ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেঘালয়ে এগিয়ে কংগ্রেস

ত্রিপুরায় শূন্য থেকে শিখরে বিজেপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ মার্চ ২০১৮

ত্রিপুরায় শূন্য থেকে শিখরে বিজেপি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মোদি ম্যাজিকের কাছে চুরমার দীর্ঘদিনের বাম সাম্রাজ্য। বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের এ রাজ্যে এক কথায় শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছাল ক্ষমতাসীন বিজেপি। ত্রিপুরার ৫৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিজেপি ৪৩ আসন পায়। বামেরা পায় ১৬ আসন। আর বিরোধী দল কংগ্রেসের অবস্থা আরও করুণ। এ রাজ্যে দলটি একটি আসনও পায়নি। একই দিন মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের ফলাফলও ঘোষণা করা হয়। তবে মেঘালয়ে সুবিধা করতে পারেনি গেরুয়ারা। এ রাজ্যে ২১ আসন পেয়ে এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি পেয়েছে দুই আসন আর স্থানীয় এনপিপি পেয়েছে ১৯ আসন। নাগাল্যান্ডে ৬০ আসনের মধ্যে বিজেপি ২৯ আসন পেলেও কংগ্রেস একটি আসনও পায়নি। রাজ্যটিতে ২৫ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় এনপিএফ দল। ত্রিপুরায় বিশাল ব্যবধানে জয়ের খবরে উচ্ছ্বসিত বিজেপি শিবির। শনিবার সকালে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভোট গণনা শুরু হয়। খবর আনন্দবাজার, পিটিআই ও এনডিটিভি অনলাইনের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরার মানুষ রায় দিয়েছেন। বিজেপির এ্যাক্ট ইস্ট নীতিকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মানুষের স্বপ্নপূরণের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। ত্রিপুরার জয়কে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে মোদি বলেন, অসাধারণ কাজ করেছেন ত্রিপুরার ভাই-বোনেরা। তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা নেই। ত্রিপুরার পরিবর্তন আনতে চেষ্টার কোনও কমতি রাখব না। এ নির্বাচন বামদের সঙ্গে আদর্শের লড়াই ছিল বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন মোদি। তার মতে এটা অত্যাচারী শক্তির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জয়। আজ থেকে শান্তি অহিংসা প্রতিষ্ঠিত হল ত্রিপুরায়। এছাড়া নাগাল্যান্ডে বিজেপির সাফল্যের জন্যেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদি। তিনি বলেন, নাগাল্যান্ডের অগ্রগতির জন্য পরিশ্রম করব। মোদির ভাষায় পোক্ত সংগঠন ও উন্নয়ন দিয়ে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছি আমরা। ত্রিপুরায় বাম ফ্রন্ট প্রথম ক্ষমতায় আসে ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩ সালের নির্বাচনেও জয় ধরে রেখেছিল তারা। ১৯৮৮ সালে কংগ্রেস-টিইউজেএস জোটের কাছে হারলেও পরের ভোটেই (১৯৯৩ সালে) ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে বাম ফ্রন্ট। তারপর টানা চার বার ক্ষমতায় মানিক সরকার। গতবারও জিতেছিল ৬০টির মধ্যে ৫০ আসনে। টানা ৩৪ বছর শাসনের পর ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের অবসান ঘটলেও মানিকের নেতৃত্বে ত্রিপুরায় দুর্গ আগলে রাখছিল তারা। এখন তাও হারাতে হল। হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি এর আগে কখনও ত্রিপুরায় কোন আসন না জিতলেও এবার বেশ আটঘাট বেঁধে নেমেছিল। সৎ, নির্লোভ ভাবমূর্তির মানিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় যেতে অর্থ ও গ্ল্যাামারের তুমুল প্রদর্শনী ছিল বিজেপির পদ্মফুল মার্কাধারীদের। নয়াদিল্লী থেকে বার বার উড়ে এসে ভারতের উত্তর-পূর্বের ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আহ্বান জানিয়েছিলেন, মানিক ফেলে এ বার ‘হিরা’ আনুন। তার সেই আহ্বানে কাজ হয়েছে, তা গণনার প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সমানে সমানে টক্কর চলছিল লাল আর গেরুয়ার। বাঙালী এলাকায় এই সেয়ানে সেয়ানে লড়াই খানিকটা হলেও, বিজেপি জোট একচ্ছত্রভাবে বাজিমাত করল উপজাতি প্রধান এলাকাগুলোয়। বেলা গড়াতেই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মানিক সরকারের দুর্গে মোক্ষম ঘা মারতে চলেছে বিজেপি। বিশেষ করে উপজাতি এলাকাগুলোতে বামদের জনসমর্থনের ভিত্তি এই নির্বাচনে পুরোপুরি ধসে গিয়েছে। ২০১৩ পর্যন্ত ত্রিপুরার কোনও বিধানসভায় যে বিজেপির কোন অস্তিত্বই ছিল না, সেই তারাই পাঁচ বছরের মধ্যে যাবতীয় হিসেবনিকেশ পাল্টে দিল। অবশ্য এই সাফল্যের পেছনে পুরো কৃতিত্ব বিজেপিকে দেয়া ভুল হবে। পঁচিশ বছরের নিরবচ্ছিন্ন বাম শাসনকালের অবধারিত অঙ্গ হিসেবে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। পুঞ্জীভূত সে বিরোধিতার আঁচ যে বামফ্রন্ট তথা সিপিএম নেতৃত্ব পাননি এমনটা নয়। যে কারণে, ভোটের প্রচারে বারে বারে তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘কিছু মানুষের’ বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু যেটা তারা আন্দাজও করেননি যে সেই ‘কিছু মানুষ’ এ বারে এ রকম নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য হবেন। বামফ্রন্টের এ বারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ‘ত্রিপুরা একসঙ্গে ছিল, একসঙ্গে আছে, একসঙ্গে থাকবে। শান্তি-সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্বের পরিমণ্ডলকে আরও সুদৃঢ় করতে প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’ বস্তুত, ত্রিপুরার বাঙালী ও জনজাতির মধ্যে বাম আমলে শান্তি ও সম্প্রীতির এক আবহ ছিল বলে এখানকার বহু মানুষই মনে করেন এবং শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রয়াসও ছিল। কিন্তু জনজাতির জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি সুকৌশলে তুলে সিপিএমের সেই শক্ত ঘাঁটিতেই বড়সড় আঘাত হানল বিজেপি জোট।
×