ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আমরা সরকারি দলে নাকি বিরোধী দলে’

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

‘আমরা সরকারি দলে নাকি বিরোধী দলে’

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারে থাকা জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের অপসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সরকারে থেকে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের সরিয়ে দিন। এ কারণে জাতীয় পার্টি সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারছে না। সরকারে থাকা বিরোধী দলের মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টি বেঁচে যেত। হয় কয়েকজন মন্ত্রীকে সরিয়ে নিন, নইলে জাতীয় পার্টির সবাইকে মন্ত্রীসভায় নিয়ে নিন। আমরা সরকারি দলে নাকি বিরোধী দলে, তার সদুত্তর আমরা দিতে পারি না। এ কারণে জাতীয় পার্টি সম্মানের জায়গায় নেই। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে ৫ কোটি মানুষের কোন কাজ নেই। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাহলে দেশের মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি কীভাবে বাড়ছে তা বোধগম্য নয়। দৃশ্যমান উন্নয়ন জনগণকে বোঝাতে হবে। দেশে কাঙ্খিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিযোগের সহজ সুযোগ সৃষ্টি করতে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করে তিনি বলেন, দেশের স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বিনিয়োগ না করলে কর্মসংস্থান হবে না। তবে পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর দু’পাশে যথেচ্ছভাবে জায়গা দখল করে হোটেল-মোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে চললে পদ্মা সেতুই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। ডিজিটাল যুগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা বাদ দিয়ে দিন-রাত যথেচ্ছভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাই একটি বয়সসীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত যে, এত বছর পর্যন্ত কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য আমরা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি। বিষাক্ত খাবার খেয়ে আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। লেখাপড়া হচ্ছে না, শুধুই প্রশ্নপত্র ফাঁস। মশার জ্বালায় নগরবাসী অতিষ্ঠ। যানজটে নাকাল দেশবাসী। এসব তো নিরসন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ গড়তে হলে সোনার ছেলে তৈরি করতে হবে। নইলে হবে না। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, মাত্র সাড়ে ৮ বছরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বৈশ্বিক রোল মডেল। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরা এটা মেনে নিতে পারছে না বলেই নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এতিমের টাকা আত্মসাতের কারণে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ হওয়ায় খালেদা জিয়ার দন্ড হয়েছে। ১০৯ বার সময় নিয়ে নিয়ে চুরির মামলায় রাজনৈতিক মামলার কালার দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিশ্বে কোথাও রেকর্ড নেই এতো বার আদালত থেকে সময় নেয়া হয়েছে। এখন খালেদা জিয়া পরীক্ষা না দিয়েই নির্বাচনে পাস করার ষড়যন্ত্র করছে। দেশকে সাংবাধানিক শুন্যতা সৃষ্টি করতেই বিএনপি নির্বাচনে না এসে সারাদেশে গণহত্যায় মেতে উঠেছিল। কিছু সুশীল সমাজের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কর্মগুণে সৎ, নিষ্ঠাবান নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দেশে কিছু জ্ঞানী-গুণী আছে তার প্রশংসা না করে শুধুই দেশবিরোধী কথা বলে বেড়ান। এদেশকে নেতিবাচক অবস্থানে নিয়ে তারা নিয়ে যেতে চান, এটা দেশদ্রোহীতার সামিল। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তাই যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, কোন লাভ হবে না। পরীক্ষা দেবেন না কিন্তু উনাদের (বিএনপি) পাস করে দিতে হবে। এটা মামা বাড়ির আব্দার। এটা জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি-জামায়াত জোটের সমালোচনা করে বলেন, আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে পুড়িয়ে শত শত মায়ের বুক খালি করেছে এই বিএনপি-জামায়াত জোট। ক্ষমতায় থাকতেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল এই বিএনপি। দেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাধীনতা অপশক্তিদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে আদালতে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় খালেদা জিয়ার দন্ড হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদরা বলেন, খালেদা জিয়া যতদিন কারাগারে থাকবে প্রতিদিন নাকি আওয়ামী লীগের ১০ হাজার ভোট কমবে। যদি তাই হয়, তাহলে খালেদা জিয়ার জন্য জামিন আবেদন করবেন না, উনি জেলেই থাকুক। এই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হাতকড়া পরিয়ে কুষ্টিয়ার জেলে পাঠিয়েছে, ওই ফেরীতেই যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের গাড়িতে ছিল পতাকা। খালেদা জিয়া এই ঘৃণ্য কাজটিও করেছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ আজ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ যোগ্যতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা সমাপ্ত করছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে কোনদিনই বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা ও যুদ্ধপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশ সত্যিই ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে। চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, মন্ত্রী-এমপি বা যত বড়ই নেতা হোন না কেন কেহই আইনের উর্ধ্বে নই। দুর্নীতি যারা করবেন কেউই রেহাই পাবেন না তা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়অ আজ কারাগারে। কালো টাকা সাদা করে নিজেই তাঁর দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছেন। নির্বাচন বানচালের নামে শত শত মানুষকে তাঁরা পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ কারণে দলটি এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, দেশের জনগণ আবারও উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকাকে পুনর্বার বিজয়ী করবে।
×