ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়েও ট্রাম্প প্রশাসন লেজেগোবরে

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়েও ট্রাম্প প্রশাসন লেজেগোবরে

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কংগ্রেস ক্যাপিটেল হিলে প্রকাশ্যে হাজির হয়ে বিশ্ব পরিসরে আমেরিকা সবচেয়ে বড় যে সব হুমকির সম্মুখীন সে সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করেন। এবার তারা যে হুমকির কথা বলেছেন সেটা একেবারে দেশের ভেতরেই। পেনসিলভানিয়া এ্যাভিনিউ থেকে দু’মাইল দূরে হোয়াইট হাউজেস ওয়েস্ট উইংয়ে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের ১৪ মাস হতে চলল অথচ তার কয়েক ডজন উপদেষ্টার নাকি এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র সাময়িক বা অস্থায়ী সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স রয়েছে। তার সবচেয়ে সিনিয়র সহকর্মীদের অন্তত ২ জন দেশের সবচেয়ে গোপন তথ্যাবলী জানেন। এদের মধ্যে রব পর্টার গত ৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক পর্যায়ে অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে পদত্যাগ করেছেন। ট্রাম্পের নিজের গোয়েন্দা প্রধান ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর ড্যান কোট্স্্ বলেন, এটাই হলো গিয়ে সমস্যা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসে সাক্ষ্যদানকালে তিনি ঘোষণা করেন ‘সিস্টেম ভেঙ্গে গেছে।’ কোটস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী বা অস্থায়ী সিকিউরিটি ক্লিয়ারন্সের ভিত্তিতে যারা সরকারে কাজ করছেন তাদের বেলায় যে ধরনের তথ্যাবলী তারা পাওয়ার মতো অবস্থানে থাকেন সেগুলো লাভ করার সুযোগ সীমিত করা উচিত। ট্রাম্পের পছন্দের এফবিআই ডিরেক্টর ক্রিস রে তো আরও বড় বোমা ফাটিয়েছেন। কংগ্রেসের একই প্যানেলে সাক্ষ্যদানকালে তিনি বলেন পর্টারের এই সমস্যার কথা হোয়াইট হাউস মাসের পর মাস ধরে জানত। এই কেলেঙ্কারির কারণে ট্রাম্পের চীফ অব স্টাফ জন কেলির চাকরি যাওয়ার উপক্রম হয়। কেলি পর্টারের চরিত্রের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটি ঘোষণা করে যে কমিটি এ বিষয়টির ওপর তদন্ত শুরু করবে। ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা স্থায়ী নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স না আদায় করতে পেরে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ‘রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য নিজের ব্যক্তিগত সার্ভারে রাখার কারণে যিনি হিলারিকে প্রায়ই জেলে পোড়ার হুমকি দিয়ে থাকেন সেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনেই যে কতখানি অসতর্ক ও অসাবধানী তার প্রমাণ। রব পর্টারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত একটি ইস্যু পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এলো। পারিবারিক অত্যাচার বা মারধরের অভিযোগের কারণে তার ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখার কাজ সম্পন্ন হওয়া বিলম্বিত হয়। পর্টার হোয়াইট হাউসে স্টাফ সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করতেন। পদটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই দিক দিয়ে যে প্রেসিডেন্টের ডেস্কে পৌঁছানো প্রতিটি লেখা তিনি যাচাই-বাছাই করে দেখতেন। এক বছর এই দায়িত্ব পালনের পরও তিনি অস্তায়ী নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্সের ভিত্তিতে কাজ করছিলেন। স্থায়ী নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এখনও কাজ করে চলেছেন এমনি আরও কয়েক ডজন হোয়াইট হাউস স্টাফের মধ্যে ট্রাম্পের নিজের জামাতা ও সিনিয়র উপদেষ্টা জারেড কুশনারও আছেন। প্রেসিডেন্টকে প্রতিদিন যেসব টপ সিক্রেট তথ্য জানানো হয় তা দেখার বা জানার সুযোগ কুশনারের আছে বলে জানা গেছে। পর্টারের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের জবাবে হোয়াইট হাউস যেভাবে সাড়া দিয়েছে তাতে বিষয়টি আরও খারাপ আকার ধারণ করেছে। তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স সমস্যার পরিধি কি রকম কিংবা হোয়াইট হাউসের দায়িত্বপূর্ণ অফিসাররা কতদিন ধরে তা জানতেন তার ব্যাখ্যা দিতে একের পর এক কর্মকর্তা ব্যর্থ হন। প্রিন্সিপাল ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি রাজশাহ গত ৮ ফেব্রুয়ারি বলেন, নতুন প্রশাসনের সঙ্গে প্রচুর কর্মকর্তা আসেন এবং এসব কর্মকর্তার অনেকেই অন্তর্বর্তীকালীন ক্লিয়ারেন্স থাকে। কিন্তু এ ধরনের কথাবার্তা বড়ই বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন রিপাবলিকান দলীয় প্রাক্তন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা। তারা বলেন, স্থায়ী ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এক বছর ধরে হোয়াইট হাউসে কাজ করা স্বাভাবিকতার বাইরে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়কার হোয়াইট হাউসের ডেপুটি কাউন্সেল টিমোথি ফ্লানিগানও একই রকম বক্তব্য দেন। এদিকে এফবিআই ডিরেক্টর ক্রিস রে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে এফবিআই পর্টারের অবস্থা নিয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে গত মার্চ, জুলাই ও নবেম্বরে এবং তারপর আবার জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যোগাযোগ করছিল। এফবিআইয়ের এবং হোয়াইট হাউসের পার্সোনাল সিকিউরিটি অফিসের চূড়ান্ত ছাড়পত্র ছাড়া সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর্মরত অন্যরা যদি থেকে থাকে তাহলে গোপন তথ্যাবলী ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। যেমন পর্টারের এক প্রাক্তন স্ত্রী এফবিআইকে বলেছেন, পারিবারিক দুর্ব্যবহারের ইতিহাস থাকার কারণে তিনি ব্লাকমেইলের শিকার হতে পারেন। আগের প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কৌশল হচ্ছে প্রচলিত নিয়মকানুনকে ছুড়ে ফেলে দেয়া। পর্টার কেলেঙ্কারি হচ্ছে তারই প্রমাণ। সূত্র: টাইম
×