ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনার জনসভায় আগামী নির্বাচনের ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা;###;৫ কিলোমিটার জুড়ে জনসভা

নৌকায় উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৪ মার্চ ২০১৮

নৌকায় উন্নয়ন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধশালী করতে চাই। আগামী নির্বাচনে নৌকার জয় হবে, ইনশাল্লাহ! উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। শনিবার বিকেলে খুলনা জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে নৌকায় ভোট দেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই; এটা এখন দেশবাসী বুঝতে সক্ষম হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছেন। আপনারা দেশের উন্নয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছিলেন, উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতে নির্বাচন। আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই, এই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে চান? যদি চান, তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আপনারা বলেন, দুই হাত তুলে দেখান, কোন্ মার্কায় ভোট দেবেন ওয়াদা করেন। এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা দু’হাত তুলে সমস্বরে সেøাগান দিয়ে নৌকায় ভোট প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছেন। আদালতের রায়ে তিনি কারাগারে। এখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ২৪ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই বাংলাদেশের মাটিতে রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। প্রধানমন্ত্রী লাখো জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত কি করে? নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে কত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) তার নিজের অফিসে বসে থেকে ঘোষণা দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত না করে তিনি নাকি ঘরে ফিরবেন না। প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি অফিসে বসেছিলেন। উনি (খালেদা জিয়া) অফিসে বসে বিরিয়ানি খান আর মানুষ পোড়ানোর হুকুম দেন। ওই সময়ের ভয়াল তা-বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা তার চোখের সামনে দেখে তার মেয়ে পুড়ে মারা যাচ্ছে। তার স্বামী পুড়ে মারা যাচ্ছে। বাবা চোখের সামনে দেখে তার ছেলে পুড়ে যাচ্ছে, কিছু করতে পারে না। সিএনজি চালক থেকে শুরু করে গাড়ির ড্রাইভার, বাসের চালক, ড্রাইভার, কনডাক্টর, ট্রাকের ড্রাইভার কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। এমনকি আমি বিদ্যুত কেন্দ্র বানাই, সেই বিদ্যুত কেন্দ্র বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ কি অপরাধ করেছে? ২৭ পুলিশকে তারা হত্যা করেছে। বিজিবির লোক হত্যা করেছে। প্রায় ৫০০ মানুষকে ওই খালেদা জিয়া আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ আগুনে পুড়ে আহত হয়েছে। তাদের জীবন-জীবিকার কোন পথ নেই। তাদের সব পথ বন্ধ। লঞ্চে আগুন দিয়েছে। সরকারী অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। এর আগে দুপুর আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউস থেকে জনসভাস্থলে আসেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী জনসভার পূর্বে মঞ্চের পাশে তৈরি করা একটি বোর্ডে সুইচ টিপে ২ হাজার ৪১ কোটি টাকার ১০০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে ৬৭৫ দশমিক ৩৭ কোটি টাকার ৪৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকার ৫১টি নতুন প্রকল্প নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ সময় মুহুর্মুহু করতালিতে জনসভায় আসা মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। এর আগে বেলা এগারোটায় খালিশপুরের ঈদগাহ ময়দানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে খুলনা নগরীতে ছিল সাজ সাজ রব। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফর। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি খুলনা শিপইয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন ২০১৩ সালে। ওই হিসেবে দীর্ঘ ৫ বছর পর তিনি শনিবার খুলনার জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে নগরজুড়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়। সার্বিক নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিল সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তা রক্ষীরা দায়িত্ব পালন করেন। তিনটি স্থানে ২৪টি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করে পুরো মাঠকে। বৃহত্তর খুলনাসহ বিভাগের ১০ জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা থেকেও জনসভায় লোক আসে। বিপুল মানুষের ¯্রােতে জনসভাটি রীতিমত জনসমুদ্রে রূপ নেয়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল বেলা ৩টায়। কিন্তু সকাল ১০ টা থেকেই বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরাসহ খুলনার আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও নৌকা প্রতীক নিয়ে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। দুপুর ২টার মধ্যে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। শেখ হাসিনা যখন জনসভাস্থলে এসে পৌঁছান, জয় বাংলা সেøাগান ও তুমুল করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন। জনসভাস্থলে জায়গা না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে ৫ কিলোমিটর জুড়ে লোক সমাগম ঘটে। এদিকে সকাল থেকেই খুলনা শহরের বেশিরভাগ মার্কেট ও দোকান বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি। অন্যদিকে বিএনপি কি করে? বিএনপির কাজই ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, মানুষ হত্যা করা, মানুষকে খুন করা। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা। ওরা যখনই ক্ষমতায় ছিল, সেই জিয়ার আমল থেকে শুরু করে প্রতিবার মানুষ হত্যা ছাড়া আর কিছুই করেনি। খুলনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সময় এই খুলনা ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের অভয়ারণ্য। প্রতিদিন খুন হতো, প্রতি মুহূর্তে মায়ের কোল খালি হতো। এখানে যেন আর কোন ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ইমাম থেকে মাদরাসার শিক্ষক, সমাজের বিশিষ্টজন, মা-বোন যারা আছেন তারা আপনাদের ছেলেমেয়ে ঠিকমতো পড়াশোনা করে কিনা, মাদকাসক্ত হলো কিনা, জঙ্গীবাদে জড়াল কিনা তা দেখতে হবে। তারা যেন এসবে কখনও সম্পৃক্ত হতে না পারে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। মানুষকে বাঁচাতে পারে না, মানুষকে হত্যা করতে পারে। হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক করেছিলাম। তারা ক্ষমতায় গিয়ে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করে, জনগণের জন্য কাজ করে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই উন্নয়নের পথে। আজকে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার কমিয়েছে। তিনি বলেন, এই খুলনাকে ভিক্ষুক মুক্ত করা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশের মানুষ ভিক্ষা করে চলবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের মানুষ সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করবে। আমরা সেটাই দেখতে চায়। সেটাই করতে চায়। এই দেশকে আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনার সার্বিক উন্নয়নের ওয়াদা করেছিলাম। আজ ১০০টি প্রকল্পর উদ্বোধন করেছি। যেন খুলনার উন্নয়ন হয়। এই অঞ্চলকে আরও উন্নত করতে চাই। জুট মিল থেকে শুরু করে বিভিন্নœ কলকারখানার উৎপাদন শুরু করেছি। রূপসা ব্রিজ জাপান সরকারের সহযোগিতায় শুরু করেছিলাম। আজ সেটা বাস্তবায়ন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ৬৮ লাখ মা-বোন ভাতা পাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের বই কেনার দায়িত্ব নিয়েছি। