ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হজে যাওয়ার খরচ আরও বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হজে যাওয়ার খরচ আরও বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ গতবারের চেয়ে আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি-২০১৮’ এবং ‘হজ প্যাকেজ-২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে এছাড়াও প্রত্যেক জেলায় শিশু আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এবারের হজ প্যাকেজের বিস্তরিত জানান। সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর আওতায় হজে যেতে এবার ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা, যা গতবছর ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা। প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা খরচ হবে, যা গতবছর ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা নির্ধারিত ছিল। সে হিসেবে সরকারীভাবে গতবারের থেকে এবার এক নম্বর প্যাকেজে ১৬ হাজার ৪২১ টাকা এবং দুই নম্বর প্যাকেজে ১২ হাজার চার টাকা বেড়েছে। বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এবার সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৭ টাকা খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, যা গতবছর ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৭ টাকা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সুবিধার ধরণ অনুযায়ী বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে টাকার অঙ্কে হেরফের হবে। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিতে এবার কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, প্রাক-নিবন্ধন করতে এনআইডি থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রবাসীরা পাসপোর্টের মাধ্যমে প্রাাক-নিবন্ধন করতে পারবেন। প্রাক-নিবন্ধন করেও যারা চূড়ান্ত নিবন্ধন করবেন না তাদের নিবন্ধনের মেয়াদ আরও একবছর থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পর পর দুই বছর চূড়ান্ত নিবন্ধন না করলে ধরে নেয়া হবে তিনি হজে যেতে আগ্রহী না। শফিউল বলেন, এবার থেকে নিবন্ধনকারীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। কারণ পাসপোর্ট করার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। সরকারী-বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রতি ৪৫ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে গাইড থাকবে। হজের দুই মাস আগে এসব গাইডদের তথ্য হজ অফিসে দিতে হবে। নিবন্ধন পরিবর্তনযোগ্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, মৃত্য বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রাক-নিবন্ধনকারীদের মধ্যে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে। তবে একটি এজেন্সির মোট হজযাত্রীর চার শতাংশের বেশি প্রতিস্থাপন করা যাবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এবার থেকে সরকার হজযাত্রীদের ট্রলি সরবারহ করবে না, ট্রলি হজযাত্রীদের কিনতে হবে। বিমান ভাড়া বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে, সব মিলিয়ে খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। গতবার মোট বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা। প্রত্যেক হজ এজেন্সিকে কমপক্ষে ১৫০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী নিতে পারবে। কোনক্রমেই এক ফ্লাইটে তিনটি এজেন্সির বেশি যাত্রী পাঠানো যাবে না। মক্কা থেকে দুই কিলোমিটারের বেশি দূরে বাসস্থান ভাড়া করলে হজ এজেন্সিগুলোকে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে যারা হজ করেছেন বা হজে যাওয়ার ভিসা পেয়েও হজ করেননি তারা যদি এবার হজে যেতে চান তাহলে অতিরিক্ত দুই হাজার ১০০ রিয়েল পরিশোধ করতে হবে। যারা হজ করেছেন তাদের হজে যেতে নিরুৎসাহিত করতেই এই অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় সাত হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ১৬০৭৩ এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ৩৫২২৯২ ক্রমিক নম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে পারবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২১ অগাস্ট হজ হতে পারে। শিশু আদালত ॥ সব জেলা শহরে শিশু আদালত গঠন করতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনীর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিশু (সংশোধন) আইন-২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ২০১৩ সালে শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়। এখানে একটু সমস্যা হচ্ছিল, শিশু আদালত গঠন নিয়ে ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে। এই ক্রাইসিসকে দূর করার জন্য এই সংশোধনীটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে আদালতের এখতিয়ারকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যাতে কোন অবস্থাতেই মামলা থেমে না থাকে বা কেউ যেন বিলম্বিত বিচার ব্যবস্থার শিকার না হয়। শফিউল বলেন, প্রত্যেক জেলা শহরে শিশু আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকবে। বর্তমানে এই আদালত আলাদাভাবে নেই, এই আইন সংশোধন হওয়ার পর থাকবে। আইনের সংশোধনী কার্যকর হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীন গঠিত সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে কোন জেলায় এমন আদালত না থাকলে ওই জেলার জেলা ও দায়রা জজ শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে। কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড আইন ॥ মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শফিউল বলেন, এটি ২০০৪ সালের আইন, সংশোধনীগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বিশেষে সবাই কর্মচারী নামে অবহিত হবেন, এটা একটা সংশোধনী। এখানে ক্ষমতা অর্পণের একটি বিষয় এসেছে। চাঁদার শিডিউলে চাঁদা দেয়া হয়, সেটা যাতে উনারা বোর্ডের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে সময়ে সময়ে হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারেন, তার ক্ষমতা চাওয়া হয়েছে, এটাই মূলত মূল প্রস্তাব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কল্যাণ তহবিলের মাসিক চাঁদা দেয়া হতো মূল বেতনের এক শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এখন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যৌথ বীমার সর্বোচ্চ মাসিক প্রিমিয়াম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে মাসিক কল্যাণ ভাতা এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা, সাধারণ চিকিৎসা অনুদান সর্বোচ্চ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা, দাফনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা এবং যৌথবীমার এককালীন অনুদান এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান শফিউল আলম। বস্ত্র আইন ॥ বস্ত্র আইন- ২০১৮ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া আইনে বস্ত্র শিল্পের নিবন্ধনের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, বস্ত্র অধিদফতরের মহাপরিচালক নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার প্রয়োজনে বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও শর্তে বস্ত্র শিল্পকে প্রণোদনা দিতে পারবে আইনে সেই বিধান রাখা হয়েছে। গত বছর বস্ত্র খাতের রফতানি আয় মোট রফতানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ ছিল বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ॥ শফিউল জানান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৭৪ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন প্রণয়নের পর কয়েকটি অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। সামরিক শাসনামলে কিছু সংশোধনী হওয়ায় আদালতের নির্দেশনায় আইনটিকে নতুন করে বাংলায় করা হচ্ছে। সামরিক শাসনামলে প্রণীত আইনের মধ্যে যেগুলোর প্রয়োজন আছে তা নতুন করে এবং বাংলায় রূপান্তরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
×