ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক নক্ষত্রের পতন

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ১ মার্চ ২০১৮

এক নক্ষত্রের পতন

বছরটা ১৯৮৯। পরপর ছবি আসছে দু’জনের। ‘চালবাজ’-এর পরে সানি দেওল বলেই দিলেন, শ্রীদেবীর সঙ্গে আর কাজ করবেন না। কারণ ছবিতে শ্রীদেবী থাকলে নায়কের কিছু করার থাকে না। শ্রীদেবী নিজে আবার তখন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ছবির প্রস্তাব ফেরাচ্ছেন। কারণ যেখানে মূল আকর্ষণ নায়ক থাকবেন সেখানে তার উৎসাহ নেই। আটের দশকের স¤্রাট এবং স¤্রাজ্ঞীর তখনও পর্যন্ত একসঙ্গে মাত্র দুটো ছবি, ‘ইনকিলাব’ আর ‘আখরি রাস্তা’। দুটো ঘটনাই বলে দেয়, শ্রীদেবীর বিপ্লবটা ঠিক কোথায়। সেই সময়ে অমিতাভর পরেই ছিলেন তিনি। এমনিতে তিনি মুখচোরা ছিলেনÑ কিন্তু ক্যামেরা চালু হলেই হয়ে উঠতেন বিদ্যুৎলতা! ফ্রেমে থাকলে চোখ ফেরানো অসম্ভব। শ্রীদেবী তামিলনাড়ুুতে ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী। তার এক বোন ও ২ সৎ ভাই আছে। ১৯৯৬ সালে তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক বনি কাপুরকে বিয়ে করেন। তাদের দুই মেয়ে জানভি এবং খুশি। ১৯৭৯ সালে সোলভা সাওয়ান চলচ্চিত্র দিয়ে শ্রীদেবীর হিন্দী চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। চার বছর পর তিনি জিতেন্দ্রর বিপরীতে হিম্মতওয়ালা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। চলচ্চিত্রটি ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় এবং সে বছরের অন্যতম সেরা ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। হিম্মতওয়ালা চলচ্চিত্রের ‘ন্যায়নোঁ মেঁ সাপনা’ গানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই চলচ্চিত্রের সাফল্যের ফলে শ্রীদেবী বলিউডে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন এবং তার বিখ্যাত ‘থান্ডার থাইস’ উপনাম অর্জন করেন। দুবাইতে পারিবারিক একটি বিয়েতে যোগ দিতে গিয়ে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলিউড অভিনেত্রী শ্রীদেবী। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্বামী বনি কাপুর এবং তার ছোট মেয়ে খুশি। কিন্তু আনন্দের সেই অনুষ্ঠান হঠাৎই বদলে গেল শোকে। বিয়ের অনুষ্ঠানেও হাসি-খুশিই ছিলেন অভিনেত্রী। শ্রীদেবীর মৃত্যুসংবাদে বলিউডের একের পর এক ব্যক্তিত্ব তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রত্যেকেই এই খবরে স্তম্ভিত। খবরটা প্রথম শোনার পরে ক্রিয়াঙ্গনে কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি তাদের কেউই। হতভম্ব হয়ে যান মর্মান্তিক এই সংবাদে। যে খবর শোনার পরে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। শ্রীদেবীর এই মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন , ‘মাত্র ৫৪ বছর বয়সে চলে যেতে হলো। এর থেকে বেদনাদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে। মাস দুয়েক আগেই আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল শ্রীদেবীর। এখনও সে স্মৃতি মনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।’ গত বছর সৌরভের একটি শোয়ে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন শ্রীদেবী। তা ছাড়াও শ্রীদেবীর পরিবারের সঙ্গেও তার খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছেন সৌরভ। