ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারী চাকরিতে ৫৫ ভাগ কোটা ;###;কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে

ঢুকেছে অপরাজনীতি ॥ কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঢুকেছে অপরাজনীতি ॥ কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সরকারী চাকরিতে কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি। ফলে অসন্তোষ বাড়ছে কোটা পদ্ধতিকে ঘিরেই। বিসিএস থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারী চাকরিতে ‘বিশাল কোটার ফাঁদে’ পড়ে অনেক মেধাবীর বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে এ পদ্ধতিকে ঘিরে এখন নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। চাকরিতে কোটার পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি থাকায় এবার কোটা সংস্কারের দাবি উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ব্যানারে শুরু হয়েছে কোটা কমানোর বিপক্ষে আন্দোলন। এ অবস্থায় কোটা ব্যবস্থা সমন্বয়ের সুপারিশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজন। ‘রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করতে পারে না’ এমন মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা কোটার পরিমাণ কমানোসহ কোটা সমন্বয়ের সুপারিশ করেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই সরকারী চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা কোটা ৫৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগ করার মতো দাবিও তুলেছেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ব্যানারে আরেক গ্রুপ একই সঙ্গে তাদের কোটা কমানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রার্থীরা। কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে কোটা সংস্কার ও সংস্কার বিরোধীদের মধ্যে ঢাকায় সংঘর্ষও হয়েছে। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তাতে সরকারী চাকরিতে কোটা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ রাখার দাবি করা হয়েছে। তবে এ আন্দোলন থেকে একটি বিশেষ গ্রুপের পক্ষ থেকে কেবল ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’কে টার্গেট করে বক্তব্য দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি বিশেষ শ্রেণী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠার অভিযোগও উঠেছে। মুুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ প্রগতিশীল অনেকেই সময়ের প্রয়োজনে কোটার পরিমাণ কমানোর পক্ষে থাকলেও আন্দোলনে বিশেষ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা মূলত একটি প্রচলিত পদ্ধতিই। অনগ্রসর শ্রেণীকে এই সুবিধা দিয়ে সমাজে সমতা বিধানের লক্ষ্যে এই কোটার প্রবর্তন করা হয় স্বাধীনতার পরপরই। এরপর কাটার পরিমাণ বিভিন্ন সময় কমানো ও বাড়ানো হয়েছে। তবে ’৭৫ এ জাতির জনকের হত্যার পর থেকে দীর্ঘ সময় সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হয়েছে ষড়যন্ত্র। এ কোটা নিয়ে হয়েছে নানা অপকর্ম। বঞ্চিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তবে এই মুহূর্তে দেশে কোটা সংস্কারের দাবির প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বিশাল কোটার পরিমাণকে ঘিরেই। জানা গেছে, এই মুহূর্তে সরকারী চাকরিতে মোট কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি। অর্থাৎ চাকরির অর্ধেকেরও বেশি কোটার দখলে। অথচ মেধার দখলে অর্ধেকেরও কম, শতকরা ৪৫ ভাগ। সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং বাদিবাসী কোটা ৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ জেলা কোটা থাকায় বেশি জনসংখ্যার জেলাগুলোর মানুষ বেশি চাকরি পাচ্ছেন, যা এক ধরনের বৈষম্য তৈরি করছে বলে মনে করা হয়। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাবীদের থেকে সেই পদ পূরণেও আছে নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। ফলে এর কোন শ্রেণীতে যারা পড়েন না, তাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাকি ৪৫ শতাংশের জন্য। দেশে যখন ১৭ জেলা ছিল তখন চালু হয় ‘জেলা কোটা’। পরে ১৭ জেলা ভেঙ্গে ৬৪টি করা হলেও সেই কোটাই রয়ে গেছে। অন্যদিকে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ আছে। ১০ শতাংশ জেলা কোটা থাকায় বেশি জনসংখ্যার জেলাগুলোর মানুষ বেশি চাকরি পাচ্ছেন, যাও এক ধরনের বৈষম্য বলে মনে করা হয়। টানা চারবার বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দিয়েও চাকরি না পাওয়া সুমন তার অবস্থার জন্য ‘বিশাল কোটা পদ্ধতিকেই’ দায়ী করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সাবেক