ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যামাজন স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশ করছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৪ মার্চ ২০১৮

এ্যামাজন স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশ করছে

বিশ্বের অন্যতম টেক জায়েন্ট এ্যামাজন এবার স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাতে ঢুকছে। তবে, একা নয় সঙ্গে আরও দুটি বড় কোম্পানিকে নিয়ে। তার মধ্যে একটি হলো ওয়ারেন বাজেটের বার্কশায়ার হালএওয়ে এবং ব্যাংকিং জগতের দিকপাল জেপি মরগ্যান চেজ। জেপি মরগ্যানের চেয়ারম্যান জেপি ডিমোন গত ৩০ জানুয়ারি এ কথা জানিয়ে বলেন, আমাদের তিনটি কোম্পানির কাজে লাগানোর মতো বিপুল সম্পদ আছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সমস্যার এমন সমাধান বের করা যাতে করে আমাদের মার্কিন কর্মচারীবৃন্দ, তাদের পরিবার-পরিজন তথা সকল আমেরিকানের কল্যাণ হয়। তিন কোম্পানির এই যৌথ প্রতিষ্ঠানটির নাম এখনও দেয়া হয়নি। মুনাফা অর্জন প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হবে না বরং এটি হবে সেবামূলক। তবে যে ১২ লাখ লোক এই তিনটি কোম্পানিতে কাজ করছে বা কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে শুধু তারাই এই সেবা লাভ করবে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ও মহতী উদ্দেশ্য হবে এমন এক ভয়ঙ্কর সমস্যার মোকাবেলা করা, যা করতে গিয়ে রাজনীতিকরা কয়েক দশক ধরে কোণঠাসা অবস্থায় পড়েছিলেন। স্বাস্থ্যসেবায় তিন প্রতাপশালী কোম্পানির এক জোট হওয়া এক অসাধারণ ঘটনা। এই উদ্যোক্তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ও মাহাব ওরাকল বলে পরিচিত আমেরিকার সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন বিনিয়োগকারীর সততা ও নিষ্ঠা, আমেরিকার সর্ববৃহৎ ব্যাংকের আর্থিক পেশীশক্তি এবং টেক জায়েন্ট এ্যামাজনের নিত্যনতুন উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এ্যামাজন স্বাস্থ্য সেবা খাতে প্রবেশ করছে এমন সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পুরনো ধারার স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলোর মূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মার্কিন স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা সিলিকন ভ্যালির ঠিক বিপরীত। ব্যবস্থাটি ঘোরতর অদক্ষ ও মোটেও গ্রাহকবান্ধব নয়। ক্রেমলিনের বাইরে সবচেয়ে আশ্বস্ত যে প্রতিষ্ঠানটি আছে এবং যা টাকা-পয়সায় সয়লাব হয়ে আছে, তা হলো এই মার্কিন স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাত। আমেরিকানরা ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য পরিচর্যায় ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল, যা ছিল সে বছর জার্মানির পুরো জিডিপির কাছাকাছি। এই ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ১৮ শতাংশ। অন্যান্য উন্নত দেশ স্বাস্থ্য খাতে যে পরিমাণ অর্থ সচরাচর ব্যয় করে এটা তার দ্বিগুণ। অথচ এই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্তিটা এমন যে তার জন্য সে কোন সিইওর চাকরি চলে যাওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের আয়ু বাড়ার পরিবর্তে প্রকৃতপক্ষে হ্রাস পাচ্ছে। ছয় প্যারাগ্রাফের এক প্রেস রিলিজে বাফেট বলেছেন যে, স্বাস্থ্য পরিচর্যায় ক্রমোস্ফীত ব্যয় মার্কিন অর্থনীতিতে ক্ষুধার্ত ফিতাক্রিমির মতো কাজ করে। তবে, তিন যৌথ কোম্পানি মিলে কি করতে যাচ্ছে তার কোন নীলনক্সা ওতে দেয়া হয়নি। মার্কিন স্বাস্থ্য খাত যে কোথায় লক্ষ্যভ্রষ্টের মতো চলেছে তা দেখতে পাওয়া যায়। অনলাইনে কেউ যদি কোন ফার্নিচার কিনতে চায় বিক্রেতা তাকে বুঝিয়ে বলে, কেন সে তাকে যুক্তিসঙ্গত মূল্যে উন্নতমানের একটা সোফা দিতে পারে। সে বলবে যে, সাধারণ কেনাকাটায় যে অর্ধডজন মধ্যস্থতাকারী মাঝপথে থাকে যেমন রিটেইল ওয়্যারহাউজ, রিটেইল স্টোর, হোলসেল, ওয়ারহাউজ, হোলসেল শোরুম এবং এক্সপোর্ট এজেন্ট থাকে তাদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। অনলাইনে এদের কোন প্রয়োজন থাকে না বলে পণ্যের বিক্রিমূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে থাকে। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে এ ধরনের মধ্যস্থতাকারীর তালিকা দেয়া সম্ভব নাও হাতে পারে। তবে হার্ভার্ডের স্বাস্থ্যবিষয়ক অর্থনীতিবিদ ডেভিড কাটার হিসাব করে দেখিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য পরিচর্যার খরচের প্রায় এক-চতুথাংশ প্রশাসনের পেছনেই চলে যায়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ডিউক ইউনিভার্সিটি হসপিটালে শয্যাসংখ্যা ৯০০। অথচ বিলিং ক্লার্ক রয়েছে ১৩০০। এ ধরনের খবরের কোনটাই সংবাদ হিসেবে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আসে না, যদিও তা পরিবেশন হওয়ার যোগ্য। এ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেমস্্ বেজোস আমেরিকার তথা বিশ্বের অন্যতম ধনী। তিনি ওয়ানক্লিকের মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেও কাজ লাগিয়েই এমনটি হয়েছেন। তার কৌশলটি হলো প্রতিটি বাঁকে প্রতিযোগিতা কমিয়ে ফেলা এবং তার ফলে দামটা এত কমিয়ে আনা যাতে করে খদ্দেররা তুষ্ট থাকে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাস্থ্য পরিচর্যার খরচ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রাস্ফীতির চাইতেও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এক্ষেত্রে স্বস্তির তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যয় যেখানে ৪.৬ শতাংশ বেড়েছিল সেখানে ২০১৮ সালে সাড়ে ৫ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মচারী পিছু গড় জাতীয় ব্যয় দাঁড়াবে ১২ লাখ। তিন কোম্পানি যে একজোট হয়ে স্বাস্থ্য খাতে নেমেছে তাতে এমন মনে করার কারণ নেই যে তারা বদান্যতার মনোভাব থেকে এটা করছে। এ মুহূর্তে না হলেও তারা যথাসময়ে ভাল মুনাফা তুলে নিতে থাকবে। স্বাস্থ্য পরিচর্যা বাজার তা সেটা যুক্তরাষ্ট্র হোক আর অন্য খানেই হোক, অন্যতম বড় শিল্প আরও স্পষ্টভাবে বললে বৃহত্তম শিল্পগুলোর একটি। এ এক বিশাল বাজার। এই বাজার ক্রমশ বড় হতেই থাকবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তাই ডিজিটাল জায়েন্টদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে এর ওপর। গুগলের হোল্ডিং কোম্পানি এলকালেনট অন্তত পক্ষে ৯টি লাইফ সায়েন্স ও হেলথ্্ কোম্পানি চালাচ্ছে। কাজেই ধরে নেয়া হয়েছিল যে এ্যামাজনও এই খাতে আসবে। তবে, প্রত্যেকেই যেমনটি ধরে নিয়েছিল যে এ্যামাজন প্রচলিত পন্থায় স্বাস্থ্য খাতে এসে ঢুকবে- যেমন ফার্মেসি চেন কিনবে, তা কিন্তু হয়নি। এ্যামাজন আরও দুটি কোম্পানির সঙ্গে জোট বেঁধে এ কাজ করেছে। এই কৌশলটি ¯্রফে একটা খরচ কমানোর কৌশল। ধরা যাক এ্যামাজন, বার্কশায়ার ও জেপি মরগ্যানের ১০ লাখ কর্মচারীর এক-চতুর্থাংশ স্বাস্থ্য বীমার আওতাভুক্ত। এতে বছরে খরচ হয় গড়ে ১৯ হাজার ডলার। এর এক-তৃতীয়াংশ কর্মচারীরাই দিয়ে থাকে। ধরে নেয়া যাক যে এ্যামাজনের খরচ কমানোর যে কৌশল আছে তাতে এই খরচটা আরও ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে। এতে তাৎক্ষণিক হিসাবে তিন অংশীদার কোম্পানির বছরে ৩০ থেকে ৫০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। উপরন্তু এই ১০ লাখ কর্মচারী এ্যামাজনের নতুন খদ্দের হয়ে দাঁড়াবে। এ্যামাজনের ব্যবসা আরও জমজমাট হবে। সূত্র : টাইম
×