ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ ॥ ফসলি জমিতে জৈব সারের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ ॥ ফসলি জমিতে জৈব সারের বিকল্প নেই

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ নানা ধাতব পদার্থের কারণে দূষিত হয়ে পড়ছে দেশের উর্বর মাটি। আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, সীসা, নিকেল হচ্ছে ভারি ধাতব পদার্থ। ‘দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি’ তবে এখন আর খাঁটি নেই। কারণ, গবেষণা করে দেখা গেছে, দেশের ৬০ ভাগের বেশি মাটি অনুর্বর। আমরা নিজেরাই দেশের মাটির উর্বরতা কমিয়ে ফেলছি বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার। সোমবার সকালে গুলশান লেক শোর হোটেলে আয়োজিত ‘কেমন আছে মাটি? চলো মাটির কথা বলি’ শীর্ষক এক ওয়ার্কশপে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মাটির স্বাস্থ্য ভাল না হলে ফসলও ভাল ফলবে না। কিন্তু আমাদের কৃষক জানেন না কিভাবে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং কোন্ মাটিতে কোন্ ফসল ফলাবেন? মূলত না জেনে জমিতে ইউরিয়ার মতো উচ্চ ফলনশীল রাসায়নিক সার প্রয়োগ করার ফলেই জমির উর্বরতা কমছে। ফসলি জমিতে জৈবসার ব্যবহারের বিকল্প নেই-এই বার্তাটির প্রচার বাড়াতে হবে। আর মাটি দূষিত বা বিষাক্ত হয়ে গেলে জীববৈচিত্র্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এতে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইতোমধ্যেই কৃষকদের মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে জৈবসার তৈরি অর্থাৎ বায়ো-গ্যাস, ভার্টিকম্পোস্ট ইত্যাদি উৎপাদনের প্রক্রিয়া শেখানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিজি কেবিডি মোহাম্মদ মহসিন। মাটির বিভিন্ন দিক নিয়ে করা ৩টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন মোঃ নাজমুল হাসান। এছাড়া প্যানেল আলোচক ছিলেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রাক্তন পরিকল্পনা পরিচালক ড. আবু আলী রাগিব হাসান, বারির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী কর্মকর্তা ড. নাজিম উদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রিন্সিপাল প্রফেসর আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোঃ মকবুল হোসেন। ক্রমবর্ধমান নগরায়ন, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং অপরিকল্পিত চাষাবাদের ফলেও অনেক অঞ্চলের মাটি নষ্ট হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিজি কেবিডি মোহাম্মদ মহসিন। অনুষ্ঠানে দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বর্তমানে মাটিতে জৈব উপাদানের অবস্থা এবং সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়েও আলোচনা হয়। প্যানেল আলোচকবৃন্দ বলেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের মাটির উপরিভাগের উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ তে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিবিষয়ক কার্যক্রমের নীতিমালা গ্রহণ করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি জৈব ও রাসায়নিক সারের যথাযথ ব্যবহার, জৈব সারের উৎপাদন এবং ভ্যালু চেইন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়েও আলোকপাত করেন। জৈব সার ব্যবহার না করার ফলে মাটি কিভাবে অনুর্বর হয়ে পড়ে তা ব্যাখ্যা করে বারির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী কর্মকর্তা ড. নাজিম উদ্দিন বলেন, জৈব পদার্থকে মাটির প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে মাটির জৈব পদার্থ যত বেশি সে মাটি তত সমৃদ্ধ। একটি আদর্শ মাটিতে ৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে একভাগেরও কম জৈব পদার্থ আছে; যা কাক্সিক্ষত নয়। অনুষ্ঠানে মাটির উর্বরতা বাড়াতে সম্ভাব্য সমাধানের বিষয়ে আলোকপাত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, পানি ও পরিবেশ ভিাগের চেয়ারপার্সন প্রফেসর সিরাজুল হক বলেন, ভূমি উর্বরতা হ্রাস বন্ধ করা না গেলেও একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকাতে বাঁধ দেয়ার ব্যবস্থা, অনুমান ভিত্তিক রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা, জমিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করা ইত্যাদি উপায়ে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা সম্ভব। অনুষ্ঠানে সভাপতি করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে ড. মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ২০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল।
×