ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লালবাগে পিতার হাতে মাদকাসক্ত পুত্র খুন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ মার্চ ২০১৮

লালবাগে পিতার হাতে মাদকাসক্ত পুত্র খুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর লালবাগে পিতার ছুরিকাঘাতে মাদকাসক্ত পুত্র খুন হয়েছে। মাদকাসক্ত পুত্রকে শাসন করতে গেলে পুত্র পিতার উপর চড়াও হয়। উত্তেজিত পিতা হাতের কাছে থাকা বাসার ফল কাটার ছুরি দিয়ে ছেলেকে আঘাত করে। আর তাতেই ঘটে যায় মর্মান্তিক এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। পলাতক পিতাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ নিহতের ছোট ভাইকে প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর লালবাগ থানাধীন আজিমপুরের ৪১ নম্বর নিউ পল্টনের এগারো তলা বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়িটির মালিক নূর ইসলাম। তিনি রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটে ব্যবসা করেন। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে শাহীন হোসেন (৩২)। আরেক ছেলে সাইদুল ইসলাম শুভ (২০)। মেয়েটি ভাই বোনদের মধ্যে ছোট। শাহীন তেমন পড়াশুনা করেনি। আগাগোড়াই বখাটে। বহুদিন যাবত মাদকাসক্ত। ইয়াবা ও ফেনসিডিল তার প্রিয় মাদক। এছাড়া অন্যান্য মাদক সেবনেও সে অভ্যস্ত ছিল। অনেক আগেই পাশের বাড়ির মেয়ে আসমা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পরেও সে মাদকের পথ থেকে সরেনি। এ নিয়ে দুই পরিবারে অশান্তি চলছিল। শীহনের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে মেয়ে বড় হওয়ার পরেও মাদক ছাড়েনি শাহীন। তাদের পরিবার বাড়িটির পঞ্চম তলায় বসবাস করে। কয়েক বছর ধরে মাদক নিয়ে দুই পরিবারে অশান্তি চরম আকার ধারণ করে। এমন পরিস্থিতিতে শাহীন কয়েক মাস নিজের পরিবারের সঙ্গে আবার কয়েক মাস শ্বশুরের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিল। কয়েক মাস আগে শাহীনকে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল। দুই মাস আগে তাকে সেখান থেকে বাড়িতে আনে তার পরিবার। কিন্তু কয়েক দিন ভাল থাকার পর আবার মাদকের পথে চলে যায়। নেশার টাকা না পেলেই বাড়ির জিনিসপত্র ভাংচুর করতো। স্ত্রী সন্তানসহ বাড়ির লোকজনদের নানাভাবে হেনস্তা করতো। এ নিয়ে অশান্তি চরমে পৌঁছে। ঘটনার দিন মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শাহীন নেশা করে বাসায় ফিরে। এ সময় অনেক রাতে তার বাসায় ফেরার কারণ জানতে চান তার পিতা নুর ইসলাম। মাদক নিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে পিতাপুত্রের মধ্যে ঝগড়া চরম পর্যায়ে পৌঁছে। ঝগড়া শুনে বাসার সবাই নিচে যায়। উত্তেজনার এক পর্যায়ে পিতা পুত্রকে শাসন করতে যান। এ সময় শাহীন পিতার উপর চড়াও হয়। পাশে থাকা ছোট ছেলে শুভ শাহীনকে বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে কাছে থাকা বাসার ফল কাটার ছুরি দিয়ে পিতা পুত্রকে আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় শাহীনকে রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত প্রায় বারোটার দিকে শাহীনের মৃত্যু হয়। লালবাগ থানার ওসি তাপস কুমার পাল জনকণ্ঠকে বলেন, পিতা নূর ইসলাম পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শাহীনকে মারধরের অভিযোগে তার ছোট ভাই ধানমন্ডি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র শুভকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি। শাহীনের পিতার পরিবার, না শ্বশুরের পরিবার, না স্ত্রী মামলা দায়ের করবেন তা জানা যায়নি। স্বাভাবিক কারণেই এমন ঘটনায় মামলার বাদী হওয়া নিয়ে রীতিমত দ্বিধা দ্বন্দ্বে রয়েছে দুই পরিবারের সদস্যরাই। কেউ মামলা দায়ের না করলে শেষ পর্যন্ত আইন মোতাবেক পুলিশকেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে হবে।
×