ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১ মার্চ ২০১৮

শেয়ারবাজারে টানাপোড়েন

রাজধানীর শেয়ারবাজারে হঠাৎ করে নেমে এসেছে অস্থিরতা। হাতে গোনা কয়েকজন নীতিনির্ধারক তথা খেলোয়াড়ের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী ৩৩ লাখ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের প্রায় সব সূচক উর্ধমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং সেক্টরে লক্ষ্য করা যায় প্রায় অরাজকতা। গত দুই মাসে শুধু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জই মূলধন হারিয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। আর সূচক কমেছে ৪৮০ পয়েন্ট। বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম শেয়ার মার্কেটের অবস্থাও যে ভাল, এমন বলা যাবে না। সর্বাধিক যেটা আশ্চর্যের বিষয় তা হলো শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাতের এই শোচনীয় অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। অথচ চলতি বছরের শেষার্ধেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দুঃখজনক হলো এই যে, ইতোপূর্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৯৬) শেয়ারবাজার নিয়ে নানা নয়-ছয় হয়েছে। যার প্রতিকার মেলেনি। ফলে সহায় সম্বল তথা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে লাখ লাখ মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিল বেকার ও নিম্নবিত্ত। সে ক্ষেত্রে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী কোন চক্র বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি গ্রুপটি শেয়ারবাজারে ধসের পেছনে কোন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে দেশের আর্থিক খাতে তদন্তে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। বিশেষ করে দুর্নীতির মামলায় দ-িত খালেদা জিয়া যখন জেলে, তখন সরকারবিরোধী দল এমন সুযোগ নিতেই পারে। মনে রাখতে হবে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে এটা ব্যবহার করতে পারে। অতীতের রেকর্ড অন্তত তা-ই বলে। দ্বিতীয় একটি আন্তর্জাতিক ইস্যুও কাজ করতে পারে শেয়ারবাজারে ধসের পেছনে। ঢাকার শেয়ারবাজারে বর্তমান দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও ভারতের অনুপ্রবেশ নিয়েও চলছে রসি টানাটানি। শেয়ার বিক্রিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সম্পর্ক এখন তলানিতে। উল্লেখ্য, চীনের স্টক এক্সচেঞ্জ সাংহাই ও সেনজেন যৌথভাবে ডিএসইর মালিকানা গ্রহণের জন্য প্রতি শেয়ার ২২ টাকা দরসহ ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক কনসোর্টিয়াম ১৫ টাকা দরসহ প্রস্তাব দিয়েছে কারিগরি সহায়তা প্রদানের। সর্বোচ্চ দরের কারণেই চীনের স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। অন্যদিকে ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জও ঢাকার দখল পেতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চীনের শর্ত নিয়েও আপত্তি উঠেছে। এই দুটো বৃহৎ শক্তির টানাপোড়েনের কারণেও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে ঢাকার শেয়ারবাজারে। ৮ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। অতীতেও দেখা গেছে, বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন, কতিপয় প্রভাবশালী কোম্পানির মালিক সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ‘অর্থ হাতিয়ে নেয়ার’ অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে শেয়ারবাজার। সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত কমিটি গঠনসহ কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেও সে সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এবারও যাতে অতীতের মতো না হয়, সে জন্য শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ তথা শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সর্বতোমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সকলপক্ষকে। ব্যাংকিং খাতসহ শেয়ারবাজারে আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলে প্রকারান্তরে বাধাগ্রস্ত হবে বর্তমান সরকারের চলমান সকল উন্নয়ন কর্মকা-। এর পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থায়ও চির ধরতে পারে যা কাম্য নয় কখনও।
×