ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ১ মার্চ ২০১৮

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

বিষয় ॥ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় তৃতীয় অধ্যায় প্রস্তুতি-৪ ॥ সৃজনশীল অনুশীলন শিক্ষক হাইমচর কলেজ, হাইমচর-চাঁদপুর মোবাইল : ০১৭৯৪৭৭৭৫৩৫ ৪। প্রতিমা বাণিজ্য মেলা থেকে কয়েকটি শাড়ি ও নকশিকাঁথা কিনে। শাড়িগুলোর মধ্যে কোনটি মোটা আবার কোনটি মিহি। কেনাকাটা শেষ করে সেখানে সে বাউল শিল্পীদের পরিবেশিত গানশুনে মুগ্ধ হয়। ক) বাঙালির মননের প্রতীক কী? খ) বাঙালির প্রথম সাহিত্য কর্মের ব্যাখ্যা দাও ? গ) প্রতিমার ক্রয়কৃত জিনিসগুলো কোন শিল্পের অর্ন্তগত? ব্যাখ্যা কর। ঘ) ”উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পগুলো আলাদা হলেও সবগুলো শাখাই মানুষের সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে”-যথার্থতা নিরূপণ কর। ক) উত্তর ঃ বাংলা একাডেমিকে বাঙালি জাতির মনেনের প্রতীক বলা হয়। খ) উত্তর ঃ বাঙালির প্রথম যে সাহিত্য কর্মের সন্ধান পাওয়া যায় তা চর্যাপদ নামে পরিচিত। পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রথম নেপালের রাজ দরবার থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন। তারই সম্পদনায় ৪৭টি পদবিশিষ্ট পুঁথিখানি হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গলা ”বৌদ্ধগান ও দোঁহা” নামে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। পন্ডিতগণ চর্যাপদের ভাষাকে ’আঁধারি বা সান্ধ্য ভাষা’ নামে অবহিত করেছেন। রচিয়তাদের মধ্যে লুই পা, কাহ্ন পা, ভুসুকু পা, কুক্কুরি পা, হর পা অন্যতম। গ) উত্তর ঃ প্রতিমার ক্রয়কৃত জিনিসগুলো দৃশ্যশিল্পের অর্ন্তগত। বাংলার বিরাজমান দৃশ্যশিল্পগুলো বেশিরভাই বস্তুগত শিল্প বা সংস্কৃতি হিসেবে পরিচিত। দৃশ্যশিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো তাঁত শিল্প,যার সুনাম বহুকালের। পুন্ড্রুদেশের বা বর্তমান উত্তবঙ্গের উৎপাদিত দুকূল কাপড় ছিল শ্যামবর্ণ ও মণির মতো মসৃন ও মিহি।অন্যদিকে ক্ষৌম বস্ত্র ছিল একটু মোটা। সেকালে উৎপন্ন দুকূল, পত্রোর্ণ, ক্ষৌম ও কার্পাস কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। এছাড়া বিখ্যাত আরো কিছু কাপড়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল খাসা, এলাচি, চৌতা, হামাম, উতানি, সুজিজ, কোসা, মলমল, দুরিয়া, শিরবান্দ ইত্যাদি। সেই সাথে বাংলার নকশিকাঁথাও বিখ্যাত ছিল। উদ্দীপকে দেখা যায়,প্রতিমা বাণিজ্য মেলা থেকে কয়েকটি শাড়ি ও নকশিকাঁথা কিনে। শাড়িগুলোর মধ্যে কোনটি মোটা আবার কোনটি মিহি। বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বলা যায়, যা প্রাচীন বাংলার দুকূল ও ক্ষৌমবস্ত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, প্রতিমার ক্রয়কৃত জিনিসগুলো দৃশ্যশিল্পের অর্ন্তগত। ঘ) উত্তর ঃ উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পগুলো তথা দৃশ্যশিল্প ও সঙ্গীতশিল্প বৈশিষ্ট্যগতভাবে আলাদা হলেও সবগুলো শাখাই মানুষের সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে। আমার মতে উক্তিটি যথার্থ। সাধারণত মানুষের জীবনযাপন প্রণালী,ব্যবহৃত জিনিসপত্র,আচার-অনুষ্ঠান,সৃষ্টি সবকিছুই তার সংস্কৃতির অংশ। তবে সৃষ্টিশীল কিছু কাজ জাতির চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীল প্রতিভার পরিচয় বহন করে। উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃশ্য ও সংগীত শিল্প তেমনই শিল্পকলার উদাহরণ। আবহমানকাল থেকেই বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনপ্রণালী,যেমন বাসস্থান তৈরি,পোশাক,অভ্যাস সমস্ত কিছু ব্যবহারে সৃজনশীলতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,গ্রামে সাধারণ মাটির তৈরি ও বাঁশের ছাউনিযুক্ত দোচালা,চারচালা ঘর যেমন আছে,তেমনি টেরাকোটার নান্দনিক ঐতিহ্যও আছে। যা বাংলার মানুষের মেধা ও মননের পরিচয় দেয়। এছাড়া কাপড় বুনন, স্থাপত্যশিল্প, নকশিকাঁথা, কারুশিল্প, শঙ্খের কাজ প্রভৃতিতেও বাংলার মানুষের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। এদেশের মানুষ দৈনন্দিন জীবনাচরণ, সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতন প্রভৃতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সাহিত্যকে বেছে নিয়েছে। চর্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গলকাব্য, কিংবা পুঁথিকাব্যে প্রাচীন বাংলার সমাজচিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে উনিশ শতকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের সূচনা সাহিত্য শিল্পকে অনন্য মাত্রা প্রদান করেছে। এছাড়া সঙ্গীত শিল্পকেও বাংলার সাধারণ মানুষ প্রাত্যহিক সুখ-দুঃখ,ভাব প্রকাশ কিংবা আনন্দ উদযাপনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় দৃশ্য,সাহিত্য কিংবা সঙ্গীত শিল্প প্রতিটিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আলাদা তবে সৃজনশীল পরিচয় বহন ও মেধার বিকাশে এদের ভূমিকা অপরিসীম।
×