ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবতার বার্তা নিয়ে শুরু হলো পথনাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২ মার্চ ২০১৮

মানবতার বার্তা নিয়ে শুরু হলো পথনাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে এলো অগ্নিঝরা স্বাধীনতার মাস মার্চ। আর পয়লা মার্চ থেকে মানবতার বারতা ছড়িয়ে শুরু হলো বাংলাদেশ পথনাটক উৎসব। চাই নিঃশঙ্ক চিত্ত/গড়ি মানব মুক্তির বৃত্ত প্রতিপাদ্যে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদবিরোধী বিষয়নির্ভর নাটকে সজ্জিত উৎসবটির আয়োজক বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। উৎসবে ঠাঁই পেয়েছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন নাট্যদলের ২৫টি নাটক। পঁচিশটি পথনাটকের সঙ্গে আয়োজনে বৈচিত্র্য ছড়াবে লোকজ আঙ্গিকের পরিবেশনা কবিগান, গাজীর গান ও ঘেটুগান। পথনাটগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই প্রখ্যাত নাট্যকার ও নির্দেশককে নিয়ে রেট্রোসপেকটিভ। বসন্ত বিকেলে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উৎসবে উদ্বোধনে উড়িয়ে দেয়া হয় একঝাঁক বর্ণিল বেলুন। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী ও পরিষদের সহসভাপতি মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন উৎসব আহ্বায়ক ড. মোহাম্মদ বারী। সভাপতিত্ব করেন পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে মামুনুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শিল্পের সবচেয়ে বড় ফসলটি হচ্ছে মঞ্চনাটক। অন্যদিকে গত শতকের আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় জনপ্রিয়তা পায় পথনাটক। সেই সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে পরিবেশিত হতো পথনাটক। পরবর্তীতে স্বৈরাচার কিংবা সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী বার্তার সঙ্গে সমসাময়িক নানা বিষয়কে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে পথনাটক। সেগুলো সমাদৃত হয়েছে দর্শকের কাছে। ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশে ছড়িয়েছে পথনাটক আন্দোলন। যদিও পথনাটকে নেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা। মূলত পথনাটকের শিল্পীর সবাই রাজনীতি সচেতন কর্মী। শিল্প কিংবা রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তারা পথনাটক করে। বক্তব্যের এ পর্যায়ে এসে তিনি দর্শকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা পথনাটুক দেখুন এবং এ বিষয়ে নিজেদের ভাবনা থাকলে সেগুলোর বিনিময় করুন। মান্নান হীরা বলেন, রাষ্ট্রীয় থেকে সামাজিক সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠাই হচ্ছে পথনাটকের ধর্ম। তাই পথনাটক হচ্ছে শিল্পের ভাষায় প্রতিবাদের মাধ্যম। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দুর্বৃত্তায়নসহ নানা সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। কারণ এই সরকারের ভেতরেও ঘাপটি মেরে আছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি। এই শক্তির বিরুদ্ধে তৎপর হতে হবে। অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে ভূমিকা রাখতে হবে সংস্কৃতিকর্মীদের। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে পরিবেশিত হয় এদিনের বিশেষ আয়োজন কবিগান। লোকজ আঙ্গিকের অনবদ্য পরিবেশনটি উপস্থাপন করে খুলনার বাটিয়ার্টা চারণকবি সদানন্দ সরকার ও তাঁর দল। প্রথম দিনের সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় শহীদ মুনীর চৌধুরী রচিত পথনাটক কবর। সময় নাট্যদলের প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন আকতারুজ্জামান। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত চলমান উৎসব প্রতিদিন শুরু হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। আজ শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন পরিবেশিত হবে চারটি পথনাটক। রাজরাজরার খেল নামের নাটক পরিবেশন করবে কুমিল্লা নাট্যদল। সুশোভন চৌধুরী রচিত প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী নাছির উদ্দীন। সরকার হায়দারের রচনা ও নির্দেশনায় পঞ্চগড়ের ভূমিজ পরিবেশন করবে চিঠি নামের পথনাটক। সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায় উপস্থাপন করবে সগীর মোস্তফা রচিত ও আনিসুর রহমান সেলিম নির্দেশিত নাটক গুলমত এ্যান্ড গং। এইচ আর অণিক রচিত ও নির্দেশিত যদি কিছু মনে না করেন নামের নাটক পরিবেশন করবে চন্দ্রকলা থিয়েটার। এদিনের বিশেষ আয়োজনে থাকবে রূপবান শীর্ষক ঘেটুগান। অনিল রায়ের নির্দেশনায় পরিবেশনাটি উপস্থাপন করবে মানিকগঞ্জের গ্রামবাংলা নাট্যসংস্থা। শনিবার উৎসবের তৃতীয় দিনে থাকছে মমতাজউদ্দীন আহমদ রেট্রোসপেকটিভ। পরিবেশিত হবে বরেণ্য এই নাট্যকার রচিত বিভিন্ন নাট্যদলের চারটি পথনাটক। এদিন মমতাজউদ্দীনের নাটক নিয়ে আলোচনা করবেন ড. রতন সিদ্দিকী। উৎসবের সমাপনী দিন ৭ মার্চ থাকছে মান্নান হীরা রেট্রোসপেকটিভ। এদিন পরিবেশিত হবে মান্নান হীরা রচিত ও নির্দেশিত চারটি পথনাটক। এদিনের রেট্রোসপেকটিভে আলোচনা করবেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক।
×