ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গুনিয়ায় ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছে না কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৪ মার্চ ২০১৮

রাঙ্গুনিয়ায় ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছে না কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া, ৩ মার্চ ॥ ভর্তুকির আওতায় সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও রাঙ্গুনিয়ায় কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছে না। মূল্য তালিকার ব্যানার টাঙ্গিয়ে বাজারে সার বিক্রির নির্দেশনা মানছে না বিক্রেতারা। প্রতিকেজি ইউরিয়া সারের নির্ধারিত মূল্য ১৬ টাকার স্থলে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট দানার ইউরিয়ার ক্ষেত্রে মূল্য আরও বেশি। কম সময়ে কার্যকারিতার সুবাধে কৃষকের নিকট ছোট দানাদার ইউরিয়া সারের চাহিদা এখানে বেশি। কিন্তু এই চিকন দানার ইউরিয়া সারের বরাদ্দ দেয়া হয় না এখানে। ডিলাররা কালোবাজার থেকে সংগ্রহ করে দুর্লভের অজুহাতে চড়া দামে বিক্রি করছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা থাকলেও ছোট দানাদার ইউরিয়া সারের সরবরাহ দেয়া হয় না। অথচ দেশের উত্তরাঞ্চলে নন চাহিদার ক্ষেত্রে এ জাতীয় সারের পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ দেয়া হয়। নন ইউরিয়া সারের মধ্যে বিএডিসি চট্টগ্রামের টিএসপি সারের ব্যবহারে বেশি উপকারিতায় চাষাবাদে কৃষকের নিকট চাহিদা প্রচুর। এ জাতীয় সারের পর্যাপ্ততা থাকলেও নির্দিষ্ট মূল্যে কিনতে পাওয়া যায় না। ২২ টাকার স্থলে বাজারে প্রতিকেজি ৩৬-৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। কৃষি অফিস জানায়, চাহিদা বেশি থাকলেও বিএডিসি উৎপাদিত টিএসপি সারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যায় না। আমদানিকৃত বিদেশী (মরক্কো)টিএসপি সার দিয়ে বরাদ্দ পূরণ করা হয়। ডিএপি ও এমওপি জাতীয় সারও নির্ধারিত মূল্যে বাজারে পাওয়া যায় না। বর্তমানে ইরি-বোরো ধান ও রবি মৌসুমের চাষাবাদে চড়া মূল্যের সার নিয়ে কৃষকের মাঝে চলছে উৎকণ্ঠা। আবাদের ভরা মৌসুমে কৃষকেরা চড়া মূল্যের কারণে ক্ষেতে পর্যাপ্ত সার ব্যবহার করতে পারছে না। খুচরা বাজারে ১৬ টাকা মূল্যের প্রতিকেজি ইউরিয়া ১৭-১৮ টাকায় এবং ১৫ টাকার এমওপি ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুর্গম গ্রামাঞ্চলে সারের দাম আরও বেশি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়ায় সর্বমোট ১৫ জন বিসিআইসি নিবন্ধিত ডিলার রয়েছে। কৃষকের সহজলভ্য করার জন্য খুচরা বিক্রেতা নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৬৭ জন। গ্রাম ও পাড়া এলাকায়ও খুচরা ডিলাররা সার বিক্রি করেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৭৫ মেঃ টন ইউরিয়া, বিএডিসি থেকে ২৫ মেঃ টন টিএসপি, ডিএপি ২০ মেঃ টন, এমওপি ৫০ মেঃ টন বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নাজনীন এন্টারপ্রাইজ থেকে ১৫০ মেঃ টন টিএসপি (মরক্কো), মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ থেকে ১০০ মেঃ টন এমওপি (চীন) সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ১৫ জন ডিলারকে উপবরাদ্দ হিসেবে এসব সার প্রদান করা হয়। ভর্তুকি মূল্যের আওতায় নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কৃষকের অভিযোগ, সার, অন্যান্য উপকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শে কৃষিবিভাগ হতে কৃষক পাওয়া যায় না। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সাধারণ কৃষকের চাষাবাদে সমস্যার খবর রাখেন না। ভর্তুকি মূল্যের আওতায় বিভিন্ন কৃষকের নিকট নির্দিষ্ট দরে সার পাওয়া নিশ্চিত করতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের কোন ভূমিকা নেই। জমির অবস্থার ওপর অনুমান এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করেই সার ও অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার করে কৃষক। কৃষকেরা জানান, ইরি-বোরো মৌসুমের চাষাবাদে সার দিতে হয় বেশি। অন্যন্য উপকরণ ব্যবহারে চাষাবাদে প্রচুর ব্যয় বাড়ে। ন্যায্যমূল্যে সারের সরবরাহ নিশ্চিত না থাকায় তারা বাজারে সার কিনতে তাদের ঠকানো হচ্ছে। কয়েকজন উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভর্তুকি মূল্যের সার যথাযথ মূল্যে কৃষকের হাতের নাগালে নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে রাখেন না। তাই তারা সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি করতে পারেন না। উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের পূর্বকোদালা মাসুপ্পের বিলের কৃষক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪ কানি (১ একর ৮০ শতক) জমিতে চাষ করেছি। রোপা দেয়ার সময় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার সার দিয়েছে। নিরানি শেষে আরও পাঁচ হজার টাকার সার ও অন্যান্য উপকরণ কিনেছি। ন্যায্যমূল্যে সার পাইনি।
×