ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

সিরিয়া যুদ্ধের নতুন পর্যায় শুরু

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সিরিয়া যুদ্ধের নতুন পর্যায় শুরু

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক আকস্মিক সফরে সিরিয়ায় গিয়ে ঘোষণা করেন যে সেখানে রাশিয়ার মিশন মূলত অর্জিত হয়ে গেছে। তার সেনাবাহিনী বাশার আল আসাদ সরকারকে রক্ষা করেছে। তাছাড়া আমেরিকা যে সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছিল রাশিয়া তা নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের প্রেক্ষাপটে তার এই বক্তব্যটা ছিল পরিষ্কার। রাশিয়া ফিরে এসেছে। পুতিনের ওই সফরের দশ সপ্তাহ পর আরেক ঘটনা ঘটে। ইসরাইল অভিযোগ করে যে ইরান সিরিয়ার গভীর অভ্যন্তর থেকে একটা বড় গোয়েন্দা ড্রোন তার আকাশসীমায় পাঠিয়েছে। ইসরাইল ড্রোনটি গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করে এবং বলে যে তারা পালমিরার কাছে ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। ওই হামলা শেষে একটি ইসরাইলী এফ-১৬ জঙ্গী বিমান স্বদেশ ফিরে যাওয়ার সময় সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। ইসরাইল তখন পাল্টা আঘাত হেনে সিরিয়ার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও আর্টিলারি বহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করে দেয়। এতে যারা নিহত হয় তাদের মধ্যে রুশ সামরিক উপদেষ্টারাও থেকে থাকতে পারে। এসব ঘটনা থেকে দুটো বার্তা পাওয়া যায়। এক. সিরিয়ার যুদ্ধ এক নতুন এবং সম্ভবত আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করছে এবং দুই. সিরিয়ায় যুদ্ধ চলতে থাকবে বলে রাশিয়াকেও সেখানে থেকে যেতে হবে। সিরিয়ার বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থার ওপর ইসরাইলের এই বিমান হামলাটি ছিল ১৯৮২ সালের পর থেকে ওই দেশটিতে তেলআবিবের পরিচালিত সবচেয়ে বড় হামলা। পরস্পরের প্রতি ঘোরতর শত্রুতা সত্ত্বেও ইরান বা ইসরাইল কেউই সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। আসাদ সরকার ও ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমির কাছাকাছি একটা এলাকায় ঠেলে সরিয়ে দেয়ায় নতুন করে সংঘাত বেঁধে ওঠা প্রায় অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলী কমান্ডাররা বলছে যে তারা সিরিয়ায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ঘাঁটি থেকে ইরানের পরিচালিত হামলার জন্য তৈরি হয়ে আছে। এই অবস্থায় রাশিয়া পড়েছে উভয় সঙ্কটে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সংঘাতের বিস্তার ঘটলে রাশিয়া কার পক্ষ থেকে সেটা বেছে নিতে বাধ্য হতে পারে। রাশিয়া ও ইরান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে রক্ষায় ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ওদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও পুতিনের বেশ হৃদতাপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ইরানের প্রক্সি হিজবুল্লাহর ওপর ইসরাইলের আক্রমণের পেছনে রাশিয়ার ততদূর পর্যন্ত সায় আছে যতদূর তা বাশার সরকারের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টি না করছে। পুতিনের ভাবখানা এমন যেন তিনিই সিরিয়ার ভাগ্যের নিয়ন্তা ও শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা। কিন্তু নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত অন্যান্য কুশীলবের ওপর তার তেমন একটা নিয়ন্ত্রণ নেই। গত মাসে সোচিতে রাশিয়া আয়োজিত শান্তি আলোচনা ছিল ব্যর্থ। বিরোধী দলের কোন প্রতিনিধিই বলতে গেলে সেখানে যায়নি। অন্যদিকে সিরিয়ার সরকারী প্রতিনিধি দল এক নতুন সংবিধান রচনার জন্য জাতিসংঘ ও রাশিয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার অনিচ্ছুক সম্মতিতে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা সিরিয়ায় তুর্কী কনভয়ের ওপর গোলাবর্ষণ করলে সম্মেলনের অপর দুইসহ উদ্যোক্তা ইরান ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা বিস্ফোরণোন্মুুখ আকার ধারণ করে। তুরস্ক ও সিরিয়ার কুর্দীদের প্রতি রাশিয়ার সমর্থন আছে। এখন দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে। পুতিন তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে কুর্দীদের ওপর আঘাত হানা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এরদোগান তা উপেক্ষা করেছেন। এদিকে সিরিয়ায় রুশ সৈন্যদের প্রাণহানি ঘটায় রাশিয়ার জনগণের মধ্যে যুদ্ধের ব্যাপারে ক্লান্তিভাব এসেছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে এক-তৃতীয়াংশেরও কম রুশ ভোটার সামরিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা সমর্থন করে। সিরিয়া থেকে রাশিয়া বেরোবার পথ পেলে খুশিই হবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা সুদূর পরাহত বলে মনে হয়। সামান্য কিছু শক্তি নিয়োগ করে রাশিয়া সিরিয়ায় অনেক কিছুই অর্জন করেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বলে এ কথা বলার মতো সময় হয়ত আসেনি যে রাশিয়া সিরিয়ার চোরাবালিতে আটকে গেছে। তবে সিরিয়া থেকে নিজেকে বের করে নিতে পারা পুতিনের জন্য এখনও অনেক দূর বলে মনে হচ্ছে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×