ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৩ মার্চ ২০১৮

নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা

ক্তরাষ্ট্রের নেভাদার দক্ষিণাঞ্চলে বসতিহীন মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় চাঁদের বুকের জ্বালামুখের মতো শত শত গর্ত চোখে পড়বে। এগুলো স্নায়ুযুদ্ধের যুগের মার্কিন পারমাণবিক পরীক্ষার স্বাক্ষর। তবে ১৯৯২ সালে প্রেসিডেন্ট বুশ এমন পরীক্ষার ওপর স্থগিতাদেশ ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আর কোন পরীক্ষা চালায়নি। তবে ১৯৯৩ সাল থেকে জ্বালানি দফতরকে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ পেয়ে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চলানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন কমসেকম ৬ মাসের স্বল্প নোটিসে এমন পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে প্রথম বারের মতো নির্দেশ দেয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ফুট গভীরে বোমা বসানো ও যাবতীয় কারিগরি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য ছয় মাস সময় যথেষ্ট নয়। তারপরও প্রশাসন সহজ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রস্তুতির এই সময় বরাদ্দ করেছে। দেশের পরমাণু অস্ত্রগুলো ঠিকমতো আছে কিনা কিংবা নতুন ধরনের অস্ত্রগুলো কাজ করছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা এ পরীক্ষার উদ্দেশ্য নয়। বরং জানা গেছে উদ্দেশ্যটা রাজনৈতিক- রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে এটা দেখিয়ে দেয়া যে তারা কার গায়ে হাত দেয়ার কথা ভাবছে। ১৯৪৫ সালে জাপানে এ্যাটম বোমা ফেলার পর থেকে পারমাণবিক যুগ শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশক ধরে এ অস্ত্রের প্রতি সংযম প্রদর্শন করে আসছিল। শুধু তাই নয়, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় আমলে পরমাণু অস্ত্রসংখ্যা কমিয়েও ফেলা হয়েছিল। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই অস্ত্র বাড়ানো ও জাহির করার দিকে ঝুঁকেছেন। নেভাদা পরীক্ষা কেন্দ্রকে প্রস্তুত থাকার নোটিস দেয়া ছাড়াও গোটা পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প ঢেলে সাজানোর জন্য ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনায় স্বাক্ষর দিয়েছেন। তিনি ৩৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো নতুন পরমাণু অস্ত্র অনুমোদন করেছেন। ভ্রাম্যমাণ মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নে অর্থ সংস্থান করেছেন। গত ৩০ জানুয়ারি স্টেট অব ইউনিয়নের ভাষণে তিনি বলেন- আমাদের পরমাণু অস্ত্র ভা-ারের অবশ্যই পুনর্গঠন ও আধুনিকায়ন ঘটাতে হবে। অর্থাৎ, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু নীতিতে দ্রুত স্ট্যাটেজিক পরিবর্তন এসেছে যা তার বাগাড়ম্বরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র হ্রাস ও সীমিতকরণ চুক্তি নিউ স্টার্টের তিনি সমালোচনা করেছেন। ইরান চুক্তি বাতিলের অঙ্গীকার করেছেন। উত্তর কোরিয়াকে চরম পরিণতি বরণের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্পের টিম বলেছে যে, আগের প্রশাসনগুলোর অনুসৃত নীতি মন্দ ছিল। কারণ, অন্যান্য দেশ ওয়াদা ভঙ্গ করায় ও অপরমাণু দেশগুলো পরমাণু অস্ত্র করায়ত্ত করার নীতি অনুসরণ করে চলায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা বিপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মকর্তারা বলেন, এ অবস্থায় চুক্তি লঙ্ঘনের আক্রমণাত্মক জবাব দেয়া, নতুন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী চালু করা এবং বিশ্ববাসীকে মার্কিন পরমাণু অস্ত্রের ক্ষমতা সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়াই অন্যদের পরমাণু অস্ত্র কথায়ত্ত করার চেষ্টা বা সেই অস্ত্রভা-ার প্রসারিত করা থেকে বিরত রাখার সর্বোত্তম উপায়। ট্রাম্প প্রশাসনের নয়া নীতির জবাবে বিদেশী দেশগুলো কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। চীন ট্রাম্প সরকারকে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন স্নায়ুযুদ্ধ যুগের ঐতিহাসিক পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে।
×