়ী জীবন পুরোপুরি যখন শেষ করব, তখন আমি বেকার বসে থাকতে চাই না। এ জন্য এখন থেকেই কোচ হবার তালিম নেয়া শুরু করেছি। পল স্মলি আমাদের ক্লাস নেন। টেকনিক্যাল-ট্যাকটিক্যাল অনেক কিছুই শিখছি। বুঝতে পারছি আগেরদিনের ফুটবলের চেয়ে এখনকার ফুটবলের বিস্তর ফারাক।’ সুইনুর ভাষ্য। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সুইনুর জবাব, ‘বাংলাদেশে কোন পেশাদার মহিলা ফুটবল কোচ নেই। আমি সেটা হতে চাই। ঠিকমতো মেধা-শ্রম দিলে এই পেশায় ভবিষ্যত আছে। চ্যালেঞ্জটা নিতে আগ্রহী। এ জন্য যতটা কষ্ট করতে হয় করবো।’ তবে খেলোয়াড় হিসেবে আবারও ফুটবলে ফিরতে চান সুইনু। ফিরতে চান জাতীয় দলেও। কিন্তু কিভাবে? ‘আমার একটি পরিকল্পনা আছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা ক্লাব ফুটবল লীগ আবারও চালু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই আশাতেই বুক বেঁধেছি। যদি লীগ চালু হয় তাহলে লীগে খেলেই ফুটবলে ফেরা যাবে। যদি ভাল খেলে নজর কাড়তে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই আবারও ডাক পাব জাতীয় দলে।’ সুইনুর পরিকল্পনা। ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এএফসির একটি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ অ-১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে অভিষেক হয়েছিল সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সুইনুর। বয়সভিত্তিক এবং সিনিয়র দল মিলে তার মোট আন্তর্জাতিক গোল ৪০টিরও বেশি। প্রিয় ও আদর্শ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তার অধীনে টানা সাত বছর (২০০৮-২০১৫) জাতীয় দলে খেলেছেন রাঙামাটির প্রত্যন্ত গ্রাম কাউখালিতে ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেয়া সুইনু। তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে সুইনু মেজ। ছোট বোন মাইনু প্রু মারমাও জাতীয় ফুটবল দলে একসময় খেলেছেন। তিনিও এখন মা হয়ে যাওয়ায় ফুটবল থেকে আপাতত নির্বাসনে। সুইনুর আদর্শ ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো এবং মামুনুল ইসলাম। ক্লাব পর্যায়ে সুইনু খেলেছেন দুই খ্যাতনামা দল আবাহনী এবং মোহামেডানে। খেলেছেন আনসারেও। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক ক্যাম্পে অংশ নেয়ার পর সুইনু ফুটবলকেই বেছে নেন নিজের লক্ষ্য হিসেবে। ২০০৫ সাল থেকেই আনসারে চাকরি করছেন। এ প্রসঙ্গে তার খেদোক্তি, ‘কি করবো বলেন। ফুটবল খেলে টাকা-পয়সা সেভাবে পাওয়া যায় না। তাই বেঁচে থাকার জন্যই আনসারে চাকরি নিয়েছিলাম।’ রাঙামাটির পোয়াপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই চর্মগোলকের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ সুইনুর। যদিও ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টসহ আরও অনেক খেলাই খেলতেন। তারপরও ফুটবলেই আনন্দ খুঁজে পেতেন সবচেয়ে বেশি। পরিবারও বাধা দেয়নি। বরং দিয়েছে উৎসাহ। সেটাই তরতর করে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানে খেলতে যাওয়া সুইনুকে। জাতীয় সিনিয়র দলে ২০০৮-২০১১ পর্যন্ত সহ-অধিনায়কত্ব এবং ২০১২-২০১৫ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করেছেন সুইনু। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে তাম্রপদক জয়ী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। এখন দেখার বিষয়, আগামীতে খেলোয়াড় হিসেবে আবারও সফল প্রত্যাবর্তন হয় কি না এবং খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টেনে সফল ফুটবল কোচ হতে পারেন কি না সুইনু।
×