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এও বলছেন, ক্রিকেট নিয়ে কতটা মাতামাতি করতেন শ্রীদেবী। সৌরভ বলেন, ‘আমার সঙ্গে শ্রীদেবী এবং বনি কাপুরের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সিনেমার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতিও দারুণ আগ্রহ ছিল ওঁর (শ্রীদেবী)। এর পেছনে বনি কাপুরেরও হয়ত কিছুটা অবদান রয়েছে। কারণ বনি নিজে ক্রিকেট পাগল মানুষ।’ ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে জিতেন্দ্র ও শ্রীদেবী জুটি একত্রে ১৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার মধ্যে ১৩টি হিট। হিট চলচ্চিত্রসমূহ হলো হিম্মতওয়ালা, জানি দোস্ত (১৯৮৩), জাস্টিস চৌধুরী (১৯৮৩), মাওয়ালি (১৯৮৩), আকালমন্দ (১৯৮৪), বলিদান (১৯৮৫), সুহাগন (১৯৮৬), ঘর সংসার (১৯৮৬), ধর্ম অধিকারী (১৯৮৬), অউলাদ (১৯৮৭), সোনে পে সুহাগা (১৯৮৮)। ৩টি ফ্লপ চলচ্চিত্র হলো সারফারোশ (১৯৮৫), আগ অউর শোলা (১৯৮৬) ও হিম্মত অউর মেহনত (১৯৮৭)। শ্রীদেবী রাজেশ খান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধেও সফল ছিলেন। এই জুটির উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো নয়া কদম (১৯৮৪), মকসদ (১৯৮৪), মাস্টারজি (১৯৮৫) এবং নজরানা (১৯৮৭)। ১৯৮৬ সালে শ্রীদেবীকে সর্প বিষয়ক কাল্পনিক চলচ্চিত্র নাগিনায় অভিনয় করতে দেখা যায়। এতে তিনি ‘ইচ্ছাধারী নাগিন’ চরিত্রে অভিনয় করেন, যে সাপ থেকে নারীতে পরিণত হতে পারে। এটি ছিল সে বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র এবং বক্স অফিস ইন্ডিয়া তাকে ‘অবিসংবাদিত এক নম্বর’ বলে অভিহিত করে। ইয়াহু! ছবিটিকে অন্যতম সেরা সর্প বিষয়ক কাল্পনিক চলচ্চিত্র বলে উল্লেখ করে। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার ‘শীর্ষ ১০ সর্প বিষয়ক হিন্দী চলচ্চিত্র’ তালিকায় নাগিনা ছবিটি অন্তর্ভুক্ত হয়। শ্রীদেবীর ‘মেঁ তেরি দুশমন’ গানের নৃত্য বলিউডের অন্যতম সেরা সর্প নৃত্য বলে উল্লেখ করে দেশী হিটস লিখে, ‘এটি শ্রীদেবীর অন্যতম সেরা প্রতীকী নৃত্য... যা এখনও ভক্তদের গায়ের লোম দাঁড় করিয়ে দেয়’ এবং আইডিভা লিখে, ‘এটি চলচ্চিত্র কিংবদন্তির একটি উদাহরণ। গত কয়েক দিন ধরে ইনস্টাগ্রাম উপচে পড়ছিল বিয়েবাড়ির ছবিতে। দুবাইয়ে তরুণ অভিনেতা মোহিত মারওয়ার বিয়েতে হাজির ছিলেন বলিউডের অনেক নক্ষত্রই। কিন্তু উৎসবের মঞ্চ সবচেয়ে বেশি আলো করে ছিলেন তিনিÑ শ্রীদেবী। সেই সব ছবি আর ভিডিওই যে ৫৪ বছরের শেষ ফ্রেম হতে যাচ্ছে, অতি বড় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি কেউ। ইনস্টাগ্রামে শ্রীদেবী কাপুরের এ্যাকাউন্টে শনিবার রাত থেকে ঝলমলে সেই ছবিগুলোই ভরে উঠছে একের পর এক শোকবার্তায়। কাকতালীয়ই হবে নিশ্চয়! শনিবার রাতে অমিতাভ বচ্চন টুইট করেছিলেন, ‘কেন জানি না, মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি হচ্ছে!’ কয়েক মুহূর্ত পরেই এলো খবরÑ আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্রীদেবী প্রয়াত। রাত এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে ঘটনাটা ঘটেছে। খবর ছড়াতে শুরু করা মাত্র অনেকেই মনে করেছিলেন, এ হতে পারে না। ভুয়া খবরের ভরে উঠেছে নিশ্চয়ই কেউ ফায়দা নিচ্ছে। তখনই নায়িকার দেওর সঞ্জয় কাপুর সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘না এটা সত্যি। শ্রীদেবী আর নেই।’
×