শিক্ষার্থী এখন একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি করছে। তিনি বলেন, কোটা উঠিয়ে দেয়ার দাবি আমি করছি না। তবে কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই। আমরা যারা কোন কোটার মধ্যেই নেই, তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। কোটার পরিমাণ কমানো দরকার। তার প্রতিটি কোটার ক্ষেত্রেই। তার মতে কোটার পরিমাণ বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষও সরকারের সমালোচনা করছে। কোটার পরিমাণ কমালে সরকারকে সাধারণ মানুষ ধন্যবাদ দেবে বলেও আশা করেন সুমন। এদিকে গত অন্তত চারটি বিসিএস ছাড়াও নন-ক্যাডার নিয়োগের বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে কোটার আসনের পরিমাণে প্রার্র্থীই পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা ও আদিবাসী কোটার ক্ষেত্রে এখন প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষাতেই এখন প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থীই পাওয়া যায় না। এ অবস্থা বিবেচনা করেও কোটা বাদ না দিয়ে কমানোর দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যথায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সাধারণ প্রার্থীদের নিয়ে সকল আসন পূরণ করার ব্যবস্থা রাখারও দাবি তোলা হয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন তাদের আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদুল আনোয়ার বলছিলেন, আমাদের দাবি কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। কোটা আমাদের সংবিধানেই আছে। তবে কোটা যেখানে বৈষম্য দূর করার জন্য করা হয়েছে সেখানে এখন কোটা ব্যবস্থাই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন মোট কোটা প্রায় ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য মোট কোটা সংরক্ষিত ৩৬ শতাংশ। কিন্তু তারা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জেলা এবং নারী কোটা আছে মোট ২০ শতাংশ। তাহলে মেধার জন্য সুযোগ কই? এরকম হলে তো যারা মেধাবী, যারা যোগ্য, তারা বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই কোটা থাকুক, তবে তা কোনভাবেই যেন সব মিলিয়ে ১০ শতাংশের বেশি না হয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবি করি নাই। আমরা পুরো কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছি।’ অন্যদিকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, ‘আমরাও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চাই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের কোটা বাতিলের দাবির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। কারণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এই কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাতে সপরিবারে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়। ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু হয়। ২৪ বছর যদি কোটা বন্ধ না রাখা হতো তাহলে এখন আর মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজন থাকত না। আমাদের যে বঞ্চিত করা হয়েছে তাতো পুষিয়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে আপত্তিকর কথা বলছে, কটূক্তি করছে তাদের বায়োডাটা আমাদের কাছে আছে। তারা কারা আমরা জানি। সংবাদ সম্মেলন করে আমরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করব। জানা গেছে, সরকারী চাকরিতে বিদ্যামান কোটা পদ্ধতির সরলীকরণে কয়েকবার সুপারিশ করেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। টানা কয়েক বছর বার্ষিক প্রতিবেদনে পিএসসি বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সরলীকরণের সুপারিশ করে বলেছে, বর্তমানের কোটা সংক্রান্ত নীতিমালা প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রচলিত কোটা পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব উল্লেখ করে পিএসসি বলেছে, বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য। অন্যথায় কোটা প্রয়োগ জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ ভাগ কোটার অল্প সংখ্যকই পূরণ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে কখানোই প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থী মিলছে না। ২৮তম বিসিএসে পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারে বিভিন্ন কোটায় ৮১৩টি পদের জন্য কোন যোগ্য প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা ও পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি পদ খালি থাকে। তবে কোটার আসন সমন্বয় বা