ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ মার্চ ২০১৮

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পেল যে মাসে, তার নাম মার্চ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। কয়েক শতাব্দীর ঔপবিনেশিক দুঃশাসনের পাথার পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে ‘পাকিস্তান’ নামে বাঙালীর ভাগ্যে যা জুটেছে, তা ভিন্নরূপে আরেক অপশাসন, নির্যাতন আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। বাঙালী জাতি ওই শোষণ-বঞ্চণার হাত থেকে মুক্তি পেতে নেমে পড়ে রাজপথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সীমাহীন দেশপ্রেম, তুলনাহীন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসীম সাহস, দূরদর্শিতা আর দৃঢ় নেতৃত্বে এই পলল ভূখ- একাত্তরের মার্চে এসে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অগ্নিঝরা মার্চের দ্বিতীয় দিন আজ। একাত্তরের এই দিনে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদে। এদিন উড়ানো হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এর আগের দিন ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান এক ফরমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। তার সেই অবৈধ এবং স্বৈরাচারী ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালী জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করা ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোন বিকল্প নেই। পাকিস্তানী শাসকদের এই মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্ররা এদিন বটতলায় এসে জমায়েত হন। বটতলার সমাবেশে ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারী ঘোষণার ধিক্কার জানানো হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বটতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে। এদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আহূত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি চালায় আওয়ামী লীগ। আর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে মুক্তিপাগল বাঙালীর মধ্যে এক অন্য ধরনের গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। পাক হানাদার বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের ললাটেও তখন চিন্তার বলিরেখা। ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী স্বাধীনতার ডাক দেবেন? দিলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- এ নিয়ে পুরো পাকিস্তানেই তোলপাড় চলছিল। একদিকে জনসভার প্রস্তুতি, অন্যদিকে গোটা বাংলাদেশেই উত্তাল আন্দোলন-বিক্ষোভে রীতিমত অগ্নিগর্ভ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি বাঙালীর চোখে-মুখে একই প্রত্যাশা- পাকিস্তানী দখলদারদের হটিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনা। আর সেই লক্ষ্য পূরণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর দামালছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অগ্নিঝরা মার্চ স্মরণে প্রতিদিনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচী পালন করছে। একাত্তরের সূচনা দিন বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে আলোচনা সভার। আজ ২ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
×