ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২ মার্চ ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ উৎসব অনুষ্ঠানের শহর ঢাকা। বৃষ্টিহীন নাতিশীতোষ্ণ শহরে কত যে আয়োজন! একটি শেষ হতে না হতেই আরেকটির শুরু। বৃহস্পতিবার ছিল দোল পূর্ণিমা। রঙের উৎসব। আবির মাখার দিন। এ উৎসবটিকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আবির এসেছে বলে জানা যায়। এদিন অন্যান্য উৎসবের মতোই মেতেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আনন্দঘন আয়োজন ছিল চারুকলায়। এখানে রঙেরই কারবার। আগামী দিনের শিল্পীরা লাল-নীল-হলুদ-সবুজ সব রঙ নিয়ে দারুণ খেলেছেন। প্রতিযোগিতা করে রঙ মাখিয়েছেন একে অন্যের মুখে। সে কী ছোটাছুটি। হুল্লোড়। কাউকে চেনা যাচ্ছিল না। রঙে ঢাকা পড়েছিল প্রকৃত চেহারা। গালে কপালে এমনকি চুলে শুকনো গুঁড়ো রং মেখে নিয়েছিলেন সবাই। চারুকলা অনুষদের সবুজ চত্বরে দুপুরে দোল উৎসবের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। রং মাখানোর পাশাপাশি ছিল গান-বাদ্য। ঢোল বাদনের সঙ্গে সঙ্গে চলে নাচও। পরে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শাহবাগ টিএসসি হয়ে চারুকলায় এসে শেষ হয় দোল উৎসব। ঢাকেশ্বরী মন্দিরেও ছিল রঙের খেলা। মুখ থেকে কেউ আর রং ধুয়ে মুছে সাফ করেননি। সারাদিনই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় দেখা গেছে রঙে ঢাকা মুখগুলোকে। এর আগে বুধবার শেষ হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বিপুল বিশাল আয়োজন। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিল। এর পর টানা ২৮ দিন ধরে চলে প্রাণের মেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার আয়োজন করা হয়। শহর ঢাকার বইপ্রেমী মানুষ প্রতিদিনই ছিলেন আয়োজনটির সঙ্গে। পছন্দের বই সংগ্রহ করেছেন। চলেছে গল্প আড্ডা। এক মাসের এই অভূতপূর্ব আয়োজন শেষ হলেও, রেশ কাটেনি। এবারের মেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মেলায় নতুন বই এসেছে ৪ হাজার ৫৯১টি। এই তথ্যটি মোটামুটি অবাক করা। এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ছিল ৭০১টি। উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ৬৪৩টি। প্রবন্ধগ্রন্থ ২৫৭টি। আর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ১ হাজার ৪৭২। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই। এর বাইরেও নানা বিষয়ের উপর বই লেখা হয়েছে। সমাপনী দিনে বই বিক্রির একটি হিসাব দেয়ার চেষ্টা করেছে আয়োজক বাংলা একাডেমি। মেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ তার প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি মোট ১ কোটি ৫১ লাখ ২৪ হাজার টাকার বই বিক্রি করেছে। স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং শেষ দিনের সম্ভাব্য বিক্রির পরিমাণ যুক্ত করলে এবার বইমেলায় মোট ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি। অবশ্য একাডেমির এই হিসাব নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি। বিদ্যাবুদ্ধির চর্চা করেন যারা তারা বলছেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার আলাদা তাৎপর্য। বাঙালীর ভাষা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসটিকে এই মেলা ধারণ করে আছে। এখানে বই বিক্রি হবে তো বটেই। কিন্তু বিক্রিটাই মুখ্য হতে পারে না। কেনা বেচার বিষয়টিকে প্রধান করলে সেটি বাজারে পরিণত হবে। বাণিজ্যমেলায় পরিণত হবে বইমেলা। সমাপনী দিনের বক্তৃতায় একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান যেভাবে টাকার অঙ্কটিকে প্রকাশ করেছেন তাতে মনে হয়েছে, তিনি টাকাটাকেই মুখ্য জ্ঞান করছেন। অনেক টাকার বিকিকিনিকে সাফল্য হিসেবে দেখাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এ কাজ প্রকাশকরা করলে কিছুটা মানানসই হতো। একাডেমির মহাপরিচালক তাদের কাজ করে দিলে মানুষের কাছে মেলা সম্পর্কে ভুল বার্তা যায় বলে মনে করছেন তারা। এদিকে, প্রকাশকরাও সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা বলছেন, আমাদের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, স্টল, প্যাভিলিয়ন আমাদের। কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে তা তো আমাদের জানার কথা। একাডেমি কী করে জানলো? মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রকাশকদের অনুপস্থিতিতে এমনই সমালোচনা করছেন তারা। বলছেন, এই হিসাব সঠিক নয়। কোন কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই বিক্রির হিসাব দিয়ে গোটা মেলায় বিক্রি হওয়া বইয়ের হিসাব করে ফেলা অতি উৎসাহ বলে মন্তব্য করেছেন প্রকাশকরা। উত্তাল সংগ্রামের মার্চ শুরু হলো। একাত্তরের এই মাসে স্বাধীনতার চেতনায় বাঙালীকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মহান নেতার ৭ মার্চের ভাষণ এখনও যেন কানে বাজে। পরবর্তিতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেন শেখ মুজিব। ঐতিহাসিক মার্চের প্রথম দিন থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শুরু হয়েছে পথনাটক উৎসব। উদ্বোধনী দিনের বিশেষ আয়োজনে ছিল কবিগান। পরিবেশন করে চারণকবি সদানন্দ সরকার ও তার দল। মুনীর চৌধুরীর লেখা নাটক ‘কবর’ নিয়ে ছিল সময় নাট্যদল। নির্দেশনায় ছিলেন আকতারুজ্জামান। পথনাটক পরিষদের আয়োজন চলবে টানা কয়েকদিন।
×