ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে খোঁজা হচ্ছে মেজর জিয়াকে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এবার মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে খোঁজা হচ্ছে মেজর জিয়াকে

শংকর কুমার দে ॥ এবার মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে খোঁজা হচ্ছে প্রগতিশীল লেখক ও ব্লগার হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড পুলিশের ২০ লাখ টাকার পুরষ্কার ঘোষিত সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান পলাতক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াকে। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্লগার ড. অভিজিত রায়কে কুপিয়ে খুন করার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এই জঙ্গী নেতা হত্যাকা-ের তদারকি করেছে বলে তদন্তে চলে আসায় এখন গ্রেফতারের তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছে তার নামটি। দেশের ভেতরে বিগত কয়েক বছরে যত প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার খুনের ঘটনা ঘটেছে তার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় দুটি জঙ্গী সংগঠনের একটি আনসার আল ইসলাম, যার শীর্ষ নেতা বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে ধরতে পারা পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নেতৃত্বেই এখন আনসার আল ইসলাম সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। নব্য জেএমবিসহ অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়ার পর অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আনসার আল ইসলাম এবং মেজর জিয়াই বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য জিয়াকে ধরা তাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃৃত মাস্টারমাইন্ড জঙ্গী মেজর জিয়া এখন কোথায় এ প্রশ্নের জবাব পেতে মরিয়া গোয়েন্দা সংস্থা ও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বছরের ২ আগস্ট তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করার সময় তার অবস্থান দেশেই ছিল বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। ওই সময় তার গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকার কথা প্রচার পেলেও পরবর্তীতে তার অবস্থান সম্পর্কে কারও কাছে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন আবার সে ঢাকায় অবস্থান করছে বলে এমন তথ্যের ভিত্তিতে তার অবস্থান শনাক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে গোয়েন্দারা। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী এই সংগঠনটির বেশির ভাগ সদস্যই উচ্চশিক্ষিত এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষভাবে দক্ষ। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০১৭ সাল থেকে ১৬ সালের মধ্যবর্তী পর্যন্ত সময়ে মেজর জিয়া স্লিপার সেল তৈরি করে অন্তত এক ডজন ব্লগারকে হত্যা করে। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধানেরও দায়িত্ব নেয় মেজর জিয়া। এই মাস্টারমাইন্ড নিজে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং আর্মি ট্রেনিং থাকায় কিলিং অপারেশন যারা চালাবে-তাদের দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। তার সন্ধানে পুলিশ র‌্যাব গোয়েন্দা ইউনিট একযোগে দেশব্যাপী সাড়াশি ও কম্বিং অপরারেশন পরিচালনা করেও ধূর্ত এই সাবেক সেনা কর্মকর্তার টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। সর্বশেষ গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশে তার অবস্থান ছিল। আরেক মাস্টারমাইন্ড ও গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পরই সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সে দেশ ছাড়ে বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। চোরাইপথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যায় এমন তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের ইন্টিলিজেন্স উইংকে তাদের সোর্স জানানোও হয় এমন তথ্যের বার্তা। কলকাতায় সে এক বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করে। তার সেই বন্ধুকে কলকাতা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করে। বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে সে কলকাতায় ঘাপটি মারে। কিন্তু মাস খানেক সেখানে অবস্থানের পর সে পুনরায় বাংলাদেশে ঢুকে থাকতে পারে। অতি সম্প্রতি সে সাভারস্থ এক বন্ধুর বাসায় ২ দিন অবস্থান করে। সেখানে অবস্থানের সংবাদ পেয়ে বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা সাভারস্থ ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। কিন্তু ধূর্ত মেজর জিয়াকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
×