ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েক শ’ গাছ কেটে লুট

ভোলায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ভোলায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ॥ লালমোহন উপজেলায় এলজিইডির রাস্তা করার নামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেকের বসতবাড়ির কয়েক শত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এমনকি কেটে ফেলা কাঠও তারা নিয়ে গেছে। মঙ্গলবারও মাটি দিয়ে জমি দখল করে ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর কবরও বিনষ্ট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারের লোকজনের ভয়ে ওই বাড়ির নারীরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গত তিন দিন ধরে লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের রায়পুরাকান্দি গ্রামে এ ঘটনা চলছে। ভীতসন্ত্রস্ত পরিবারটি তাদের জমি রক্ষায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। অথচ লালমোহন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির জমির ওপর দিয়ে কোন কাজ করার নির্দেশ দেয়নি। আর লালমোহন উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুল আলম কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা মানছেনা ঠিকাদার পক্ষের লোকজন। এছাড়াও ওই রাস্তায় নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করারও অভিযোগ রয়েছে। ভোলার লালমোহন উপজেলা এলজিইডির উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, উপকূলীয় জলবায়ু প্রকল্পের আওয়তায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম আর (জয়েন্ট ভেঞ্চার) কে গত ৯/১০/১৬ তারিখ ৮ কোটি ১৯ লাখ ১১ হাজার ১৭৪ টাকা ব্যয়ে ভোলা লালমোহন উপজেলার কৃষি ব্যাংক থেকে কর্তার হাট পশ্চিম পার্শ্বের ৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ১৮ মাসের মধ্যে রাস্তা সম্পন্ন করার জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই রাস্তায় একটি ব্রিজসহ ছোট ৭টি কালভার্ট করার কথা রয়েছে। এই কাজটি মূলত বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার রাশেদুজ্জামান পিটার। সরেজমিনে, মঙ্গলবার লালমোহনের পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের রায়পুরাকান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির সামনে এখন বিরান ভূমি। রাস্তার এক পাশে খাল পাড়ে কেটে ফেলা সুপারি গাছ পড়ে রয়েছে। অপর পাশে কেটে ফেলা কাছের গোড়া শিকর বাকর এখনও রয়ে গেছে। ঠিকাদারের লোকজন পাশ থেকে মাটি কেটে মুক্তিযোদ্ধার জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের উদ্দেশে মাটি ভরাট করছে। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা সিরিন আক্তার ঝর্ণা জানান, তার পিতা ৯২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তারা ২ ভাই ৩ বোন। সকলেই সরকারী চাকরি করায় কেউ বাড়ি থাকে না। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ২০/৩০ জন লোক নিয়ে তাদের বাড়ি হামলা হয়। বাড়িতে তখন কোন পুরুষ ছিল না। নারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক তাদের কয়েক শত গাছ কেটে নেয়। ওই বাড়ির অংশীদার মুক্তিযোদ্ধার ছোটভাই মোঃ শাজাহান জানান, তাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা যাওয়ার বিষয়ে তাদেরকে কোন নোটিস দেয়নি। এমনকি রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণও করেনি। এমনকি এলজিইডির রাস্তার ম্যাপে একটি কালভাট নির্মাণ করে তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পূর্ব শক্রতার জের ধরে রশিদ লাঠিয়াল, জালাল লাঠিয়াল, রতন, বজলু, আলী হোসেন অন্যায়ভাবে তাদের প্রায় ১৬ শতাংশ জমি দখল করে কয়েক শত গাছ কেটে ফেলেছে। এতে তাদের অন্তত ২০ লাখ টাকায় ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে তারা লালমোহন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফখরুল আলমেকে জানালে তিনি সরেজমিনে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন । কিন্তু প্রভাবশালী ওই ঠিকাদার লোকজন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অসহায় পরিবারটি এখন নিরুপায় হয়ে আদালতে মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে লালমোহন উপজেলা প্রকৌশলী ফোরকান সিকদার জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির সামনে দিয়ে ঠিকাদারকে কাজ করার এখনও অনুমতি তারা দেয়নি। তারা খাস জমির ওপর দিয়ে রাস্তা করবেন। এছাড়া ওই স্থানে একটি কালভার্ট নির্মাণ করে রাস্তাটি সোজা করারও এস্টিমেটে প্লান রয়েছে। তাই গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি মাকসুমুল হায়দার বিপু জানান, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির সামনের গাছ তারা কাটেনি। এলাকার স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা ওই গাছ কেটেছে এবং মাটি ভরাট করছে। এর জন্য তারা দায়ী নয় বলে এড়িয়ে যান।
×