ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৪ মার্চ ২০১৮

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল, অগ্নিগর্ভ পুরো বাংলাদেশ। দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে সবাই রাজপথে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে চলছে লাগাতার হরতাল। ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত শহর-বন্দর-গ্রামগঞ্জ। অহিংস আন্দোলন-সংগ্রামে নয়, সশস্ত্র সংগ্রামেই একমাত্র মুক্তির পথ; এটা বুঝতে বাঙালী জাতির বাকি রইল না। তাই আন্দোলনের পাশাপাশি সারাদেশেই গোপনে চলে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। উনিশ শ’ একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের চার তারিখ ছিল দেশব্যাপী লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন। এই দিন হরতাল ছিল আট ঘণ্টার। দ্রোহ-ক্ষোভে বঞ্চিত-শোষিত বাঙালী তখন ক্রমেই ফুঁসে উঠছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে বসে নেই কুখ্যাত পাকিস্তানী বাহিনী। তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররাও বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাতে তৎপর। কারফিউ দিয়েও সামরিক জান্তা সাহসী বীর বাঙালীকে ঘরে আটকে রাখতে না পেরে গোপনে আঁটতে থাকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে বাঙালী নিধনের ছক। শুধু অপেক্ষা করতে থাকে ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কী বলেন। আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন ৭ মার্চের জনসভা সফল করার জন্য। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) চলতে থাকে জনসভার প্রস্তুতি। পাশাপাশি ঢাকাসহ সারাদেশেই গঠন হতে থাকে সংগ্রাম কমিটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুব ও ছাত্র নেতারা গোপনে নানাস্থান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ অভিযান চালাতে থাকেন জোরেশোরেই। একাত্তরের এই দিনে অর্থাৎ ৪ মার্চ, ১৯৭১ ক্ষুব্ধ বাঙালীর মিছিলে মিছিলে ঝাঁঝালো স্লোগানে উচ্চকিত ছিল সারা দেশ। প্রধান স্লোগান ছিল- ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্ম-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি। একাত্তরের উত্তাল, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বাংলাদেশে এই দিনটিতে সারা দেশের সকল পাড়া, গ্রাম, মহল্লায় সংগ্রাম কমিটির পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়। এর উদ্যোক্তা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলের (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ক্যান্টিনে স্থাপন করা হয় ছাত্রদের যোগাযোগ কেন্দ্র।
×