ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একনেকে ১৭৯৮৭ কোটি টাকার মোট ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড সক্ষমতা বাড়াতে ৫৮০৩ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড সক্ষমতা বাড়াতে ৫৮০৩ কোটি টাকার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুত বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পে বিশ^ব্যাংকের ঋণ সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। ‘পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন এবং ক্ষমতাবর্ধন’ শীর্ষক এই প্রকল্পসহ ১৫ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৮৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। বিদ্যুত গ্রিডের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। এই বিপুল অতিরিক্ত বিদ্যুত চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে হলে সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুত আমাদের লাইফলাইন। ছোট-বড়-মাঝারি যে কোন ধরনের শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুত দরকার। আবাসিক খাতেও বিদ্যুতের দরকার। কিন্তু যে পরিমাণ বিদ্যুত আমাদের জাতীয় গ্রিডে রয়েছে, সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটির জন্য তার সবটুকু গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, দেশের রাস্তাঘাট নষ্ট হলে তা দ্রুত মেরামত বা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন যখন ইচ্ছা করা যায় না। পরিকল্পিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। তাই দেশের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার চাহিদা পূরণে ‘পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন ও ক্ষমতাবর্ধন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছি তিন গুণ, আর সঞ্চালন ব্যবস্থা বেড়েছে দুই গুণ। এখন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সঞ্চালন ব্যবস্থার সক্ষমতাও বাড়ানো হবে। জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ ৩৫ জেলায় নির্ভরযোগ্য বিদ্যুত সরবরাহের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় ১২ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং ১৭৫ কিলোমিটার ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ৪০০ কেভি দুটি সাব স্টেশন ও ২৩০ কেভি দুটি সাব স্টেশন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। ডিসেম্বর ২০২১ এর মধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। মন্ত্রী জানান, অনুমোদিত ১৫ প্রকল্পের ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা খাত থেকে পাঁচ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা যোগান দেয়া হবে। অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ ॥ পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প; ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এছাড়া রংপুর অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প; এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন নবসংযুক্ত নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ডেমরা ও মান্ডা এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়াও কালুখালী ভাটিয়াপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ হাজার ১১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ে পার্বতীপুর হতে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য বিভিন্ন বিওপির পরিসীমা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (বরিশাল জোন) প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, গাজীপুর প্রকল্প; এর ব্যয় ৯২৪ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩২ কোটি টাকা।
×