ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নানা শর্ত ও আইনপরিপন্থী প্রস্তাব

চীন কিংবা ভারত কেউই কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে না ডিএসইর

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চীন কিংবা ভারত কেউই কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে না ডিএসইর

অপূর্ব কুমার ॥ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার ক্ষেত্রে চীনের দুই শেয়ারবাজার শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কনসোর্টিয়াম এমন কিছু শর্ত দিয়েছে, যা বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন পরিপন্থী প্রস্তাব দিয়েছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত কমিটির পর্যালোচনায় এ মতামত উঠে এসেছে। ফলে প্রধান বাজারের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে আলোচনায় থাকা দুটি কনসোর্টিয়াম নিয়েই স্টক একচেঞ্জ ও কমিশনের মধ্য সিদ্ধান্ত নেয়া আরও কঠিন হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রির বিষয়টিও ঝুলে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। কারণ আগামী ৮ মার্চের মধ্যে ডিএসইর ৪৫ কোটি শেয়ার বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা গেছে, দরপত্রের আবেদন বিবেচনা করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের গ্রহণ করা প্রস্তাব লিখিত আকারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দিলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহ্বায়ক ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলমকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের কমিটি করে বিএসইসি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নির্বাহী পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম। এ কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়। বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির মতে, ডিএসইর সঙ্গে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর চুক্তি যুক্তরাজ্যের (ইউনাইটেড কিংডম) আইন অনুযায়ী করার শর্ত দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম। যা বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী বলে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি জানিয়েছে। এছাড়া কোন বিবাদ দেখা দিলে লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন অনুযায়ী সমাধানের প্রস্তাব এবং নতুন কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন লাগার শর্তকে বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থী বলে মনে করছে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি। যা বিবেচনার কোন সুযোগ নেই বলে কমিটির দাবি। এদিকে ডিএসইর কোন নতুন শেয়ার ইস্যুর আগে চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদনসহ আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। যেগুলো ডিএসইর আর্টিকেল সংযোজন করা হলে, চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারীর অনুমোদন ছাড়া ডিএসই গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না বলে বিএসইসি পর্যালোচনা কমিটির দাবি। অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তনের আগে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারীর লিখিত অনুমোদন লাগবে। এছাড়া ১৫ শতাংশের অধিক যে কোন স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ, যে কোন ১০ কোটি টাকার উপরে চুক্তি, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর স্বার্থ জড়িত যে কোন ইস্যু, যে কোন ধরনের ইনটেলেকচুয়াল সম্পত্তি অর্জন, চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারী তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগদানের প্রস্তাব, সেটেলম্যান্ট গ্যারান্টি ফান্ড কন্টিবিউশন বাদ বা স্থগিত করতে হবে এবং আর্টিকেল ১৩৫ অনুযায়ী ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারণকারীর সঙ্গে ডিএসই চুক্তি করতে না পারার আইনটি থেকে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগকারীকে অব্যাহতি দিতে হবে। এছাড়া ডিএসইর আইপিও সংক্রান্ত যে কোন ইস্যু যেমন, শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন ও ইস্যু মূল্য নির্ধারণের আগে লিখিত অনুমোদন নেয়ার শর্ত দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম। আর এসব শর্তগুলোকে ডিএসইর আর্টিকেল পরিবর্তন করে সংযোজন করতে হবে। চীনের কনসোর্টিয়াম যে ৩০০ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা দেবে বলে ডিএসই দাবি করছে, তা নির্ধারণে কোন নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই বলে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে। অন্যদিকে ভারতের এনএসই কনসোর্টিয়াম ৫ বছর পরে যে কারও কাছে শেয়ার বিক্রির সুযোগ চেয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের পরিপন্থী বলে জানিয়েছে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটি। এদিকে চীনকে কৌশলগত অংশীদার মেনে বিএসইসিতে জমা দেয়া প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর কমিশনের মতামত সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, কৌশলগত দার বাঁছাইয়ে কমিশনের কমিটি কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। আমরা সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেব। দেশের আইনের পরিপন্থী বিষয় থাকলে সেটি বাদ দেয়া হবে। আইন সমর্থন করে না, এমন বিষয়ে কিছুই করা হবে না। অন্যদিকে একই বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা কিছু বিষয় নির্দিষ্ট করে ডিএসইর কাছে ব্যাখা চেয়েছি। সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই বোঝা যাবে। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। আর ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য ডিএসইর সেক্রেটারি মোঃ আসাদুর রহমান বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেয়। উল্লেখ্য, চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। এক্ষেত্রে ডিএসইর ১৮০ কোটি শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ার প্রতিটি ২২ টাকা দামে ৯৯০ কোটি টাকায় কিনবে। পাশাপাশি ডিএসইর কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা (৩৭ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় করবে। যাতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে ১ হাজার ২৯০ কোটিরও বেশি টাকা পাবে ডিএসই। অপরদিকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম প্রতিটি শেয়ার ১৫ টাকা করে ৪৫ কোটি শেয়ার ৬৭৫ কোটি টাকায় কিনতে চায়। আর প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে কোন প্রযুক্তি সিস্টেম না দিয়ে শুধু পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা শেয়ারের প্রস্তাব দিয়েছে। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই শেয়ার বিক্রি নিয়ে নানা অস্থিরতা কাজ করেছে। ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউসের মালিকেরা অভিযোগ করেছেন, এই শেয়ার বিক্রি নিয়ে কমিশন অযাচিত হস্তক্ষেপ করে আসছে। তারা বেশি দর হাঁকানো চীনের কনসোর্টিয়ামকে বাদ দিয়ে ভারতের ন্যাশনাল স্টক একচেঞ্জের নেতৃত্বে গঠিত নাসডাক ও ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশকে ৪৫ কোটি শেয়ার বিক্রির চাপ দিচ্ছেন। তাদের মতে, অল্প দামে শেয়ার বিক্রি করলেও ট্রেক হোল্ডাররাসহ সরকারও বড় ধরনের রাজস্ব কম পাবে।
×