ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তেলের দাম নির্ধারণের প্রস্তাব বিপিসির

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১ মার্চ ২০১৮

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তেলের দাম নির্ধারণের প্রস্তাব বিপিসির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তেলের দাম নির্ধারণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এই পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারিত হবে। তাতে করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে বা বাড়লে তার সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও তেলের দাম কমবে বা বাড়বে। বিপিসি’র একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নির্ধারণে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কোন কোম্পানির জাহাজে তেল ভরার দিনে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অর্থ-বাণিজ্য বিষয়ক পত্রিকা প্লাটস-এ প্রকাশিত দাম এবং তার আগের ও পরের দুই দিনের দামের গড় করে ঠিক হয় ওই চালানের তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রতিদিনই কিছুটা ওঠানামা করে। ফলে দামে প্রতিদিনই পরিবর্তন আসে। বিপিসিও একই পদ্ধতিতে তেল কিনে থাকে। ওই কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়তই তেলের দামে এদিক-সেদিক হলেও দেশের বাজারে তেলের দামে তার প্রভাব পড়ে না। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১৬ সালের এপ্রিলে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। তবে বিপিসি এখন চাইছে, এই দামও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই নির্ধারণ করা হোক। জানা যায়, বর্তমানে ভারতে একটি নির্দিষ্ট দিন পর পর আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে যেমন ভারতে দাম বাড়ানো হয়, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে ভারতের বাজারেও কমানো হয়। পাকিস্তানসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ একই পদ্ধতিতে তেল বিক্রি করে থাকে। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপিসি সরকারের কাছে তেলের দাম নির্ধারণের এই পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন দেশের তেলের দাম নির্ধারণ করে থাকে জ্বালানি বিভাগ। সরকার তেলের দাম পরিবর্তন করতে চাইলে জ্বালানি বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশে গেজেট জারি করে। যদিও দেশে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র একবারই জ্বালানির দর নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। অন্যসব ক্ষেত্রেই জ্বালানি বিভাগ দাম সমন্বয় করেছে। এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (মার্কেটিং) মীর আলী রেজা বলেন, ‘তেলের দাম সমন্বয়ের জন্য আমরা একটি ফর্মুলা নির্ধারণের চেষ্টা করছি, যেন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে বা কমলে আমাদের এখানেও একইভাবে কমে বা বাড়ে। সেক্ষেত্রে প্রতিমাসেই দর সমন্বয় হবে।’ মীর আলী রেজা বলেন, ‘এতে বিপিসির লাভ-লোকসানের বিষয়গুলো আর থাকবে না। দীর্ঘদিন বিপিসি লোকসান দিয়েছে। পরে কিছুদিন লাভের মুখ দেখলেও এখন আবার লোকসান দিচ্ছে। তাই এই পদ্ধতি চালু করা জরুরী। এতে তেলের দাম সমন্বয় নিয়ে আর জটিলতা তৈরি হবে না। পাশাপাশি লোকসানের হাত থেকেও বাঁচবে বিপিসি।’ বিপিসি প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনছে বলেও জানান তিনি। বিপিসি বলছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা লোকসান দিয়েছে তারা। তখন বিপিসির ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিবছর ভর্তুকি দিত সরকার। ২০১৪ সালের পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে আসায় বিপিসির লাভ হতে থাকে। জ্বালানি খাত থেকে সরকার ভর্তুকিও তুলে নেয়। এদিকে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপিসি এখন দাম সমন্বয়ের কথা বলছে। কিন্তু যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন তো তারা দাম কমানোর কথা বলেনি।’ তিনি বলেন, ‘তারপরও এই ফর্মুলা বাস্তবায়িত হলে ভালই হবে। এখন দাম বাড়ানো হলেও আন্তর্জাতিক বাজার দাম কমলে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম কমে যাবে। তবে এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে জ্বালানি তেলের দামের হিসাব পরিষ্কারভাবে জানানোটা জরুরী।’ ম. তামিম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কেনার পর জাহাজে ওঠানো, পরিবহন খরচ, ট্যাক্স-ভ্যাট, কমিশনের খরচ সবই পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে। তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ্য, বাজারে কেরোসিন ও ডিজেল ৬৫ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৪২ টাকায় বিক্রি করছে বিপিসি। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে পাঠানো চিঠিতে কেরোসিনে ১১ টাকা, ডিজেলে ৭ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। তাদের হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় কেরোসিনে ১১ টাকা, ডিজেলে সাড়ে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
×