ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার চিকিৎসায় করণীয়

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার চিকিৎসায় করণীয়

আমাদের মধ্যে অনেকেই দীঘদিন যাবত শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা বেদনার ভুগে থাকেন। বিশেষ করে ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, সোল্ডার জয়েন্ট এ ব্যথা তার মধ্যে উল্লেযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী এই ব্যথা বেদনার বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ ডিজেনারেটিভ জিজিজ বা বয়সজনিত হাড় ক্ষয়ের কারণে ব্যথা। যেমন- সারভাইক্যাল স্পনন্ডাইলোসিস, লাম্বার স্পনডাইলোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, ইত্যাদি। তাছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস বা স্পনডাইলো আর্থ্রাপ্যাথি ইত্যাদি। স্পনডাইলোসিস এটি মেরুদ-ের কশেরুকাগুলোর ক্ষয়জনিত রোগ, এখানে কশেরুকাগুলোর ক্ষয় হয় পাশাপাশি কিছু ছোট ছোট নতুন হাড়ের বৃদ্ধিও হয় যেটাকে মেজিক্যাল পরিভাযায় অস্টিওফাইট বলা হয়। স্পনডাইলোসিস এ দুই কশেরুকার মধ্যেবর্তী স্পেস বা গ্যাপ কমে যায়, ফলে নার্ভ রুটের উপর চাপ পড়ে এবং রোগী নার্ভের ডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী ব্যথা অনুভব করে, যখন এটি মেরুদ-ের ঘাড়ের অংশে হয়, তাকে মেডিক্যাল ভাষায় সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস এবং যখন মেরুদ-ের কোমরের অংশে হয় তখন এটাকে লাম্বার স্পনাডাইলোসিস বলা হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস এটিও একটি ডিজেনারেটিভ ডিজিজ বা বয়সজনিত জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ গঠনের ক্ষয় রোগ। এই রোগে জয়েন্টের ভেতরে অবস্থানরত কার্টিলেজগুলো ও জয়েন্ট সারফেছ-এর ক্ষয় হতে থাকে, জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ সাইনোভিয়াল ফ্লুইডগুলোও কমে যায়, যার ফলে জয়েন্টের ভেতরের স্পেস কমে যায়। তখন আক্রান্ত রোগীর জয়েন্ট নাড়াতে কষ্ট হয়। যদি তার হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়, তাহলে রোগী নিচে বসতে পারে না, নামাজের মতো বসতে পারে না, টয়লেটে বসতে কষ্ট হয়, সিড়ি দিয়ে উঠানামা করতে পারে না ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এটি একটি অটো-ইম্যুন ডিজিজ যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এই রোগে আমাদের হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলো আক্রান্ত হয়ে থাকে। জয়েন্টগুলো ব্যথা করে, ফুলে যায়, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় রোগীর ব্যথা অনেক বেড়ে যায় খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে কিছুটা কমে আসে। এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস এটি ও একটি মেরুদ-ের বাত রোগ যা প্রথমে মেরুদ-ের নিচের অংশে আক্রমণ করে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মেরুদ-ের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগটির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এটি মেরুদ-ের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট করে মেরুদ-কে শক্ত করে ফেলে যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিটি মেরুদ-ের ঘাড় ও কোমরের অংশ ঘুরাতে পারে না, সামনের দিকে ঝুকতে পারে না ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। রোগ নির্ণয় উপরোক্ত রোগসমূহে ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর উপসর্গ, চিকিৎসকের ক্লিনিকাল এক্সামিনেশনের পাশাপাশি কিছু কিছু প্যাথালজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করানোর প্রয়োজন পড়ে, যেমন- স্পনডাইলোসিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিস এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানের এক্স-রে করতে হয় এরং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস এর ক্ষেত্রে এক্স-রের পাশাপাশি কিছু স্পেশাল টেস্ট করতে হয়। যেমন, আর এ টেস্ট, সিআরপি, এন্টি সিসিপি, এইচএলএবি ২৭ (ঐখঅই ২৭) ইত্যাদি। চিকিৎসা উপরোক্ত ডিজিজ বা রোগগুলো দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন- স্পডাইলোসিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয় রোগ অতএব এটাকে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয় তবে চিকিৎসার মাধ্যেমে রোগীর কষ্ট কমানো সম্ভব পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে ও চিকিৎসকের নির্দেশিত কিছু ব্যায়াম করলে রোগী ভাল থাকবেন। তেমনিভাবে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও এ্যানকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস রোগে দুটিও একেবারে নিরাময় যোগ্য রোগ নয় এ ক্ষোত্রে ও রোগীকে কিছু ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও নির্দিষ্ট কিছু থেরাপউটিক এক্সারসাইজ করতে হবে। এই রোগগুলো যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে তাই এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না কারণ দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তাই এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই উপকারী ও পার্শ্বপ্রতিক্রিযাবিহীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে একজন বিশেষক্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিতে হবে। লেখক : ডাঃ এম ইয়াছিন আলী বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ মোবাইল- ০১৭৮৭-১০৬৭০২
×