ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীদেবীর বিদায় ॥ ভারতীয় গণমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণ বোধেরও বিদায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ মার্চ ২০১৮

শ্রীদেবীর বিদায় ॥ ভারতীয় গণমাধ্যমের আত্মনিয়ন্ত্রণ বোধেরও বিদায়

বালিউড তারকা শ্রীদেবীর মৃত্যু সংবাদ ও এর ফলোআপ ভারতের গণমাধ্যমগুলো যেভাবে প্রচার করেছে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। দেখা গেছে, কিছু গণমাধ্যম তাদের চূড়ান্ত মাত্রাজ্ঞানই হারিয়ে ফেলেছে। এটা বোঝা ও কিভাবে তার মোকাবেলা করা উচিত তা তারা বুঝতে সক্ষম হয়নি। মহল বিশেষের কায়েমী স্বার্থ রক্ষায় ও অপরিপক্ব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে তারা আবির্ভূত হয়েছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। বলিউড সুপারস্টার শ্রীদেবীর মৃতুতে মিডিয়াগুলো যেভাবে প্রচার চালিয়েছে তাতে গণমাধ্যমগুলোর আত্মনিয়ন্ত্রণবোধেরও বিদায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুরো জাতি তার চলে যাওয়ায় শোকে স্তব্ধ হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে তার মৃত্যুকে নিয়ে অতিরঞ্জিত করে নিজেদের বক্তব্য দিতে থাকে। যা ভারতীয় সাংবাদিকতাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। বিভিন্ন চ্যানেলের ক্ষমতালিপ্সু মনোভাব এতে ফুটে উঠেছে। এখনই সময় একটি সাধারণ সত্যকে মেনে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমকে তাদের আগ্রাসী মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসার। এখানে আতঙ্ক যথেষ্ট নয় বরং বোঝা উচিত যে, যে কোন সত্যকে মেনে নিয়ে তা মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি এমন একটি গুরুতর অনুষ্ঠান থেকে বিরক্তিকর কিছু দেখতে পান তবে তাকে প্রত্যাখ্যান করবেন। এটাই স্বাভাবিক। সম্প্রতি ওয়েবসাইটগুলোতে সে খবরটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে তা হলো, শ্রীদেবীর মৃতুতে সাংবাদিকদের নিজস্ব বক্তব্য, দুরভিসন্ধিৎসু আলোচনা। এতে করে একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এমন একটি বিশেষ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেন তার মৃত্যুটি অস্বাভাবিক ছিল। তার প্রতি খুবই খারাপভাবে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। দৃশ্যমান ও ডিজিটাল নির্মাণগুলো আরও নির্মমতা দেখিয়েছে। এর একটি হলো বাথটাবের কাছে ওয়াইনের গ্লাস রাখা, বাথটাবে শুয়ে সাংবাদিকের প্রতিবেদন তৈরি করা ও একটি কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করে ফরেনসিক রিপোর্ট সম্পর্কে অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়ে প্রশ্ন করা। এতে করে সাংবাদিকদের দায়িত্ব, তাদের নৈতিকতা ও শিষ্টাচারের পতন ঘটছে। এ ধরনের মিডিয়া কভারেজের আগ্রাসনের জন্য সাধারণ মানুষ খুবই বিরক্ত হচ্ছেন। ফলে ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ ও বোধগম্য প্রতিবেদন তৈরি করা উচিত। এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি না করে বরং তা অতিক্রম করার চেষ্টা করা প্রয়োজন। অন্তত চ্যানেল ও তাদের দর্শকদের বিশ্বাস যারা সত্যিই একটি বাস্তব সত্য মেনে নিতে প্রস্তুত যে, দুবাইয়ের হোটেলের বাথটাবে ডুবে শ্রীদেবীর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত কি হয়েছে তা জানতে আগ্রহী। সাধারণভাবে সেলিব্রিটি ব্যক্তিদের মৃত্যুর কাহিনীতে তিনটি বিষয় থাকে যা সম্পাদকরা উজ্জ্বল করতে চান। এক মৃত্যুর সংবাদ, দুই মৃত্যুর ধরন এবং তিন মৃত্যুর রেফারেন্স কি তার ওপর। যা শ্রীদেবীর মতো লোকদের জন্য বিস্ময়করভাবে অর্জন করা খুবই কঠিন হয়ে যায়। মূলত মৃত্যুর সংবাদটি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে কভারেজ করা হয়েছে তাতে প্রশংসনীয় কোন দিক খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। বিস্তারিতভাবে মৃত্যুর পদ্ধতিতে রিপোর্ট করা সহজ নয়। সাম্প্রতিককালের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের যৌক্তিকতা হারিয়েছে। তারা প্রায়শই খবরের প্রথম দুটি মাত্রাকে পরিত্যাগ করে। ঘটনাগুলোকে নিয়ে আগের সপ্তাহের কর্মকা-কে বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তার সিনেমাটিক ব্যক্তিত্বকে ব্যবহার করে তারা হলুদ সাংবাদিকতা করে দুয়োধ্বনি তুলেছে। একে তৃতীয় মাত্রার সাংবাদিকতা বলা যায়। যাতে চ্যানেলগুলোর ক্ষমতালিপ্সু হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এখানে এটিই একটি সমস্যা। যারা এটি করেছিল তাদের চোখে স্পষ্টই টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) বাড়ানোর প্রবণতাই মনে ঠাঁই দিয়ে কাজ করেছিল। তারা যা করছিল তা একটি তদন্তমূলক সাংবাদিকতা। এতে ফরেনসিক কৃত্রিমতাকে বিশেষ মাত্রা দেয়া হয়েছিল। এই ফরেনসিক সাংবাদিকতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি দিতে গিয়ে পক্ষপাতমূলক কাজ করে ফেলেছেন সাংবাদিকরা। তারা কিছু ক্ষেত্রে একজন নারীর ব্যক্তিত্বকে ছাড়িয়ে তার নৈতিকতাকে বিচার করছেন। পাশাপাশি মদ খাওয়া ও পূর্বে বিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে করা, বিয়ের সময় সন্তানসম্ভবা হওয়া, প্লাস্টিক সার্জারি ও খাদ্যাভাস নিয়ে গুজব তৈরি করছেন।
×