ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘মিয়ানমারকে দায় নিতে হবে’

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘মিয়ানমারকে দায় নিতে হবে’

অনলাইন রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে সেদেশের সরকার পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ঘুরে আসা শান্তিতে নোবেল জয়ী তিন নারী। ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান এবং যুক্তরাজ্যের মরিয়েড মুগুয়ার বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে তার কাছে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, মিয়ানমারকে এর দায় নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে এই বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, “মরিয়েড মুগুয়ার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যা দেখেছেন, তাতে তারা গভীরভাবে শোকাহত। রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, এরপরও বিশ্ব সম্প্রদায় এখনো কীভাবে নীরব রয়েছে, তাতে তিনি বিস্মিত।” মানবিক কারণ দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তাকে ‘কাইন্ড মাদার’ হিসাবে বর্ণনা করেন ১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া মুগুয়ার। গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর গত ছয় মাসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এর আগে গত কয়েক দশকে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ সফররত নোবেল বিজয়ী তিন নারী সোম ও মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়ায় দুটি আশ্রয় শিবির ঘুরে রোহিঙ্গাদের মুখ থেকে রাখাইনের গ্রামে গ্রামে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওযের ভয়াবহ বিবরণ শোনেন। আরব বসন্তের দিনগুলোতে ইয়েমেনের বিপ্লবের প্রতীক হয়ে ওঠা সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী তাওয়াক্কুল কারমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, রাখাইনে যা ঘটছে, তার দায় মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের যে খবর প্রচার মাধ্যমে আসছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহতা সেখানে ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন নোবেল বিজয়ী এই নারী। আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় একশ নারীর সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, ওই নারীরা মিয়ানমারে ধর্ষণের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ক্যাম্পের অধিকাংশ এতিম রোহিঙ্গা শিশুর অভিভাবককে হত্যা করা হয়েছে। তাওয়াক্কুল কারমান বলেন, “এটা জাতিগত নিধনের পরিকল্পিত সরকারি নীতি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।”২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইরানের শিরিন এবাদি এই গণহত্যার জন্য দায়ীদের আইনের আওয়তার আনার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, সব মিলিয়ে দশ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার যাতে ওই চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তার উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×