ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা বৃদ্ধি, ভারি অস্ত্রের মহড়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ মার্চ ২০১৮

তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা বৃদ্ধি, ভারি অস্ত্রের মহড়া

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ হঠাৎ কী হয়ে গেল- তা বুঝতে না দিয়ে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার আকস্মিকভাবে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বৃহস্পতিবার থেকে। এছাড়া মাইকিং করছে যাতে সে দেশের শূন্যরেখা থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গারা চলে যায়। এর পাশাপাশি সেনারা ভারি অস্ত্রশস্ত্রের মহড়াও শুরু করেছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিয়ানমার সেনারা ৮/১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের এপার ও ওপারের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। এছাড়া শূন্যরেখায় বর্তমানে অবস্থানরত সাড়ে তিন সহস্রাধিক রোহিঙ্গার মাঝে জীবন বাঁচানোর আতঙ্কও সৃষ্টি হয়েছে। তুমব্রুর এ জিরো লাইনে সাড়ে ছয় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা গত প্রায় ছয় মাসের কাছাকাছি সময় ধরে অস্থায়ী বস্তি বানিয়ে অবস্থান নিয়েছিল। সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাবে। এরপর থেকেই সেখান থেকে রোহিঙ্গাদের পলায়ন শুরু হয়। তারা হয় বাংলাদেশমুখী। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে। অবশিষ্ট রয়েছে ৩ হাজার। এ অবশিষ্টদের বিতাড়নে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এত লম্ফঝম্ফ কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তুমব্রুতে সেনা মোতায়েনের যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে তাতে অবশিষ্টরাও শূন্যরেখা থেকে বাংলাদেশে যে চলে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এদিকে তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও ভারি অস্ত্রের মহড়া তথা যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বিপরীতে বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) নজরদারি বাড়িয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তের এ পরিস্থিতিতে তাদেরও প্রস্তুতি রয়েছে। সীমান্তের আচমকা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ইতোমধ্যে পত্র দেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান। তুমব্রু এলাকার এপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেখানে তিন নোবেল বিজয়ী নারীর গমন এবং ওপারের জিরো লাইন থেকে আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গাকে ডেকে এনে কথা বলাসহ যাবতীয় তথ্য বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের গা জ্বালা শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বে জিরো লাইনে অবস্থানকারী এসব রোহিঙ্গার নিজ দেশের অভ্যন্তরে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েও তা তারা কার্যকর করেনি। উল্টো এসব রোহিঙ্গাকে মাইকিং করে চলে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুংকার দিয়ে আসছিল। সেনারা রোহিঙ্গা বস্তিতে এসেও নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে তিন সহস্রাধিক পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অবশিষ্ট ৩ হাজার রোহিঙ্গা শূন্যরেখা না ছাড়ায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে তাদেরকে তাড়ানোর তৎপরতা চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শূন্যরেখা বরাবর সেনা মোতায়েন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। হঠাৎ করে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে তারা কেন এ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় অবশিষ্ট রোহিঙ্গাও বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সীমান্তের বসবাসরতদের পক্ষে জানানো হয়েছে, ওপারের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে অবস্থান নিয়েছে সৈন্যরা। ভারি অস্ত্রের পাশাপাশি হালকা অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের দিকে তাক করে আছে মিয়ানমার সেনারা। এ পরিস্থিতি দেখে শূন্যরেখার বাংলাদেশ অংশে বিজিবি টহল জোরদার করতে বাধ্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা সাতটি ট্রাকযোগে তুমব্রু সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে অবস্থান করে। সীমান্ত রেখা সংলগ্ন ইতোপূর্বে তৈরি করা ব্যাঙ্কারগুলোতেও সেনারা অবস্থান নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাদের সঙ্গে তাদের সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্যরাও টহল দিচ্ছে। বিজিবি সূত্রে জানানো হয়, সীমান্ত আইন অনুসারে জিরো লাইন বাদ দিয়ে শুধু সীমান্তরক্ষীদের টহল দেয়ার নিয়ম রয়েছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনী অবস্থান বা টহল দিতে পারে না। এক্ষেত্রে মিয়ানমার এসব আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের পাশাপাশি ভারি অস্ত্রের মহড়াও দিতে শুরু করেছে। এ অবস্থাতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শূন্যরেখায় আশ্রয় গ্রহণকারী কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশের খবর মেলেনি। তুমব্রু এলাকায় নোবেল বিজয়ী তিন নারী সফরের একদিন পরই মিয়ানমার সরকার তুমব্রু সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারি অস্ত্রশস্ত্র মজুদের পাশাপাশি তিন শতাধিক সেনার সমাবেশ ঘটেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে শতাধিক সেনা সদস্য কাঁটাতার লাগোয়া বাংলাদেশ অংশের দিকে অস্ত্র তাক করে অবস্থান গ্রহণ করেছে। বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানান, ওপারে মিয়ানমার পক্ষ মাঝে মাঝে এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। তাদের দৃষ্টিতে এটি নতুন কিছু নয়। এরপরও এপারেই বিজিবি সদস্যদের কঠোর নজদারির অবস্থানে রাখা হয়েছে। এদিকে খবর পাওয়া গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় মিয়ানমার সেনাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বাকবিত-া হয়েছে। সেনারা রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকলে রোহিঙ্গারা কাঁটাতারের কাছে গিয়ে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। পরে সেনা সদস্যরা সেখান থেকে দূরে সরে গেলে রোহিঙ্গারা পুনরায় বস্তিতে ফিরে আসে। প্রত্যাবাসনে আগ্রহী আরেক রোহিঙ্গা হত্যা ॥ উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আগ্রহী এক রোহিঙ্গাকে কিরিচ দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভোরে বালুখালী পার বাজারের অদূরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ এ ঘটনা ঘটে। নিহত রোহিঙ্গার নাম নুরুল বশর। ইতোপূর্বেও প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে।
×