আসন সিথিল করার ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই পদ মেধাবীদের থেকে নেয়ার ফলে ফলাফলের চিত্রই পাল্টে যায়। পিএসসি বিভিন্ন সময় সরকারের অনুমতি চাইলে কোটা সিথিলের অনুমোদনও দেয়। এর ফলে দেখা গেছে গত ৩৬ বিসিএসে মেধায় চাকরি পেয়েছে ৭০ শতাংশ। ৩৫ বিসিএসেও প্রায় ৬৮ শতাংশ চাকরি পায় মেধায়। এ অবস্থায় তাহলে এখন সমাধান পথ কি? দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার কোন সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞরা কোটার পরিমাণ কমানোসহ কোটা সমন্বয়ের সুপারিশ করেছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলছিলেন, আমি সাধারণত কোটা ব্যবস্থার পক্ষে নই। সব কিছু মেধার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। তবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, অনগ্রসর জাতি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী সব মিলিয়ে দশ শতাংশ কোটা থাকতে পারে। এটা যদি হয় তাহলে আমি এর পক্ষে। তবে কোটা একদম তুলে দেয়ার পক্ষে নই। কেননা তা হলে ইতিহাসকে অস্বীকার করা হবে। মানবতাকে অস্বীকার করা হবে। মানবিক মূল্যবোধকে অস্বীকার করা হবে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছে তাদের সন্তান বা বংশধর তাদের জন্য একটা টোকেন কোটা থাকা উচিত। কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, শ্রম দিয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ জাতি তাদের জন্য একটা টোকেন কোটা রাখতে পারে। আর অনগ্রসর জাতির জন্যও একটি টোকেন কোটা ব্যবস্থা থাকতে পারে। আর একটি হলো যারা শারীরিকভাবে অসচ্ছল বা প্রতিবন্ধী তাদের জন্য এক-দুই শতাংশ কোটা ব্যবস্থা থাকতে পারে। বিশ্বের সব জায়গাই এদের জন্য কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। এসব মিলিয়ে দশ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা থাকতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলছিলেন, কোটা পদ্ধতিকে বাদ দেয়া যাবে না। কারণ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে দিকে নিয়ে আসতে হবে এ কোটা পদ্ধতি দিয়েই। সমাজে ডিস্ক্রিমিনেশনকে নেগেটিভলি দেখা হয়। তবে এই কোটা হচ্ছে পজেটিভ ডিস্ক্রিমিনেশন। আমরা এ ডিস্ক্রিমিনেশটকা পজেটিভলি করি। কারণ এর মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষকে একটি তুলনামূলক অবস্থানে নিয়ে আসতে পারি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ এই কোটা পদ্ধতির মাধ্যমেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে নিয়ে এসেছেন আসছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরে এই কোটা পদ্ধতি শুরু করেছিলেন। এর মাধ্যমে সমাজে নারীদের সামনের কাতারে নিয়ে আসা গেছে। আদিবাসীদের একটি তুলনামূলক অবস্থানে আনার জন্য। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় কোটার পরিমাণ বেড়েছে ও কমেছে। তবে এখন একটি পর্যায়ে এসেছে এ পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার। সেক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে? এ শিক্ষাবিদ বলছিলেন, হ্যাঁ কোন কোন কোটার পরিমাণ কমানো যেতে পারে। কোনটা বিলুপ্ত করাও যেতে পারে। আবার কোন কোন কোটা নতুন করে আরোপ করাও যেতে পারে। এজন্য আলাপ আলোচনার দরাকার। আছে। কারণ কোন গুরুত্বপূর্ণ সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্যই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজামান বলছিলেন, মেধাকে কোনভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না। আবার সমাজের পিছিয়ে পড়া একটি গোষ্ঠীর জীবন মানের কথাও ভাবতে হবে। তাই এই দুয়ের মধ্যে একটি সুন্দর সমন্বয় করে কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে কোন রাষ্ট্র সমাজ যদি উপেক্ষা করে তাতে সেই সমাজ ও রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ শিক্ষাবিদ কোটা পদ্ধতির একটি সুন্দর সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছেন। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলছিলেন, কোন কোটায় যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থী না পাওয়া যায় তাহলে মেধাবীদের থেকে সেখানে নিয়ে আসতে হবে। কোটাতো অনেক রকমই হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সেই অর্থে কোটা নয়। এটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও একটি নিদর্শন। যারা এ কোটা বাতিলের কথা বলেন, ভাবেন তাদের নিয়েই ভাবা দরকার। হ্যাঁ অন্যান্য কোটা যেমন জেলা কোটা তুলে দেয়া দরকার। অন্যান্য কোটা নিয়ে আলোচনা করে কমানো বাড়ানো যেতে পারে।
×