ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অসম ব্যবহার ও ক্রমবর্ধমান চাপ প্রধান কারণ

প্রাচুর্য সত্ত্বেও বিশ্বে সুপেয় পানির ঘাটতি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৪ মার্চ ২০১৮

প্রাচুর্য সত্ত্বেও বিশ্বে সুপেয় পানির ঘাটতি বাড়ছে

সুপেয় পানির বিশাল ভা-ার সঞ্চিত রয়েছে। কিন্তু তা অসমভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং এর ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে চাপ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, বলেছে জাতিসংঘ। বিশ্বের ৯৭ শতাংশের বেশি পানি লবণাক্ত। এ লবণাক্ত পানির বেশিরভাগ মহাসাগর ও সাগরে। কিন্তু মিঠাপানির ভাল সরবরাহও রয়েছে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, প্রতিবছর প্রায় ৪২ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার নবায়নযোগ্য মিঠা পানি বৃষ্টি ও ভূপৃষ্ঠের পানি থেকে পাই। -খবর এএফপির এ হিসাবে প্রতিদিন প্রতিজনের জন্য পাওয়া ১৬ হাজার ২শ’ ১৬ লিটার পানি। যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রয়োজন চার গুণ উদাহরণস্বরূপ এ জল ব্যবহৃত হয় তাদের ব্যক্তিগত, গৃহস্থালী, শিল্প ও কৃষি কাজে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলেছে, সাধারণ খাদ্য ও জীবনযাপনে প্রতিদিন প্রতিটি লোকের জন্য তাদের খাদ্য তৈরি, পানীয় জল ও স্বাস্থ্যরক্ষা নিষ্কাশন কাজে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন। পৃথিবীতে প্রায় ৬০ শতাংশ মিঠা পানি আটকে রয়েছে কুমেরু অঞ্চলে। অবশিষ্ট পানি রয়েছে সেন্ট্রাল ও লাতিন আমেরিকায়। মধ্যপ্রাচ্য ও নর্থ আফ্রিকায় যে পরিমাণ পানি রয়েছে তার ৬০ গুণ বেশি পানি রয়েছে সেন্ট্রাল ও লাতিন আমেরিকায়। জাতিসংঘ ২০১৫ সালে বলেছে, আসল কথা হচ্ছে, বিশ্বের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন মেটানোর মতো পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। কিন্তু পানি যেভাবে ব্যবহৃত, নিয়ন্ত্রিত ও বণ্টিত হচ্ছে তার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে চলছে। পানির এ বৈশ্বিক সঙ্কটের অন্যতম কারণ এর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এফএও সম্প্রতি (২০১৪) এর এক উপাত্তে বলেছে, ৪৫টি দেশে পানির স্বল্পতা রয়েছে। বছরে প্রত্যেকের জন্য এ স্বল্পতার পরিমাণ ১ হাজার ঘনমিটারের কম। এ স্বল্পতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সাইপ্রাস ও মরক্কো। আলজিরিয়া, ইসরাইল বা কাতারসহ ২৯টি দেশে পানি স্বল্পতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ দেশগুলোতে বছরে প্রতিটি লোকের জন্য স্বল্পতার পরিমাণ ৫শ’ মিলিয়ন ঘনমিটারের কম। গ্রহের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর নির্ভরশীল এবং জাতিসংঘ সংরক্ষিত পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। ভারতের গঙ্গা অববাহিকা, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চল, ইতালি ও ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য উপত্যকা অংশে ভূতলস্থ পানি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে কয়েক দশকের মধ্যে। কানাডা, রাশিয়া ও পেরুর মতো দেশগুলোতে তাদের নবায়নযোগ্য মৃদুপানির মাত্র ১ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। ফ্রিটাউন, লাপাজ ও আউয়াদোউগৌয়ে ২০১৬ সালে অনাবৃষ্টির কারণে মারাত্মকভাবে পানির সঙ্কট দেখা দেয়। কেপটাউনে আজ যেমন প্রচ- পানি সঙ্কট চলছে। জাতিসংঘ বলেছে, ১৯৬৪ ও ২০১৪ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শহরায়ন, শিল্পায়ন ও পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও ভোগের কারণে বিশ্বব্যাপী মৃদু পানির ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে। শহরগুলোতে পানির চাহিদা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পানি সঙ্কটে কোন কোন অঞ্চলে দেশগুলোর জিডিপি ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে, অভিবাসনের প্রতি উদ্দীপনা যোগাতে পারে এবং সংঘাত সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এফএও বলেছে, বিশ্বে পানির ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি কৃষিতে। মাত্র একটি খাতেই এ ব্যয়ের পরিমাণ ৭০ শতাংশ এবং বেশি প্রয়োজন হয় সেচ কাজে। শিল্পতে ব্যবহার হয় ১৯ শতাংশ এবং গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার হয় ১১ শতাংশ। কিন্তু অঞ্চল ভিত্তিতে এর ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষিতে ব্যবহার করা হয় ৯১ শতাংশ। বিপরীতে গৃহস্থালীতে মাত্র ৭ শতাংশ এবং শিল্পের ব্যবহার হয় মাত্র ২ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ও উত্তর আমেরিকায় শিল্পতে ব্যবহৃত হয় সরবরাহকৃত মৃদু পানির অর্ধেকের বেশি।
×