ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগে প্রস্তুত আছি ॥ এডিবি প্রধান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১ মার্চ ২০১৮

দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগে প্রস্তুত আছি ॥ এডিবি প্রধান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট তাকেহিকো নাকাও। এজন্য অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা সফররত এডিবি প্রেসিডেন্ট। তিন দিনের সফরের শেষ দিন বুধবারে আগারগাঁওয়ে এডিবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ পরামর্শ দেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ, আগামী জাতীয় নির্বাচন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে এডিবির পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে এডিবির দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক হান কিম, বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাটির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে ॥ তাকেহিকো নাকাও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়া অসম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশের জন্য এটি সহজও হবে না। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের উপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। চীন এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ভাল উদাহরণ হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটি আমার দ্বিতীয় এবং বিশেষ সফর। এর আগে ২০১৪ সালের জুনে আমি বাংলাদেশে এসেছিলাম। গত চার বছরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দারুণ উন্নতি করেছে। সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভাল, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও ইতিবাচক। তবে আরও ভাল করার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। বর্তমানে জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আদায়ের হার মাত্র ১০ শতাংশ। এটি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, টেকসই অর্থনীতির জন্য রাজস্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব আদায় করা হয় জনগণের কল্যাণের জন্য, দুর্ভোগের জন্য নয়। রাজস্ব বাড়ানোর উপায় হিসেবে তিনি ভ্যাট, প্রগ্রেসিভ ইনকাম ট্যাক্স, শুল্ক ও তামাকের ওপর কর বাড়ানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ ॥ এক প্রশ্নের জবাবে তাকেহিকো নাকাও বলেন, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিলে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি এডিবি বিবেচনা করে দেখবে। প্রতিশ্রুত ঋণ-সহায়তার বাইরে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে এই অর্থায়নের পাশাপাশি সরকার চাইলে যে কোনো বড় প্রকল্পে এডিবি অর্থ দিতে আগ্রহী বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার এক বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে আমাদের অর্থায়ন করতে বলেছেন। আমরা সেখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছি। সরকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে অবশ্যই আমরা সেটা বিবেচনা করব। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) ক্ষেত্রেও এডিবি সহায়তা করতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ২০১৬-২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশকে আট বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে এডিবির। এই অংক আগের পাঁচ বছরের (২০১১-২০১৫) চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, যদি প্রয়োজন হয় এর বাইরেও বাংলাদেশকে আমরা অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা দেব। সেটা চলমান প্রকল্প এবং নতুন প্রকল্পেও হতে পারে। এমনকি সরকারের যে ১০টি মেগা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোতেও আমরা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আর্থিক সহায়তা দিতেও প্রস্তত ॥ এক প্রশ্নের জবাবে এডিবি প্রধান বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে মানুষের জন্য বাংলাদেশ নিজ উদ্যোগের ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ দিয়েছে এবং মানবিক সহায়তা ভালভাবে মোকাবেলা করছে। এজন্য বাংলাদেশ প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দিতে এডিবি প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ এখনও কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তাই সহায়তার পরিমাণ কত হবে সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহত বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ॥ তাকেহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) বাড়াতে এডিবি অবকাঠামো খাতে, বিশেষ করে বিদ্যুত-জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যোগাযোগ এবং নগর এলাকার উন্নয়নে ঋণ-সহায়তা অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, এডিবি বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষায় বিনিয়োগ করবে। যেন অধিকসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। মঙ্গলবার নরসিংদীর একটি স্কুল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, সুযোগ পেলে মেয়েরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে পারবে। ওই স্কুলের মেয়েরা এখনই ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম। এদের একজন আমাকে বলেছে, সে বড় হয়ে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কাজ করতে চায়। এটি অনেক বড় উৎসাহের ব্যাপার। এছাড়া সাাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তাকিহিকো নাকাও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে গণতন্ত্র বজায় রাখতে হবে। তাই আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতি স্থিতিশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা করে এডিবি। নাকাও আরও বলেন, এডিবি দক্ষিণ এশীয় ইকোনমিক করিডরে নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া মানে বাংলাদেশের সামনে শেখার বড় সুযোগ। এটি কোন ফাঁদ নয়। বাংলাদেশে এখন মধ্যম আয়ের অন্য দেশগুলো থেকে শিখতে পারবে। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ এডিবির সদস্য হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ঋণ-সহায়তা দিয়ে আসছে। এডিবি এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। প্রধানত বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, পানিসম্পদ, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, সুশাসন ও আর্থিক খাতে ঋণ দেয় সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের পর একক সংস্থা হিসেবে এডিবি বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয়।
×