ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উর্বর মাটি ইটভাঁটিতে ॥ নওগাঁয় ফলন বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

উর্বর মাটি ইটভাঁটিতে ॥ নওগাঁয় ফলন বিপর্যয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ২৭ ফেব্রুয়ারি ॥ আবাদ উদ্বৃত্ত জেলায় কৃষি জমির উপরিভাগ কেটে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাঁটিতে। এতে একদিকে যেমন জমির হারিয়ে যাচ্ছে উর্বরাশক্তি অন্যদিকে ফসলি জমিগুলো হারিয়ে ফেলছে তার উৎপাদন ক্ষমতা। এতে জেলা জুড়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। সচেতনতার অভাব আর টাকার লোভে এসব জমির মালিক মাটি কেটে বিক্রি করছেন ভাঁটি মালিকদের কাছে। কৃষি বিভাগের মতে, এভাবে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি একবার কাটা হলে তা পূরণ হতে এবং উর্বরা শক্তি ফিরতে অন্তত কয়েক হাজার বছর সময় লাগে। এসব মাটি কাটা অনুর্বর জমিতে উৎপাদন ও ফলন বাড়াতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে কৃষকদের। যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও মানবদেহ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও ইটভাঁটি মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলায় মোট ইটভাঁটির সংখ্যা ১৫৭টি। প্রতিবছর অন্তত ৬ মাস ধরে একটি ইটভাঁটিতে ইট উৎপাদন হয়। ওই ৬ মাসে একটি ইটভাঁটিতে ৮০লাখ থেকে দেড় কোটি ইট তৈরি করা হয়। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে এঁটেল ও দোঁয়াশ মাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এসব মাটি স্থানীয় কৃষি জমি থেকেই নেয়া হচ্ছে। জেলা ইটভাঁটি মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম বলেন, ইট তৈরি করতে মাটির প্রয়োজন। যে যত ভাল মানের মাটি ব্যবহার করতে পারবে, সে তত ভাল মূল্য পাবে। এ কারণেই কৃষি জমির মাটির প্রতি ভাঁটি মালিকদের আগ্রহ বেশি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিৎ কুমার মল্লিক বলেন, আমাদের কৃষকরা যদি জানতেন, জমির টপসয়েল কেটে নিলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। প্রতিবছর কৃষি জমির উপরিভাগের প্রচুর পরিমাণ মাটি ইটভাঁটিতে চলে যাচ্ছে। তাতে আমরা ভবিষ্যতে উৎপাদন ও ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি। এভাবে দিনের পর দিন কৃষি জমির উর্বরাশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১’ অনুযায়ী জমির টপসয়েল কাটার নিয়ম নেই। আবার স্বেচ্ছায় কেউ জমির মাটি কেটে বিক্রি করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আইনগত কোন বাধাও নেই। এ ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। আমতলীতে পুড়ছে কাঠ নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, আমতলী-তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ড্রাম চিমনি অবৈধ ইটভাঁটি গড়ে উঠছে। এ সকল ইটভাঁটিতে দেদার পুড়ছে কাঠ। নীরব পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন। ইটভাঁটির মালিকরা পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনের লোকজনদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভাব করছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ অধিদফতরের লোকজনকে টাকা দিলেই মিলে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর অনুমতি। পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন ভাঁটিতে এতে টাকা নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ১০টি ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ইটভাঁটি রয়েছে। এ সব ইটভাঁটি স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ও ৫০-৬০ ফুট উচ্চতার অস্থায়ী চিমনি ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে সকল ইটভাঁটিতে কাঠ পোড়ানোর জন্য গ্রাম ও ফারতার বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে ¯ূ‘প করে রাখছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির আশঙ্কা করেছে পরিবেশবাদীরা। পরিবেশ অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কর্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, আমতলীতে অনেক ইটভাঁটির পরিবেশ অধিদফতরের কোন ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদফতরের নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেউ ইটভাঁটি নির্মাণ ও কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×