ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসমত আরা জুলী

প্রৌঢ়ত্বের অবসাদে থমকে থাকা নয়

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ২ মার্চ ২০১৮

প্রৌঢ়ত্বের অবসাদে থমকে থাকা নয়

আমাদের দেশের ৪৫-৫৫ বছরের নারীদের বিষণœতায় ভোগার হার অনেক বেশি । ঠিক এ সময়টায় ঋতুচক্র প্রাকৃতিক নিয়মে বন্ধ হয়ে যায় এবং জন্ম দেয় কিছু শারীরিক ও মানসিক উপসর্গের। আপনি যদি এ বয়সের হয়ে থাকেন এবং বিষণœতায় ভোগেন তাহলে কিছু কথা আপনাকে জানতে হবে। আচ্ছা আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করি ধসঢ়;ধঢ়ড়ং; আপনার কি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট আছে? ধসঢ়;ধঢ়ড়ং; আপনি নিশ্চয়ই বলবেন ধসঢ়;ধঢ়ড়ং;ন্ধাসঢ়; ধঢ়ড়ং; কারণ ওসব আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আপনার অজ্ঞতা। ভাবছেন কিসের মধ্যে কি পান্তাভাতে ঘি! আসলে শুরুটা করলাম এভাবে। এ বয়সের নারীদের সন্তানরা বড় হয়ে যায়, নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে, স্বামী ব্যস্ত থাকে তার কাজ নিয়ে, অনেকদিন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, নিজে চাকরিজীবী না। হয়ত এক সময় চাকরি করতেন কিন্তু সংসার সন্তানদের কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন মনে হয় জীবন বুঝি প্রায় শেষ! এক ধরনের অবসন্নতা সারা মন ছেয়ে থাকে, কিছু করতে ভাল লাগে না। সারাদিন কাটে শুয়ে-বসে। কিছুদিন ধরে খাওয়া-দাওয়ায় ভীষণ অরুচি, মেজাজও সে রকম খিটখিটে। কিছুদিন পরপর ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন নানা শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ নিয়ে, ঘুমের ওষুধ ডিপ্রেশেনের ওষুধ প্রতিদিনের সঙ্গী। একটু কী চেষ্টা করবেন নিজেকে বদলে ফেলার! একটু কী ভাববেন জীবন আসলে শেষ হয়ে যায়নি, জীবন নতুন করে শুরু করা যাবে। বয়সের হিসাব করা কী বন্ধ করবেন! বয়স বাড়ুক বয়সের মতো আপনি কাজ করুন আপনার মতো। একটি ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলুন সন্তানদের সাহায্যে। পুরনো বন্ধুদের খুঁজে বের করুন। কিছুদিনের মধ্যেই পেয়ে গেলেন কিছু পুরনো বন্ধু। মনে আনন্দ লাগছে কীনা বলুন! মাঝে মধ্যে ওদের সঙ্গে আড্ডা দিন, সিনেমা দেখতে যান, কোথাও ঘুরতে যান। হ্যাঁ দেখা যাচ্ছে আপনি আলমারির শাড়ি ও অন্য পোশাকগুলো নতুন করে গোছগাছ করছেন কারণ ক’দিন পরপর অনুষ্ঠান থাকে আর আপনার সামাজিক অনুষ্ঠানে যাবার হার আগের চেয়ে এখন বেড়েছে। বইপড়ার কথা কি চিন্তা করেছেন? হ্যাঁ একসময় অনেক গল্প উপন্যাস কবিতার বই পড়া হতো। কত বছর বই পড়েননি মনে করতে পারছেন না। শুরু করুন বই পড়া। যা ভাললাগে তাই পড়ুন। সেদিন একটা সাক্ষাতকারে একজন মহিলা বলেছেন, আমি আসলে আমার বাচ্চার জন্য বইমেলায় এসেছি। ঠিক আছে বাচ্চার জন্য এসেছেন, নিজের জন্য একটু আসুন, মনের আনন্দে বই কিনুন বই পড়ুন ক্ষতি কী! বই কিনতে কিনতে বই পড়তে পড়তে দেখবেন বাসায় অনেক বই জমা হয়ে গেছে। নিজের বাসার একপাশে একটা বুককর্নার করে বই সাজিয়ে রাখুন। ইউটিউবে কিংবা টিভি চ্যানেলে গান শুনুন। মানুন বা নাই মানুন গান আপনার মনোজগতে রাশি রাশি আনন্দ যোগ করতে পারে, গান নিজেকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। আচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রী তো আপনার আছে। স্কুলের ছোট ক্লাসের বাচ্চাদের পড়াতে পারবেন নিশ্চয়ই! গুছিয়ে একটা জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করে কয়েকটি স্কুলে জমা দিয়ে আসুন। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন আর ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন। দেখবেন কোন না কোন স্কুলে আপনার চাকরি হয়ে গেছে। তাই সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে সব গুছিয়ে, গৃহপরিচারিকার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যখন আপনি কর্মস্থলে ছুটবেন তখন একটা উত্তেজনা একটা আনন্দ আপনাকে ঘিরে থাকবে। যে চাকরিই করেন না কেন সেটা আন্তরিকতার সঙ্গে করবেন এবং স্কুলে ক্লাস নিতে গেলেও সেটার একটা প্রস্তুতি নিতে ভুলবেন না। আগে ছিল আপনার অখ- অবসর আর এখন চাকরি, ঘরকন্না, স্বামী সন্তানদের সময় দেয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সামাজিক অনুষ্ঠানের চাপ সব মিলিয়ে এত ব্যস্ততা আপনার অনেক সময় ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ফোন ধরতে পারছেন না। নিজের যতœ নিতে ভুলবেন না, মানে শারীরিক যতœ। এতক্ষণ বলেছি মানসিক যতেœর কথা এখন বলব শারীরিক যতেœর কথা। ঠিক সময়ে পরিমাণমতো খাবেন, দৈহিক পরিশ্রম করবেন, বিশ্রাম নেবেন সৌন্দর্যচর্চা করবেন। সুন্দর করে সাজবেন, রুচিসম্পন্ন পরিপাটি পোশাক পরিপাটি করে পরবেন, প্রয়োজন মনে করলে পার্লারে গিয়ে চুলের স্টাইল বদলে ফেলবেন। কোন এক সন্ধ্যায় পার্টিতে যাবার সময় আপনার সন্তানরা আপনার স্বামী বলে উঠবে য়ঁড়ঃ; তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে য়ঁড়ঃ;। স্বামী আড়ালে বলবে য়ঁড়ঃ; তুমি অনেক বদলে গেছ য়ঁড়ঃ;। আপনি তখন মুখটিপে হাসবেন । পার্টিতে যখন অনেকের নজর আপনার দিকে, আপনি সবার সঙ্গে মন খুলে হাসছেন কথা বলছেন আর গান ভেসে আসছে য়ঁড়ঃ; আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব য়ঁড়ঃ; তখন আপনি ভুলে যাবেন কত কতদিন কত কতপাতা ঘুমের ওষুধ আর ডিপ্রেশনের ওষুধ ছিল আপনার নিত্যসঙ্গী।
×