ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মশার দাপটে অস্থির রাজশাহী নগরবাসী নিধনে ব্যর্থ রাসিক ॥ অর্থ সঙ্কটের অজুহাত

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩ মার্চ ২০১৮

মশার দাপটে অস্থির রাজশাহী নগরবাসী নিধনে ব্যর্থ রাসিক ॥ অর্থ সঙ্কটের অজুহাত

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সরকারী বরাদ্দ থাকলেও অর্থনৈতিক সঙ্কটের অজুহাতে দীর্ঘদিন রাজশাহী নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে সিটি কর্পোরেশন। নগরীর উন্নয়ন কর্মকা-ও থমকে গেছে। কোন নাগরিক সেবাই দিতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এখন মশাও নিধন করতে পারছে না। কতদিন সিটি কর্পোরেশন ফগার মেশিন চালাতে পারেনি তার কোন হিসাব না থাকলেও নগরবাসীর অভিযোগ বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র হওয়ার পর সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেছে। দৃশ্যত কোন উন্নয়ন দেখাতে পারেনি। ছোটখাট কাজও হচ্ছে না। আর মশা নিধনেও নেই কোন উদ্যোগ। অথচ পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিকই বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ মার্চ সর্বশেষ ফগার মেশিনে স্প্রের মাধ্যমে মশক নিধন করা হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তেল সঙ্কটের অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় ফগার মেশিন। এখন ব্যবহার না করায় সব ফগার মেশিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে অলস সময় কাটান পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে নগরীজুড়ে মশার বংশ বৃদ্ধি পেলেও কোন উদ্যোগ নেয়নি সিটি কর্পোরেশন। দীর্ঘদিন নিধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রাজশাহী নগরীতে বেড়েছে সীমাহীন মশার দাপট। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না অব্যাহত মশার দাপটে। রাত-দিন সমানে মশার আক্রমণ সইতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দিনেরবেলায় বাসাবাড়িতে মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। কোনভাবেই নগরের প্রায় ৮ লাখ মানুষ নিস্তার পাচ্ছেন না মশার হাত থেকে। নোংরা-আবর্জনাময় ড্রেন পরিষ্কারের উদ্যোগ না নেয়ায় ক্রমেই বাড়ছে মশার দাপট। বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জানা যায়, প্রতিবছর মশক নিধনে নির্ধারিত বাজেট থাকলেও বাস্তবে মশক নিধনে কোন কার্যক্রম নেই রাজশাহী নগরে। মশার দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে স্বীকার করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন বলেন, মশক নিধনে আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সবখানেই যেন মশা আর মশা। সন্ধ্যার আগেই মশাদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন নগরবাসী। দিনেরবেলাতেও বাসাবাড়িসহ বিভিন্নস্থানে মশার অত্যাচার। নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল আলম বলেন, প্রতিনিয়ত মশার আক্রমণে এখন অতিষ্ঠ তারা। শোবার ঘর, রান্নাঘর, টয়লেট, গোসলখানা এমন কোন স্থান নেই যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করা যাচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন তো দিনেরবেলা মশারি না টাঙ্গিয়ে কেউ স্বস্তিতে শুয়ে বা বসেও থাকতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরাও মশার কামড়ে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে বসতে পারছে না। নগরবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন নগরীর আনাচে-কানাচে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না রাসিক। আবার বিভিন্ন পুকুরে জমা কচুরিপানাও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। নগরীর বিভিন্ন এলাকার এমনকি মধ্যনগরীর বিভিন্ন পুকুর ভর্তি কচুরিপানা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চলে নিত্যনতুন বাড়ি-ঘর গড়ে ওঠায় তার আশপাশের কিছু কিছু জলাবদ্ধ ভূমিতে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় মশা ও বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় জন্ম নিচ্ছে। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার এক কলেজছাত্র বলেন, কতদিন ধরে মশক নিধনের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি, তা মনে নেই। এদিকে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেও মশা নিধনে রাসিকের কোন কার্যক্রম দেখছে না নগরবাসী, যা নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। নগরীতে মশার যে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে তাতে মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। তাই সিটি কর্পোরেশনের আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না নগরবাসী। মানুষ মশার তা-ব থেকে মুক্তি পেতে আশ্বাস নয়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় জরুরী পদক্ষেপ কামনা করছেন নগরবাসী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নর্দমায় ওষুধ ছিটানো হলেও তাতে কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। অন্যদিকে উড়ন্ত মশা নিধনের জন্য ফগার মেশিন ব্যবহার করা যাচ্ছে না ওষুধ সঙ্কটের কারণে। ফলে মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যা সহ্য করতে পারছে না মানুষ। রেহাই পাচ্ছে না গৃহপালিত পশুও। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, শিশু ও বৃদ্ধরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। এদিকে মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে মানুষ ব্যবহার করছেন কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার, ম্যাটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতি। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতিকর দিক জেনে অথবা না জেনেই এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে মানুষ । নগরীর নর্দমাগুলো পরিচ্ছন্ন না করায় নর্দমার বদ্ধ পানি মশা উৎপাদনের নার্সারিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য নগরবাসীর। বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ খোদ কাউন্সিলরদের। নগরবাসীর অভিযোগ, মশার উৎপাত রাজশাহীবাসীর কাছে নতুন নয়। তবে এ বছরের ঘটনা হার মানিয়েছে আগের সব উদাহরণকে। নগরবাসীর অভিযোগ, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মশাও মারতে পারছেন না। এ কারণে বেড়েছে মশার উৎপাত। আর তাতে অতিষ্ঠ মানুষ। রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে এমন কোন এলাকা নেই যেখানে মশার উপদ্রব ছাড়া এখন মানুষ শান্তিত আছে। মশার অত্যাচার যেন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিন নেই, রাত নেই প্রতি মুহূর্তেই চলছে মশার অত্যাচার। রাসিকের মশক নিধন দফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুই বছর আগে রাসিক মশক নিধনের জন্য ওষুধ কিনলেও সেটি এখন আর নেই। এ কারণে মশক নিধনে তারা নামতে পারছে না। এ নিয়ে মেয়রের কোন উদ্যোগও নেই বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে রাসিক মেয়র ও বিএনপির নগর সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে পাওয়া যায়নি। তবে রাসিকের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু বলেন, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালীন ৫ বছর তিনি নগর পরিচ্ছন্ন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। সে সময় যথারীতি মশক নিধন পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনার অভাব, অর্থ সঙ্কটের অজুহাত ও মেয়রের গাছাড়া ভূমিকায় গত ৫ বছর মশক নিধন শুধু নয়, নগর পরিচ্ছন্ন বিভাগে কোন কাজ হচ্ছে না। তবে তার ওয়ার্ডে তিনি যথারীতি মশক নিধনসহ পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালু রেখেছেন বলে জানান। এ ব্যাপারে দৃষ্টি অবর্ষণ করা হলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবিউল আলম মিলু বলেন, অর্থ সঙ্কট রয়েছে। তারপরও রাস্তাঘাট ও ড্রেন পরিষ্কারের কাজ করা হচ্ছে।
×