ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসমাবেশে মেনন

দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ায় নির্বাচন আটকাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ মার্চ ২০১৮

দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ায় নির্বাচন আটকাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ দফা দাবিতে আয়োজিত ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসমাবেশে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ায় আগামী সংসদ নির্বাচন আটকে থাকবে না। এ ধরনের হুমকি দিয়ে কোন কাজ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ১৪ দলের অন্যতম এই শরিক নেতা। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এতে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, এদেশে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি চলতে পারে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নেয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিচার না হলে খালেদা জিয়ার বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তারা উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মৌলবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে না পারলে তারা দেশকে পাকিস্তানী ধারায় নিয়ে যাবে। আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য অটুট রাখা ও সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদীসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কোনঠাসা করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার গঠন করা। মেনন বলেন, দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ায় বিএনপি নির্বাচনে না থাকার হুমকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, এ ধরনের হুমকি দিয়ে কোন লাভ নেই। কারণ, তাদের ইতিহাস দুর্নীতি আর কলঙ্কের। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে মেনন বলেন, আগামী নির্বাচনে চলমান উন্নয়নের ধারাকে টিকিয়ে রাখব নাকি বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি, জঙ্গীবাদসহ মৌলবাদী রাজনীতির কাছে দেশকে তুলে দেব; এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা অন্ধকারের দিকে যাব কিনা এ নিয়ে ভাবতে হবে। অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ১৪ দলের শরিক নেতা মেনন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও সংবিধানের ভিত্তিতে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী মেনন বলেন, সরকার বিএনপি-জামায়াতের কলিজায় হাত দেয়ায় তারা নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য এই ষড়যন্ত্র রুখতে পারে। ন্যায্যতাভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে প্রবীণ এই বাম নেতা বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মেনন বলেন, সামনে কঠিন দিন, লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে অসাম্প্রদায়িক শক্তির বাংলাদেশ আমরা রূপ দিতে পারিনি। যে কারণে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে। পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তককে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এখন সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে কথা বলার মানুষের অভাব হয় না। আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে মেনন বলেন, যারা শাপলা চত্বরে বসে সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করেছিল সেই হেফাজতে ইসলাম এখন অনেকের বন্ধু হয়েছে। উন্নয়ন আর গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী নয় উল্লেখ করে মেনন বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। দেশে বর্তমানে এক লাখ ২৫ হাজার কোটিপতির সংখ্যা উল্লেখ করে মেনন বলেন, দেশ থেকে প্রতিনিয়ত সম্পদ পাচার হচ্ছে। যে কোন মূল্যে দুর্নীতিবাজ, সম্পদ পাচারকারীদের রুখতে হবে। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হারলে দেশে চরম বিপর্যয় আসবে একথা উল্লেখ করে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, যে কোন মূল্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ঐক্য অটুট রাখতে হবে। এই শক্তির মধ্যে ঐক্য ও বিশ্বাস হারালে দেখতে হবে কত আঘাত, কত ২১ আগস্ট সামনে আসে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করে তারা দেশের নাগরিক নয়, বিশ্বাসঘাতক ও রাজাকার। তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারী এই রাজাকারদের তালিকা অর্থমন্ত্রী প্রকাশ করেন না। দুর্নীতিবাজ ও সম্পদ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। বিএনপি আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ এমন মন্তব্য করে বাদশা বলেন, দুর্নীতিবাজ দলের প্রধান খালেদা জিয়া জেলে থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক। তারেক রহমানকেও জেলে দেয়া উচিত। পাচারকারী ও রাজাকারদের কারা অন্তরীণ করার দাবিও জানান তিনি। নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটকে নাক গলাতে নিষেধ করে তিনি বলেন, দুর্নীতি ছাড়লে ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সংবিধান মানলে কাউকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া উচিত। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, কামরুল আহসান, বিমল বিশ্বাস, আনিসুর রহমান মল্লিক, নূরুল আহসান, ইকবাল কবির জাহিদ, অধ্যাপক সুশান্ত দাশ, হাজেরা সুলতানা, মনোজ সাহা ও মাহামুদুল হাসান মানিক।
×