ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি দমনে সহায়তা দেবে দুদক

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি দমনে সহায়তা দেবে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৌশল দফতরের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সকল প্রকার অনিয়ম রোধে প্রভাবশালীদের তদবিরবাজি ও অনিয়ম বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারী সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সহায়তার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একই সঙ্গে তদবিরবাজি এবং অনৈতিক প্রভাবই সবচেয়ে বড় দুর্নীতি তাই প্রভাব এবং তদবিরকে আমলে না নিয়ে পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করতে প্রকৌশল খাতের প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সরকারী বিভিন্ন প্রকৌশল দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। মত বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব ড. মোঃ শামসুল আরেফিন, মহাপরিচালক মোঃ জাফর ইকবাল, রাজউক চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমান, বিআইডব্লিইটিএর প্রধান প্রকৌশল মোঃ মঈদুল ইসলাম, সিভিল এ্যাভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুভেন্দু বিকাশ, প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসের, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মফিজ্জল হক, হাইটেক পার্ক অথরিটির এমডি হোসনে আরা বেগম, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাশেম ভুইয়া প্রমুখ। প্রকৌশল খাতে দুর্নীতির পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের মদদ। প্রভাবশালীদের কারণে এ খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সভায় বক্তাদের এমন মন্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, তদবিরবাজি এবং অনৈতিক প্রভাবই সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। আপনারা পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করবেন। প্রভাব এবং তদবিরকে আমলে নিবেন না। যদি কোন প্রভাবশালী আপনাদের কাছে অনৈতিক কিছু দাবি করে, তাহলে দুদককে জানাবেন। আপনাদের জন্য কমিশনের দ্বার সবসময় উন্মুক্ত। সভায় বিভিন্ন দফতরের প্রকৌশলীরা খোলামেলা বক্তব্যে ভূমি অধিগ্রহণ, এস্টিমেশনের তথ্য ফাঁস, রেট অব সিডিউল, প্রভাব ও তদবিরের বিষয়গুলো কমিশনকে অবহিত করেন। সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় করেন দেশের প্রকৌশল বিভাগগুলো। শুধু অর্থব্যয় নয়, কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার দায়িত্বও প্রকৌশলীদের। দুর্নীতি বন্ধ করতে সবাই তৎপর। তাই প্রভাবশালী কিংবা তদবিরবাজদের প্ররোচনায় কেউ অনৈতিক কাজ করবেন না। মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৌশল সংস্থাগুলো দেশের বাজেটের ৮০ ভাগ ব্যয় করেন। এই ব্যয় হতে হবে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত। আর্থিক বিষয়ে অডিট করা হয় কিন্তু কাজের অডিট করা হয় না। আমরা কাজ করি, কিন্তু কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করি না। আমরা প্রকল্প গ্রহণ করি কিন্তু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যথাযথভাবে যাচাই করি না। এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকে প্রকৌশল সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগ আসে। আমরা এগুলো বিশ্বাস করতে চাই না, তাই আমরা আপনাদের কথা শুনতে চাই। এটি পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের একটি প্রক্রিয়া। সবাই যদি আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে না আসেন, তাহলে দেশ এগোবে না এবং মানুষও আমাদের বিশ্বাস করবে না। তিনি বলেন, প্রকল্পের নামে নিশান পেট্রোল বা প্রাডো গাড়ি আমদানি করি কেন? কেন প্রগতি থেকে গাড়ি কিনি না ? প্রকল্প শেষে গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করেন? কোথায় যায়? রাজউক চেয়ারম্যান মোঃ আবদুর রহমানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্লট দিচ্ছেন। প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে উপকারভোগী জনগণের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রকল্পে কনসালটেন্ট রাখা হয় কিন্তু উপকারভোগী জনগণের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। এটা কেমন কথা। প্রকল্প গ্রহণ, এস্টিমেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রতিটি স্তরেই উপকারভোগীদের সঙ্গে কনসাল্টেশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রকল্প নির্বাচন ও বাস্তবায়নে তদবির ও প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, আপনারাই দেখেছেন প্রভাবশালী এবং প্রভাবহীন সবাই কীভাবে দুদকের আইনের আওতায় এসেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে। আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন বিদ্যমান আইন, বিধি-বিধান অনুসারে কোন প্রভাবশালীর চাপে অথবা অনৈতিক যোগসাজশে কোন কাজ করলে তার দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। কোনটি ভুল আর কোনটি ইচ্ছাকৃত অনৈতিক কাজ এটা কমিশন অনুধাবন করতে পারে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা ইলেকট্রনিক টেন্ডার করি, আবার এস্টিমেটর গোপনীয় তথ্য বিশেষ ব্যক্তিকে জানিয়ে দেই। এই অবস্থা চলতে পারে না। দেশকে দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হলে পদ্ধতিগত উন্নয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কমিশনের অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন অভিযোগ নেয়ার ক্ষেত্রে কারও মুখের দিকে তাকায় না, গাণিতিক পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে।
×