ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঠিকাদার নাসিরকে ফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঠিকাদার নাসিরকে ফোনে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিকল্পিতভাবে রাজধানীর মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায় ঠিকাদার নাসির কাজীকে (৪৫) খুন করা হয়েছে। কারণ হত্যাকা-ের আগে খুনীরা ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ক্যাবল কেটে ফেলেন। এরপরই খুনের মিশন শুরু করে হত্যাকারী দুই যুবক। পুলিশের ধারণা, হত্যাকারীরা আগে থেকে নাসিরকে ফলো করছিল। তারা মসজিদের পাশে বাথরুমে আগে থেকে ওঁৎ পেতে ছিলেন। মসজিদের বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর পরই তাকে লক্ষ্য করে পর পর ৯ রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। এদিকে ঘটনার পর পুলিশে নিহত নাসিরের ফোনের কললিস্ট ও পারিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে হুমকি বিষয়টি জেনেছেন। তা নিয়ে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। নিহতের পরিবারের দাবি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ নাসির খুনের আগে তাকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছিল। বনানী থানার ওসি বি এম ফরমান আলী জনকণ্ঠকে জানান, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। নাসিরকে ফোনে দেয়া হুমকি, সিসিটিভি ক্যামেরার বিষয় মাথায় রেখে হত্যাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। অচিরেই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, রবিবার সকাল ৯টার দিকে মহাখালী দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের পাশে বাথরুমের যাতায়াতের পথে ফ্লোরে নাসিরের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়েছিল। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে তার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে নাসিরের লাশ শরীয়তপুরে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তার লাশ দাফন করা হয়। রাতে নাসির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মেয়ে নারগিস আক্তার নিপু বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, নাসির চুক্তিতে দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ করে আসছিলেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশের ছোট গলিপথ ধরে পাঁচ কদম ভেতরে গেলে হাতের বামপাশে ওই মসজিদের টয়লেট ও ডানপাশে ওজুখানা। টয়লেট ও ওজুখানার মাঝে ফ্লোরে নাসিরের লাশ পড়ে ছিল। পুলিশের ধারণা, টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরই নাসিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গলিপথের মুখে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। তবে সে সিসিটিভি ক্যামেরার ক্যাবল কাটা পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে আগে থেকেই ওই ক্যাবল কেটে ফেলা হয়। তারপর হত্যাকারী দুই যুবক টয়লেটের সামনে ওঁৎ পেতে ছিল। নাসির মসজিদের টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরই তাকে খুব কাছ থেকে পর পর কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। কারণ ঘটনার সময় কেউ ওই টয়লেটে ছিল না। নিরব ছিল। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে হত্যাকারীরা। স্থানীয়রা জানান, গুলিবিদ্ধ নাসিরের মাথা ছিল পশ্চিম দিকে আর পা ছিল পূর্ব দিকে। প্যান্টের বেল্ট খোলা ছিল। পড়ে থাকা লাশের এ দৃশ্য দেখে পুলিশের ধারণা, টয়লেট থেকে বের হওয়ার মুখে নাসিরকে গুলি করা হয়। যে কারণে তিনি বেল্ট লাগানোর সময় পাননি। নিহতের ভাই আল ইমরান সাংবাদিকদের জানান, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহত নাসিরের মেয়ে নার্গিস আক্তার নিপুর বরাত দিয়ে ইমরান জানান, কেউ তাকে (নাসির) হুমকি দিয়ে আসছিল। মৃত্যুর আগে নাসির তার মেয়েকে একথা জানিয়েছিল। মসজিদের মোতওয়াল্লী মোঃ শাহজাহান জানান, মসজিদের নির্মাণ কাজের তদারকি করতে দুয়েক দিন পর পর নাসির সেখানে যেতেন। তিনি জানান, ঠিকাদার নাসিরের অধীনে ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করতেন। ১৫-১৬ দিন আগে নতুন করে আবার মসজিদের কাজ শুরু হয়। তদারকির জন্য দুয়েক দিন পর পর নাসির আসতেন। রবিবার সকালেও এসেছিলেন। তবে কয়টায় তিনি মসজিদের বাথরুমের নির্মাণ কাজে এসেছিলেন তা বলতে পারেননি মোতওয়াল্লী শাহজাহান। মসজিদ কমিটির সভাপতি আমান উল্লাহ জানান, এলাকায় কারও সঙ্গে তার ঝামেলা ছিল না। তিনি জানান, আমাদের এ মসজিদের কাজ নাসিরই করে আসছে। ১৫-১৬ দিন আগে নতুন করে আবার কাজ শুরু হয়। কারও সঙ্গে কোনও ঝামেলা ছিল কিনা। সেটা নাসির আমাদের কখনও জানায়নি। মসজিদের নির্মাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মালপত্র আমরা কমিটির পক্ষ থেকে কিনে দিতাম। আর সে এগুলো শুধু লাগিয়ে দেয়ার কাজ করছিল। এ কাজ খুব বড় অঙ্কের টাকার না। নিহতের পরিবারের দাবি, নিহতের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে ২০০৪ সালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএম খালেক খুন হন। ওই হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন নাসির কাজী। ওই মামলায় নাসিরকে ১৪ মাস জেলও খাটতে হয়। জেল থেকে বের হয়ে নাসির পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। নিহতের ছোট ভাই মামুন কাজী জানান, চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় জেল খাটার পর আমার ভাই ঢাকায় ভালই দিন কাটাচ্ছিলেন। সম্প্রতি চেয়ারম্যানের স্বজনরা আমার ভাইকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু জিডি করার আগেই ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেললো। তারা চেয়ারম্যানের স্বজনদের দায়ী করছেন।
×