ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ পানি নিশ্চিতে জলাধার দূষণমুক্ত রাখার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৪ মার্চ ২০১৮

নিরাপদ পানি নিশ্চিতে জলাধার দূষণমুক্ত রাখার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভবিষ্যতে সুপেয় পানিরপ্রাপ্তি, সংরক্ষণ এবং তত্ত্বাবধায়নের বিষয়টি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে। নিরাপদ পানি প্রাপ্তিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এ জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে জলাধারগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা জরুরী বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জলাধারগুলো দূষণমুক্ত করতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। দূষণের জন্য যারা দায়ী, যদি তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা যায় তবে দূষণরোধ অনেকটাই সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পানি সম্পদ তত্ত্বাবধায়ন : পানি দূষণরোধে কার্যকর কৌশল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশ ও এ্যালায়েন্স ফর ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তারা বলেন, পানি দূষণের কারণ ব্যাপকভিত্তিক। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো ব্যাপক দূষণের শিকার। অন্যদিকে চলনবিল, বড়াল নদীসহ সারাদেশের অন্যান্য জলাধার ব্যাপক দখল ও দূষণের শিকার। যে কারণে ভবিষ্যতে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি বড় ধরনের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দূষণের জন্য মুলত দায়ী শিল্প-কারখানার দূষণ। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয় দূষণ, ভরাট এবং নদী তীরবর্তী এলাকা দখল হওয়ায় পানির উৎসস্থল থেকে নিরাপদ পানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। পানির চাহিদা মিটাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। প্রতিবছর ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নেমে যাচ্ছে। পানি সঙ্কট মোকাবেলা ও পানির যোগান নিশ্চিত করতে সকল প্রকার পানির উৎস নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধ ও ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। জলাধারগুলো রক্ষায় সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ্যালায়েন্স ফর ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ-অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইকেল স্পেন্সার বলেন, ভবিষ্যতে পানি প্রাপ্তি, সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আজ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ পানি প্রাপ্তিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য জলাধারগুলোকে দূষণমুক্ত রাখা জরুরী, এজন্য সকলকে আন্তরিক হতে হবে। তিনি বলেন, জলাধারগুলো দূষণের জন্য যারা দায়ী, যদি তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা যায় তবে দূষণরোধ অনেকটাই সম্ভব। নদী-জলাধারগুলো দূষণকারী ব্যবসায়ীদের বৈশ্বিকভাবেও নিরুৎসাহিত করা এবং দূষণ না করলে ব্যবসায়িক লাভের বিষয় সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা দরকার। এজন্য আমরা কতগুলো বিষয়কে টার্গেট করে বিশ্বব্যাপী জোট গঠনের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্দেশে হলো পানি ব্যবহারকারীদের পানির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করে প্রকৃতি-পরিবেশ ও পানি সম্পদ রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে। একটি ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাপা’র যুগ্মসম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, জলাধার এবং পানি দূষণের জন্য মূলত দায়ী শিল্প-কারখানার দূষণ। ব্যবসায়িক স্বার্থে নদী-জলাধারগুলোকে দূষণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট আইন, আদালতের রায় ও সরকারের নির্দেশনার পরও শিল্প-কারখানায় ‘বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট’ লাগানো হচ্ছে না। যে কারণে নদী-জলাধার দূষিত হয়েই চলছে। নিরাপদ পানি প্রাপ্তির লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরী বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের সাধারণ সম্পাদক ও গ্রিন ওয়াচের সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, নদী ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বড় ধরনের সমস্যা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার অভাবে নদী দূষণ বাড়ছে। শিল্প-কারখানার অনবরত দূষণে নদী-জলাধারগুলো ব্যাপকভাবে দূষিত। যার প্রভাব পড়ছে সুপেয় পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে। তিনি নদী ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, দেশের নদীগুলোকে দখল- দূষণ থেকে রক্ষার জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানেই শিল্প দূষণ বা যে কোন ভাবে নদী দখল-দূষণ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
×