রশিদ মামুন ॥ শুধু নগরের রাস্তার বাতিতে সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করলে দৈনিক ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কেবল বিদ্যুত সাশ্রয়ই নয় রাস্তার বাতির বিদ্যুত সোলার থেকে আসলে সিটি কর্পোরেশনকে আর রাস্তার বাতির জন্য বিল পরিশোধ করতে হবে না। এতে আর্থিকভাবে বিপুল পরিমাণ লাভবান হবে নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝপথে এসে হোঁচট খেয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। রাস্তার বাতিতে সৌর বিদ্যুতের সঙ্গে এখন সাশ্রয়ী এলইডি বাতি বসানোর জন্য প্রকল্প সংশোধন করছে পিডিবি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সৌর বিদ্যুত বসানোর উদ্দেশ্যটা ভাল ছিল। কিন্তু সৌর বিদ্যুত স্থাপনের নামে স্রেফ লুটপাট চলছে। মানহীন প্যানেল, ব্যাটারি আর লাইট স্থাপন করায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বসানোর পর পরই দেখা যায় বাতিগুলো আর জ্বলে না। ঠিকাদার এর মধ্যে তাদের টাকা তুলে নিয়েও চলে গেছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে যেভাবে এসব রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার তাও করা সম্ভব হয়নি। ফলে আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়েছে। সঙ্গত কারণে এখন নতুন করে চিন্তা করা হচ্ছে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, পিডিবি সাত সিটি কর্পোরেশনের রাস্তায় সৌর বাতি বসানোর জন্য ৩৬১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পটিতে বেশিরভাগ অর্থ ঋণ দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একই প্রকল্পটিতে পিডিবি, সিটি কর্পোরেশনও সরকারের সঙ্গে অর্থ বিনিয়োগ করে। প্রকল্পটি ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিবর্তে দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে টাকায় প্রায় ২০ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধির কথাও বলা হচ্ছে।
দ্বিতীয়বার সংশোধনী প্রস্তাবে বিদ্যুত বিভাগ বলছে প্রকল্পের আওতায় সোলার স্ট্রিট লাইটিং-এর পরিমাণ হ্রাস পেয়ে এলইডি লাইটিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের নাম সোলার/ননসোলার এলইডি করা হয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে বলা হয়েছিল ৭টি সিটি কর্পোরেশনে এক হাজার কিলোমিটার রাস্তায় সৌর বিদ্যুতের বাতি বসানো হবে। এতে করে রাতে এসব বাতির জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুত আর লাগবে না। সৌর বিদ্যুতে এসব আলো জ্বললে ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। বাতির উপরে বসানো সোলার প্যানেলে দিনে ব্যাটারি চার্জ হয়ে থাকবে। এই বিদ্যুতে বাতিগুলো রাতে জ্বলবে। এতে সিটি কর্পোরেশনকে আর রাস্তার বাতির বিদ্যুত বিল পরিশোধ করতে হবে না। এতে করে সিটি কর্পোরেশন গুলোর ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মাসিক বিদ্যুত বিল সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হয়।
পাইলট প্রকল্প হিসেবে হাতিরঝিল, গুলশান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নাবিস্কো, কাকরাইল, আরামবাগ ও বাংলামোটর এলাকায় সৌর বাতি বসানো হয়। কিন্তু বসানোর পরে বেশিরভাগ এলাকার বাতিই নষ্ট হয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় রাতের অন্ধকার দেখে আবার সিটি কর্পোরেশন বাতির ব্যবস্থা করেছে।
বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এসব জায়গাতে ৬০ ওয়াটের বাতি বসানো হয়েছিল। কিন্তু বাতিগুলো অপ্রতুল আলো তৈরি করে। আগে যেখানে সোডিয়াম বাতিগুলো ছিল ১৫০ ওয়াটের। এসব জায়গাতে অন্তত ৯০ ওয়াটের বাতি বসানো উচিত ছিল। কিন্তু ৯০ ওয়াটের বাতি জ্বালানোর জন্য যত বড় মাপের প্যানেল দরকার তা ল্যাম্পপোস্টের ওপর বসানো সম্ভব নয়। তবে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য কম দূরত্বে ল্যাম্পপোস্ট বসালে সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: