ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বেশি আক্রান্ত;###;১৮ হাজার রোগী ৯৬ সেন্টারে সপ্তাহে দুই বার ডায়ালাইসিসের সুযোগ পায়

দেশে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ মার্চ ২০১৮

দেশে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কিডনি রোগে তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে কিডনি চিকিৎসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীরা বেশি অবহেলিত। বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। কিডনি বিকল হয়ে প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ নারী অকাল মৃত্যুবরণ করে। সারা বিশ্বে ১৪ শতাংশ নারী ও ১২ শতাংশ পুরুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দেশে বিপুলসংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টারের সংখ্যা মাত্র ৯৬। ১৮ হাজার রোগী এসব সেন্টারে সপ্তাহে ২ বার করে ডায়ালাইসিসের সুযোগ পায়। বেসরকারী সেন্টারগুলোতে ৩৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডায়ালাইসিস মূল্য রাখা হয়, যা নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তের জন্য বহন করা অসম্ভব। বিশ্ব কিডনি দিবস-২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে কিডনি বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ হারুন অর রশিদ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেনাল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রফিকুল আলম, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোলজির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সালাম, দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস প্রমুখ। ক্যাম্পসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট, অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ এ গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালন করেন এবং তিনি কিডনি রোগের প্রতিরোধ, প্রতিকার এবং কিডনি রোগ চিকিৎসায় মহিলাদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের ওপায় নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শীর্ষ পদগুলোতে এখন নারীর উপস্থিতি অনেক বেশি। আমি দেখেছি এমবিবিএসে ভর্তির ক্ষেত্রেও এখন মেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেড়েছে। তাই বোঝা যাচ্ছে যে, পিছিয়ে পড়া নারীর অপবাদ ঘুচাতে এখন আমরা অগ্রসর হচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের মেধা, বুদ্ধি ও তারুণ্য আছে যা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে পারব। তবে নারীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে সর্বমহল থেকে সাহায্য করতে হবে। নারীর যে তীক্ষè বুদ্ধি নিবিড় কর্মক্ষমতা রয়েছে তা কাজে লাগাতে হবে। তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে দেশের নারীর ভূমিকা, ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবদান রাখতে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আগ্রহী এবং কর্মতৎপর ডাঃ জালাল বলেন। কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে ব্যাপকসংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টারের সংখ্যা মাত্র ৯৬। ১৮ হাজার রোগী এসব সেন্টারে সপ্তাহে ২ বার করে ডায়ালাইসিসের সুযোগ পায়। বেসরকারী সেন্টারগুলোতে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ডায়ালাইসিস মূল্য রাখা হয় যা নি¤œবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তের জন্য বহন করা অসম্ভব। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় মোট কিডনি রোগীর তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিসের সুযোগ পায়। বাকি বিপুলসংখ্যক রোগী অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারে না। তাই বাংলাদেশে ডায়ালাইসিস খরচ কমাতে সরকারী-বেসরকারীভাবে বাস্তবিক উদ্যোগ নিতে হবে। নারীদের কিডনি চিকিৎসায় বৈষম্য দূরীকরণে স্বয়ং সরকারকে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে ডাঃ হারুন অর রশিদ বলেন, এ বিষয় সমাজে মানুষের একটি মাইন্ড-সেট আছে যা পরিবর্তন হওয়া খুবই জরুরী।
×