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ বই উৎসব হয়। স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া তিনি সরকারের উন্নয়নমুখী বিভিন্ন কর্মকা-ের তথ্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগে কারও হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে তা হাতে হাতে তুলে দিয়েছি। এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে আরও অনেক সেবা নিতে পারছেন। আমাদের লক্ষ্য উন্নয়ন। তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ওই মংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। এই অঞ্চল এক সময় উন্নত ছিল। এখন আবার উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছি। উন্নয়নের জন্য আমরা সব কাজ করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, ভোলায় অনেক গ্যাস পাওয়া গেছে। সেই গ্যাস পাইপলাইনে করে বরিশাল ও খুলনায় যেন আসে সেই ব্যবস্থা করে দেব। শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। হত্যা আর অশান্তির ধর্ম না। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে, বিভিন্ন দেশে চাকরি করবে- এটাই আমরা চাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন বিপথে যাবে? তাদের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে চাই। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে কোন ঘর অন্ধকার থাকবে না। সব ঘরে আলো জ্বলে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন সকলের হাতে মোবাইল ফোন। আছে না মোবাইল ফোন? আছে?- প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় জনসভায় উপস্থিত সবাই তাদের মোবাইল ফোনসহ হাত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যা ওয়াদা দিয়েছিলাম এর বাইরেও যে সমস্ত কাজ জনগণের জন্য কল্যাণকর সেগুলো আমরা করেছি। আমাদের লক্ষ্য উন্নয়ন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, আপনারা জানেন ওই মংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, মংলা বন্দর পর্যন্ত যেন রেললাইন যায়, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে যশোর-বাগেরহাট হয়ে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন যাবে সে প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর সরকার কাজ শুরু করেছে। কেউ কুঁড়েঘরে থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষের ঘর-বাড়ি তৈরি করে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছি। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এমপি, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এমপি, এ্যাডভোকেট নুরুল হক এমপি, মহিলা আওয়ামী লীগের মাহমুদ বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পংকজ দেবনাথ এমপি, যুব মহিলা লীগের নাজমা আকতার, ছাত্রলীগের এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন আওয়ামী রীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সালাম মুর্শেদী প্রমুখ। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন- প্রকৌশলীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৌশলীদের সরকারের উন্নয়র পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের ওপরই বর্তায়। কাজেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আপনারা পেশাগত দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করুন। শনিবার দুপুরে আইইবি খুলনা সেন্টারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (ইআইবি)-র ৫৮তম কনভেনশন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামত বিষয়ে প্রচুর গবেষণা করতে হবে। তিনি বলেন, বিকল্প জ্বালানি ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, স্বল্প-ব্যয়ে বাড়িঘর নির্মাণের কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উন্নয়ন কর্মকা-কে টেকসই করার জন্য পরিবেশ বান্ধন অবকাঠামো, ভূমিকম্প ও দুর্যোগ প্রবণ প্রযুক্তির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশের সকল নির্মাণ কাজে যেন বাইরের থেকে প্রযুক্তি ধার করতে না হয়। আমাদের প্রকৌশলীরাই সব কিছুতে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক তরুণ ও মেধাবী প্রকৌশলী পৃথিবীর কোন কোন দেশের ‘আইটি ভিলেজে’ অনেক দক্ষতা ও সুনাম অর্জন করেছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ইআইবি’র প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর, ইআইবি খুলনা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাদিক এবং কনভেনশন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় বিএনপি’র কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১-এর বিএনপি বিনে পয়সায় আন্তঃমহাদেশীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তাদের মূর্খতা ও অজ্ঞতার কারণে ওই বিনে পয়সার সংযোগ থেকে আমরা তখন বঞ্চিত হই। তিনি বলেন, আমরা ১৯৯৬-এ দায়িত্ব গ্রহণের পর এ সংযোগ গ্রহণের উদ্যোগ নিই। আন্তঃমহাদেশীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে আমরা অংশীদার হয়েছি। এই সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ কোন কারণে কাটা পড়লে টেলি ও ইন্টারনেট সেবা বিঘিœত হয়। এজন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এর ফলে এ সঙ্কট দূর হওয়ার পাশাপাশি উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ভয়েস সেবার সার্বক্ষণিক সুবিধা পাবে দেশের মানুষ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা এখন আর পিছিয়ে নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশকে ডিজিটালাইজেশন এবং প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, আমরা ই-গবর্নেন্স চালু করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা দেশবাসীর দোরগোড়ায় বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দিতে চাই। প্রকৌশলীদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে চাই। তিনি বলেন, টেলিফোন ও মোবাইল ফোনকে গ্রামের মানুষের হাতের নাগালে পৌঁছে দিয়েছি। ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন বর্তমানে ২-৩ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ফোরজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী বিপ্লব সাধন করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
×