ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ আদালতে দখলদারদের ১৩ মামলা

থমকে গেছে ভৈরব নদ দখলমুক্ত অভিযান

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৪ মার্চ ২০১৮

থমকে গেছে ভৈরব নদ দখলমুক্ত অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ হাইকোর্টের নির্দেশে থমকে গেছে যশোরের ভৈরব নদের দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে এসে ভৈরব নদের খনন কাজ উদ্বোধন করার পর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তৎপর হয় প্রশাসন। ২৮ জানুয়ারি স্থাপনা সরিয়ে নিতে ২৯৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেয়া হয়। তবে নোটিসের পর পরই অবৈধ সম্পদ রক্ষায় দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে সংঘবদ্ধভাবে তারা উচ্চ আদালতে যান। ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের ডজনখানেক উচ্ছেদ স্থগিতের নির্দেশ জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে। তাই সহসা শুরু হচ্ছে না যশোরবাসীর প্রাণের দাবি উচ্ছেদ অভিযান। আর আদৌ এসব প্রভাবশালীকে উচ্ছেদ করে ভৈরব নদ খনন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ভৈরব নদ খননে একনেকে অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পর অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিতের কাজ শুরু হয়। শুধু যশোর শহর অঞ্চলে ভৈরব নদের সীমানা নির্ধারণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় অবৈধ ১১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া নদের দুই ধারে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়। সব মিলে ভৈরবগর্ভে ও তার পারে সরকারী জমিতে গড়ে তোলা ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে গত ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিস দেয়া হয়। নোটিসে এক সপ্তাহের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু নোটিস পাওয়ার পর দিনই কয়েকজন নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে জৈলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। এ নিয়ে অন্তত ২০টি মামলা করা হয়েছে উচ্চ আদালতে। যার মধ্যে ১৩টি মামলার রায়ে উচ্চ আদালত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করেছে। ফলে আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে যশোর অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ভৈরবপারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ রেজায়ে রাব্বী বলেন, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিতের ১৩টি আদেশ আমাদের কাছে এসেছে। আরও কয়েকটি শুনানির অপেক্ষায়। এজন্য আগের নোটিস অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে যেসব স্থাপনা নিয়ে মামলা করা হয়নি তা উচ্ছেদ করা হবে। অনেকে অবশ্য তাদের স্থাপনা নিজেরাই সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। জানা যায়, ভৈরবের বহমানতা ফেরাতে সরকারী উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পর্যায়ক্রমে ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদ খননের কাজ শেষ হবে। এজন্য বুড়ি ভৈরব দখল করে গড়ে তোলা ২৯৬ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গত ২৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দখলদারদের নোটিস দেয়া হয়। নোটিস পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস উদ্বোধন করতে এসে ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের বছর ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভৈরব নদ খননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠির পর ভৈরব নদ খননে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। পরে ভৈরব নদের রিভার বেসিন এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভৈরব নদের এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। এজন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা প্রাক্কলন মূল্য ধরে ভৈরবের ১০ কিলোমিটার খনন করতে গত ২ সেপ্টেম্বর তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার মধ্যে নদের উজানে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৫৪ কিলোমিটার পর্যন্ত চার কিলোমিটার খননের জন্য প্রাক্কলন মূল্য ধরা হয় আট কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৫ টাকা ২০ পয়সা, ৫৮ কিলোমিটার হতে ৬১ কিলোমিটার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খননের জন্য আট কোটি সাত লাখ ৬৬ হাজার ১৬৭ টাকা এবং ৬১ থেকে ৬৪ কিলোমিটার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খননের জন্য প্রাক্কলন মূল্য ধরা হয় সাত কোটি ৫৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫৬ টাকা ত্রিশ পয়সা। ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা মূল্যের তিনটি কাজের দরপত্র দাখিলের শেষদিন ছিল গত ২৭ অক্টোবর। যেখানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের দরপত্র দাখিল করে। যাদের মধ্য থেকে দোলা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে খনন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×