ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাহা ইসলাম

ফ্যাশনে তাঁতের শাড়ি

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২ মার্চ ২০১৮

ফ্যাশনে তাঁতের শাড়ি

ফাগুনের মাঝবেলায় চলে না বিলাসিতার রৌদ্রস্নান। আর ক’দিন পর আসছে চৈত্র মাস। বাংলা সনের সর্বশেষ এই মাসটিতে প্রকৃতির নিয়মে ধীরে ধীরে মুখ লুকোয় বসন্ত। সবশেষে চৈত্র সংক্রান্তির আয়োজন দিয়ে দুঃখ মোচন ঘটবে আর একটি বছরের। আর বছরের সেই অংশেও জায়গা করে নেয় নারীর পোশাকি ভাষা। এ ভাষা নারীর শাড়ি। নারীর শাড়ি হতে হয় পাতলা, কোমল, মসৃণ। সে চাহিদা মিল খায় ঐতিহ্যের তাঁতের কাপড়ে। আর সময়ের খাতিরে পরিবর্তন দেখা যায় রং ও বুনন নকশায়। লিখেছেন- বসন্তে আসে কবিদের মনের খোরাক। তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় এসেছে চৈত্র নিয়ে বিশেষত্ব। কবি বলেছেন, ‘প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস/তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।’ কবিতায় শেষ প্রহরে চৈত্রের রঙিন আলোয় প্রকৃতির সাজ ও মায়াবী নারীর সর্বনাশা চোখ মিলে একাকার। একইভাবে বসন্তের এই শেষদিকে জুড়ি নেই রঙিন তাঁতের শাড়ির। চৈত্রের রঙিন আলোর মতো নারীর পরনে চাই রঙিন শাড়ি। তাঁতের রঙিন শাড়ি নিয়ে ফ্যাশন হাউস হূর-এর ডিজাইনার লোপা বলেন, তাঁত আমাদের ঐতিহ্য ও অহঙ্কার। শতভাগ সুতি হওয়া নিঃসন্দেহে এ সময়ের আবহাওয়া উপযোগী পোশাক। বিশেষ বুনন পদ্ধতির কারণে এর মসৃণতাও থাকে অটুট। এখন একটু রঙিন কাপড়ই মানানসই, যা হাল ফ্যাশনেও যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। একরঙা তাঁতের শাড়িতে মিশে রয়েছে বাঙালী ঐতিহ্যের আদিম ইতিহাস। তা ধরে রাখে এ দেশের মেয়েদের প্রিয় পোশাকের অহঙ্কার। নব কর্মজীবী মিথিলা আক্তার মৌ বলেন, ‘শাড়ি আমাদের সত্যিই গৌরবের একটি পোশাক। এই পোশাক সবার চেয়ে আমাদের দারুণভাবে আলাদা করে দেয়। শাড়ি পরার অভ্যাস আমার অনেক আগে থেকে। আর সবচেয়ে পছন্দ তাঁতের শাড়ি। আমার মনে হয়, এই শাড়িতে বাঙালীর আত্মপ্রকাশ ঘটে সহজেই। তাঁতের মধ্যে রঙিন শাড়ি আমার বেশি পছন্দ। বিশেষ করে চৈত্র মাসে তো কথাই নেই। একরঙা রঙিন শাড়ি। একরঙা তঁাঁতের শাড়িতে এ সময়ের ডিজাইনে দেখা যায় লাল, হলুদ, কমলা, হলদে সবুজের প্রভাব। আঁচল বা পাড়ের অংশে ফুটে ওঠে আবার ভিন্ন কোন রঙ। তবে রঙিন তঁাঁতের বাইরেও চৈত্রের এই ক্ষণে সব সময় দেখা মিলবে সাদা বা সাদার মতো হাল্কা রং। রঙিন তাঁতের শাড়ি খুব জমকালো না হলেও খুবই মানানসই উৎসব ও অনুষ্ঠানে। বিশেষ করে এ সময়ের ঐতিহ্যবাহী উৎসব বা বিয়ের অনুষ্ঠানে তা খাপে খাপ। নেই বয়সের মানাও। সব বয়সী নারীদের জন্যই মানানসই তাঁতের শাড়ি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্নিগ্ধা বিশ্বাস জানান, ‘বাঙালী মেয়ে হিসেবে শাড়ির প্রতি আলাদা ভাল লাগা রয়েছে। কিন্তু তাঁতের শাড়ি অন্য রকম। এটি আরামদায়ক ও দেখতেও আলাদা। আমি তাঁতের শাড়ি পরতে ও ভালবাসতে শিখেছি মাকে দেখে। স্কুলজীবনে অনেক উৎসব বা অনুষ্ঠানে মায়ের শাড়ি পরে বের হতাম। মা অধিকাংশ সময়ই তাঁতের শাড়ি পরতেন, এখনও পরেন। মূলত তখন থেকেই এই শাড়ির ওপর আলাদা টান তৈরি হয়েছে আমার।’ অন্যান্য শাড়ির তুলনায় তাঁত যেমন আরামদায়ক তেমনি সাশ্রয়ী। তা ঐতিহ্য বহন করে কয়েক পুরুষ ধরে। পুরনো হলে আদরের ফোঁড়ে গাঁথা হয় সুন্দর কাঁথাখানা। তাঁতের শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ হতে হয় মানানসই। এক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে ব্লাউজের রঙের দিকে। আঁচল অথবা পাড়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ পরার চল অনেক যুগ আগে থেকেই দেখা যায়। সে রীতি অচল হয়নি এখনও। তবে বেশি কাজ করা ব্লাউজ বেমানান বলা যায় তাঁতের শাড়িতে। কিন্তু ব্লাউজ হতে পারে প্রিন্টেড। ব্লক বা বুনন প্রিন্টের বিভিন্ন ব্লাউজে ব্যবহৃত হতে পারে রকমারি মোটিফের ভিন্ন ভিন্ন নক্সা বা আসতে পারে গামছা প্রিন্টের মতো ঐতিহ্যবাহী কোন বুননশৈলী। রং মিলে গেলে ব্লাউজের ডিজাইন নির্ভর করে প্যাটার্নের ওপর। আর এই পোশাকের ক্ষেত্রে প্যাটার্নের মূল পরিবর্তন দেখা যায় গলা ও হাতায়। তাঁতের শাড়িতে বেশি ভাল লাগে রাউন্ড নেক ও সেমি-বোট নেক। হাতা হতে পারে লম্বা, এক-চতুর্থাংশ। তাঁতের শাড়ি পাওয়া যাবে দেশের অধিকাংশ পোশাক বাজারে। তবে ভাল মানের শাড়ি বেছে নেয়া জরুরী। কাপড়ে সুতার শক্তিমত্তা দেখে বোঝা যায় শাড়ির মান। ভাল শাড়িতে সুতার শক্তিমত্তা বেশি থাকে। হাতে ঘষলে রং বিকৃতির আশঙ্কা থাকে না। অধিকাংশ দেশীয় ফ্যাশন হাউসে পাওয়া যাবে তাঁতের শাড়ি। তবে মানভেদে বিভিন্ন বাজার ও হাউসের জন্য দামেরও পার্থক্য দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে ৩৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায় তাঁতের শাড়ি। আবার হাউসগুলোতেও মিলবে ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। মডেল : আফরিন পোশাক : উইমেন্স ড্রেসি ডেল মেকআপ : শাহীন ছবি : রাকিব
×